পাঠকরূপে ধরা দিল বইপ্রেমীরা

তানিয়া আক্তার, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ২৩:২২ | প্রকাশিত : ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ২২:২১

একুশে গ্রন্থমেলার ষষ্ঠ দিনে আজ শুক্রবার বইপ্রেমীদের ঢল নেমেছিল বাংলা একাডেমি চত্বর ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত বইমেলায়। এবারের প্রথম ছুটির দিনে সকাল থেকে ক্রেতা-দর্শনার্থীদের ভিড় ছিল। প্রায় সব স্টলেই ভালো বিক্রি হয়েছে। উচ্ছ্বসিত প্রকাশক ও লেখকরা। তারা বলছেন, কয়েক দিনের পাতা উল্টানো মেলায় আজ পাঠকরূপে ধরা দিল বইপ্রেমীরা।

আজ নানা আয়োজনে উৎসবমুখর হয়ে উঠেছিল বইমেলা। দিনের দ্বার উন্মোচন হয় শিশুপ্রহর দিয়ে। তারপর একে একে ভিন্ন ভিন্ন আয়োজন।

দিন গড়াতেই জনতার ভিড় আরও বাড়তে থাকে। সন্ধ্যায় পুরো উৎসবে রূপ নেয় বইমেলা। শুধু দর্শনার্থী নয় ক্রেতাও হয়েছেন তারা। হাতে হাতে ছিল বই। শুধু শীর্ষস্থানীয় প্রকাশনীর পাশাপাশি বিক্রি ভালো হয়েছে প্রায় সব প্রতিষ্ঠানের।

ঝিঙেফুল প্রকাশনীর প্রকাশক গিয়াস উদ্দিন খান ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আজকের দিনটির অপেক্ষায় ছিলাম আমরা। সেই প্রতীক্ষা পূর্ণ হলো শিশুপ্রহরের মধ্য দিয়ে। শুধু পাতা উল্টে নয় প্রায় সব বইপ্রেমী বই কিনেছেন। আশা করা যায় আগামী দিনগুলোতেও ভালো চলবে।’

সোনামণির তুলির আঁচড়ে রঙিন হলো বইমেলা

রংতুলির আঁচড়ে বইমেলাকে রাঙিয়ে দিল সোনামণিরা। শুক্রবার সকাল সাড়ে আটটায় শিশু-কিশোর চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা ছিল অমর একুশে উদযাপনের অংশ হিসেবে। আয়োজন করে বাংলা একাডেমি। প্রতিযোগিতার উদ্বোধন করেন বরেণ্য চিত্রশিল্পী রফিকুন নবী।

শিশু-কিশোর চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা সস্ত্রীক পরিদর্শন করেন বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্ল রবার্ট মিলার। প্রতিযোগিতায় বিভিন্ন শাখায় মোট ৫৭৫ জন প্রতিযোগী অংশ নেয়। আগামী ২২ ফেব্রুয়ারি প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করা হবে।

দ্বার খুলল শিশুপ্রহরের আনন্দ ঝাঁপি

রং-বেরংয়ের পোশাক আর ছবিওয়ালা গল্পের বইয়ের জন্য শিশু প্রহরের দ্বার খুলতেই রঙিন হয়ে উঠলো শিশু চত্বর। বেলা ১১টায় বইমেলার দ্বার খুলতেই বইমেলায় ভিড় করতে থাকে শিশুরা। বাবা-মায়ের হাত ধরে বর্ণপরিচয় নেবে তারা।

অমর একুশে বইমেলায় শুক্রবার ছুটির দিনে সকালেই দর্শনার্থীদের পদচারণে মুখর হয়ে ওঠে। 'শিশু প্রহর'-এ অনেক অভিভাবক তাদের সন্তানদের নিয়ে এসেছিলেন বইয়ের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে।

বইয়ের রাজ্যে ঘুরে বেড়াতে বেড়াতে বই দেখেছে, কিনেছে সোনামণিরা। কিছুক্ষণ প্রিয় সিসিমপুরের মনোরঞ্জন উপভোগ করে নিল এর ফাঁকে।

বইমেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে শিশু চত্বরে বাবার কাঁধে চড়ে এ-দোকান থেকে ও-দোকানে ঘুরছিল এক শিশু। ছবিওয়ালা এক বইও কিনেছে ওই শিশু শ্রেণীতে পড়ুয়া জায়ান।

জায়ান ঢাকা টাইমসকে বলল, 'বেশ ভালো লাগছে। আমি বইও কিনেছি। আরও অনেক বই কিনব।'

লাজুক সিনথিয়া এসেছে মায়ের সঙ্গে। মায়ের আঁচলে বারবার লুকিয়ে পড়ছে। কিন্তু হাতে আছে দুটি রঙিন বই। বর্ণমালার আরেকটিতে শুধুই ছবি।

লাজুক ভঙ্গিতে বলল, 'আমার রংযের বই পছন্দ। মা শুধু একটি কিনে দিয়েছে। আর বর্ণমালার বইটা আমি বাসায় গিয়েই পড়ব।'

সিনথিয়ার মা বনানী থেকে এসেছেন। তিনি বললেন, ‘কয়েক বছর ধরেই শিশুপ্রহরের সঙ্গে সময় কাটাই মেয়েকে নিয়ে। এবার এসেও বেশ ভালো লাগছে। পরিবেশটা আগের চেয়েও বেশ চমৎকার।'

শিশুদের জন্য আলাদা করে এই আয়োজনটি বেশ ভালো লাগছে রাতুলের বাবার। তিনি বললেন, 'এ আয়োজনটি শিশুদের ছোটবেলা থেকেই বই পড়তে শেখাবে। পাঁচ বছর ধরে মেলায় আসলেও এবারের মেলাটির ডিজাইন ভালো লাগছে।'

শনিবার মেলার দ্বিতীয় শিশুপ্রহর। সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত এ প্রহরে থাকবে শিশুদের কোলাহল ও দুরন্তপনা।

প্রিয় লেখকদের সরব উপস্থিতি

বইমেলায় অসংখ্য ক্রেতা ও পাঠক যেমন এসেছিলেন, তেমনি মেলায় দেখা গেছে কবি, লেখক ও সাহিত্যিকদের ভিড়। মেলায় এসেছিলেন কথাসাহিত্যিক মুহম্মদ জাফর ইকবাল, ইমদাদুল হক মিলন, আনিসুল হক, মোস্তফা কামালসহ অনেক লেখক ও সাহিত্যিক।

মূল মঞ্চ

বিকেল চারটায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় সৈয়দ শামসুল হকের ‘বঙ্গবন্ধুর বীরগাথা এবং এর অনুবাদ Ballad of our Hero : Bangabandhu শীর্ষক আলোচনা।

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এমরান কবির চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলন। আলোচনায় অংশ নেন খায়রুল আলম সবুজ এবং আনিসুল হক। অনুবাদকের বক্তব্য দেন সৈয়দ শামসুল হকের মূল গ্রন্থ বঙ্গবন্ধুর বীরগাথা-এর Ballad of our Hero : Bangabandhu অনুবাদ-গ্রন্থের প্রণেতা ড. ফকরুল আলম।

অনুষ্ঠানে কবিকণ্ঠে কবিতা পাঠ করেন কবি হাসান হাফিজ, গোলাম কিবরিয়া পিনু, নুরুন্নাহার শিরীন, রেজাউদ্দিন স্টালিন। আবৃত্তি করেন মাসকুর-এ-সাত্তার কল্লোল, আলোক বসু এবং কাজী বুশরা আহমেদ তিথি।

নৃত্য পরিবেশন করেন নৃত্যসংগঠন ‘বুলবুল একাডেমী অব ফাইন আর্টস’ (বাফা)-এর নৃত্যশিল্পীরা। সংগীত পরিবেশন করেন আজগর আলীম, নারায়ণ চন্দ্র শীল, শান্তা সরকার, আল মনসুর।

(ঢাকাটাইমস/০৭ ফেব্রুয়ারি/মোআ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :