খালপাড়ে মিলল ফুটফুটে নবজাতক

কুমিল্লা প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ২২:০৫

রাত তখন প্রায় সাড়ে ১১টা। হঠাৎ নবজাতকের চিৎকার। কিছুক্ষণ থেমে থেমে খালপাড় থেকে ভেসে আসতে থাকে নবজাতকের কান্নার শব্দ।

খালের কাছাকাছি ওসমানদের বাড়িতে তখন চলছিল শীতকালীন পিঠা তৈরির কাজ। নবজাতকের কান্নার শব্দ পেয়েই থমকে যান পিঠা তৈরির কাজে থাকে ওসমানের মা ও স্ত্রীসহ অন্য নারীরা। কান্নার শব্দ থেমে গেলে আবারও শুরু করেন কাজ। ওই বাড়িতে রাত ১টা পর্যন্ত এমনভাবে পিঠা তৈরির কাজ করেন তারা। খালপাড় থেকে ভেসে আসা শিশু কান্নার শব্দকে অন্যকিছু ভেবে কিছুটা ভীতি তৈরি হয় তাদের মনে।

পিঠা তৈরির কাজ শেষে করে তারা ঘুমের ঘরে গিয়েও একইভাবে শুনতে পান কান্নার আওয়াজ। রাত ২টার পর শিশুটির কান্না থামে। ঘুমিয়ে পড়েন যে যার মত। কিন্তু কৌতহল কাটেনি ওসমানের মা মনোয়ারা বেগমের (৬০)।

কোন রকম রাত কাটিয়ে ফজরের নামাজের পরপর মনোয়ারা বেগম খালপাড়ে ছুটে যান। কিছুটা হাঁটার পরই দেখেন শুকনো খালের এক পাশে কাঁদামাখা অবস্থায় পড়ে আছে ফুটফুটে এক ছেলে নবজাতক। প্রথম মৃত ভেবে কাছে গিয়ে দেখেন বুক নড়ছে। পরে খাল থেকে ওই নবজাতকে নিয়ে যান বাড়িতে। খবর পেয়ে ওই ওয়ার্ডের ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য নবজাতককে হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা শেষে নিয়ে যান নিজ ঘরে।

ঘটনাটি ঘটেছে বুধবার সকালে কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার বাড়েরা গ্রামে। বাড়েরা দক্ষিণ বাজারের ব্রিজ সংলগ্ন খাল থেকে ওই নবজাতককে উদ্ধার করা হয়।

ওসমানের মা মনোনয়ারা বেগম জানান, মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১১টা থেকে আমরা হঠাৎ খালপাড় থেকে শিশুর কান্নার আওয়াজ শুনতে পাই। সারারাত প্রচন্ড ভয়ও পেয়েছি। পরদিন ভোরে আমি শিশুটিকে উদ্ধার করি।

বাড়েরা ইউনিয়ন পরিষদের ৭নং ওয়ার্ড মেম্বার শাহিন আলম জানান, সকালে ঘটনাটি শোনার পর ওসমানদের বাড়িতে যাই। গিয়ে বাচ্চাটির আশঙ্কাজনক অবস্থা দেখে দ্রুত চান্দিনার একটি প্রাইভেট হাসপাতালে নিয়ে আসি। সেখানে শিশু ডাক্তারের পরামর্শে চিকিৎসা সেবা দেই। পরে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানকে বিষয়টি অবগত করে আমার বাড়িতে নিয়ে যাই। বর্তমানে আমার স্ত্রী ফাতেমা বেগম ওই নবজাতককে মাতৃস্নেহ দিয়ে আগলে রেখেছেন।

বাড়েরা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. খোরশেদ আলম জানান, কোন এক পাষণ্ড নারী ওই নবজাতক ভূমিষ্ট হওয়ার পর রাতের অন্ধকারে খালে ফেলে দেয়। প্রচণ্ড শীতে সারারাত শিশুটি খালে পড়ে থাকায় এক পর্যায়ে তার কান্না থেমে যায়। শিশুটিকে উদ্ধার করে মেম্বারের বাড়িতে রাখা হয়েছে। এলাকায় কোন পরিবারে এমন ঘটনা ঘটেছে- তা আমরা খুঁজে দেখার চেষ্টা করছি।

চান্দিনা থানার ওসি আবুল ফয়সল জানান, বিষয়টি আমরা জেনেছি। ধারণা করা হচ্ছে- কোন নারী তার অপকর্ম ধামাচাপা দিতেই এমন ঘটনা ঘটিয়েছে। আমরা তদন্ত সাপেক্ষ ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

চান্দিনা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা স্নেহাশীষ দাশ জানান, ‘সারাদিনও বিষয়টি আমাকে কেউ জানায়নি। যেহেতু এখন জেনেছি খোঁজ নিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’

(ঢাকাটাইমস/৬ফেব্রুয়ারি/এলএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :