প্রাকৃতিক ব্যথানাশক ভেষজ উপাদান

প্রকাশ | ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ১২:৪৫

স্বাস্থ্য ডেস্ক, ঢাকাটাইমস

আমাদের প্রতিদিনকার জীবনপ্রণালী এবং অনিয়ন্ত্রিত মাত্রায় চলাফেরা ও খাদ্যে বিভিন্নরকম উপাদানের অভাব ইত্যাদির কারণে আমরা হরহামেশাই ব্যথায় ভুগছি। শরীরের ব্যথা বা বাতের ব্যথা যেটাই বলুন না কেন ব্যথা আমাদের নিত্যসঙ্গী। এই ব্যথা উপশম করার জন্য ওষুধ একটা কার্যকরী উপায়। আমাদের একটা বাজে অভ্যাস গড়ে উঠেছে শরীরে কোন ব্যথা হলেই পেইন কিলার বা ব্যথানাশক ওষুধ খাই। ব্যথায় পেইন কিলার খাওয়া অবশ্যই ক্ষতিকর। এই সব ওষুধের প্রতিক্রিয়া এতটাই মারাত্নক যে তা কিডনি বা লিভারের ক্ষতি করে। তাই অসুস্থতা বা আঘাত থেকে ব্যথায় আর ওষুধ নয়, দারস্থ হোন কিছু প্রাকৃতিক উপায়ের। তাহলে ক্ষতিকর কোনো পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া হবে না, আবার ব্যথা থেকে মুক্তিও মিলবে।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, প্রাকৃতিক ব্যথানাশক ব্যবহারে কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। এতে একদিকে যেমন ব্যথা সেরে যায়, তেমনি স্বাস্থ্য থাকে ভালো। জেনে নিন হাতের নাগালে থাকা এসব ব্যথানাশক সম্পর্কে।

হলুদ ও গোলমরিচ

গবেষণায় জানা গেছে, হলুদ এবং গোলমরিচ দুটিই শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী। হলুদে কারকুমিন নামে এক ধরনের উপাদান থাকে যার ওপর এর উপকারিতা অনেকটাই নির্ভর করে। কিন্তু কারকুমিন নিজে থেকে শরীরে ভালোভাবে মিশে যেতে পারে না। সেক্ষেত্রে গোলমরিচের সঙ্গে মিশিয়ে খেলে কারকুমিন পুরোপুরি শরীরে মিশে যায়। গোলমরিচের মধ্যে পাইপারিন নামের এক ধরনের উপাদান পাওয়া যায়। কারকুমিন ও পাইপারিন একসঙ্গে স্বাস্থ্যের সুরক্ষা করে। এই দুটি মসলা একসঙ্গে হজম ক্ষমতা বাড়ায়। এমনকি ব্যথানাশক ওষুধ হিসেবেও কাজ করে। তাই শরীরে সামান্য ব্যথা হলে হলুদ ও গোলমরিচ একসঙ্গে মিশিয়ে খেতে পারেন। ক্যানসার কোষ ধ্বংস করতেও কারকুমিন ও পাইপারিনের জুড়ি নেই।

আঙ্গুর

এই ফলের রসে শরীরের রক্ত সঞ্চালন বাড়ানোর উপাদান আছে। রোজ এক কাপ করে খেতে পারলে ব্যথা থেকে মুক্তি পাবেন।

আনারস

এতে প্রচুর পরিমাণে ব্রোমেলেইন আছে, যা রক্ত সঞ্চালন বাড়ানোর পাশাপাশি পেশিতে টান ধরা এবং প্রদাহ কমায়। বিশেষ করে ইনফ্লমেটরি ডিজিজ আর্থ্রাইটিস-এর ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।

রসুন

ব্যথা কমাতে রসুনের ব্যবহার সেই প্রাচীনকাল থেকেই চলে আসছে। গাঁটের ব্যথা কমাতে এটি ভীষণ কাজ দেয়। এক কোয়া রসুন কুচিয়ে অল্প গরম তেলে মিশিয়ে নিন। এই মিশ্রণ জয়েন্টে ম্যাসেজ করলে আরাম লাগে। রসুন থেঁতো করে লবণ মিশিয়ে লাগালে দাঁতের ব্যথা কমে যায়।

লবঙ্গ

লবঙ্গ এক ধরনের মিষ্টি এবং মশলাদার ঔষধি যা খাওয়ার পর ব্যথা উপশম করতে পারে। মাথা ব্যথা, বাত এবং অন্যান্য প্রদাহ এবং দাঁত ব্যথার চিকিৎসার জন্য লবঙ্গ ব্যবহার করে। মাথা ব্যথা ও মাথা যন্ত্রণা কমায়: ধোঁয়া, রোদ এবং ঠান্ডার জন্য শ্লেষ্মা বেড়ে নানা ধরনের মাথা ব্যথা বা মাথার রোগ দেখা দিতে পারে। মাথা ব্যথা কমাতে লবঙ্গের উপকারিতা অপরিসীম।

আদা

রোজ একটু করে আদা চিবিয়ে খেতে পারলে শুধু আর্থ্রাইটিস নয়, সব ধরনের ব্যথা থেকেই মুক্তি মিলবে।

মাছের তেল

এর ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড মাথা, পিঠ, স্নায়ু ও রিউম্যাটয়েড আর্থ্রাইটিসের ব্যথা কমায়।

সূর্যালোক

ভিটামিন-ডি এর মাত্রা কমে গেলে শরীরে খুব ব্যথা হয়। সেই ব্যথা কমাতে পারে সূর্যের আলো। কারণ এত প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ডি রয়েছে, যা ঘাটতি মিটিয়ে ব্যথা কমায়।

ওটস

নিয়মিত ওটস খেতে পারলে তলপেটের ব্যথা কমে। কারণ এতে প্রচুর পরিমাণে ম্যাগনেশিয়াম থাকে। এই উপাদানই ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।

হাড়ের ঝোল

হাড়ের ঝোল আজকের ডায়েটে জনপ্রিয়তার বাইরে চলে যেতে পারে তবে এটি লজ্জাজনক। এটি কেবলমাত্র কোনও প্রাণীর কম অপচয় হওয়াই নয়, এটি পশ্চিমা ডায়েটে কোলাজেন, প্রোলিন, গ্লাইসিন এবং গ্লুটামিন যুক্ত করে এখন মূলত এই সমালোচনামূলক উপাদানগুলির অভাব রয়েছে। হাড়, মজ্জা এবং ত্বক দিয়ে তৈরি হাড়ের ঝোল খুব স্বাদযুক্ত এবং এতে প্রচুর পুষ্টি থাকে যা ব্যথা হ্রাস করতে পারে।

অ্যালোভেরা

অ্যালোভেরা মাংসপেশীর ব্যথা কমাতে সাহায্য করে থাকে। এমনকি ব্যথার স্থানে অ্যালোভেরা জেলের ক্রিম লাগালে ব্যথা কমে যায়। অ্যালোভেরায় মিনারেল, অ্যামিনো অ্যাসিডসহ নানা ধরণের পুষ্টিকর উপাদান রয়েছে। যা হাড় ও মাংসপেশিকে শক্তিশালী করে

তাপ এবং বরফ

প্রথমে আপনার ব্যথার জায়গায় বরফ লাগান। এটি কেবল ফোলা এবং প্রদাহকে হ্রাস করে না, এটি অঞ্চলটি স্তব্ধ করে দেয়। বরফ পোড়া রোধ করতে সক্ষম। ৩০ মিনিট বরফ লাগিয়ে আক্রান্ত স্থানটি ঘরের তাপমাত্রায় ফিরে আসতে দিন এবং তাপ প্রয়োগ করুন। একবার প্রদাহ ঠাণ্ডা দ্বারা হ্রাস পেয়েছে, উত্তাপ শক্ত হয়ে যায় এবং বেদনাদায়ক অঞ্চলে সংকোচিত পেশীগুলি শিথিল করে।

বাতের ব্যথা: দীর্ঘমেয়াদি ব্যথা, যা ছয় সপ্তাহের বেশি সময় ধরে ভোগায় তাদের জন্য চাই তাপনির্ভর চিকিৎসা। হাড়ের জোড়ের পেশি ছিড়ে যাওয়া থেকে বাতের ব্যথা হয়। এমন ব্যথার জন্য তাপ উপকারী। কারণ এতে জোড়ের শক্তভাব প্রশমিত হয় এবং পেশি শিথিল হয়।

মাথাব্যথা: হঠাৎ করে জেগে ওঠা ব্যথার ক্ষেত্রে বরফ উপকারী। কারণ এটি ব্যথার অনুভুতিকে ভোঁতা করে এবং প্রদাহ কমায়। মাথাব্যথার সময় মস্তিষ্কের স্নায়ু ও রক্তনালীতে ব্যথা হয়, যা উপশমে বরফ উপকারী।

ঘাড় ব্যথা: ঘাড় ব্যথা সারাতে বরফ ব্যবহারের ভুল করেন অনেকেই। এক্ষেত্রে মাংসপেশিকে শিথিল করতে তাপ প্রয়োগ করা প্রয়োজন।

রগে টান পড়া: পেশি বা রগে টান পড়া সারাতে বরফ ও তাপ উভয়ই জরুরি। ব্যথার অনুভূতি কমাতে প্রথমে বরফ দিতে হবে। তবে ব্যথা সেরে গেলেও পেশির শক্তভাব থেকে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে তাপ দিয়ে পেশি শিথিল করতে হবে।

এপসম লবণ

শতশত বছর ধরে কোষ্ঠকাঠিন্য, একজিমা ও ফাইব্রোমায়ালজিয়া বা সারা শরীরে ব্যথার চিকিৎসা হিসেবে এ লবণ ব্যবহার করা হচ্ছে। এপসম সল্ট হচ্ছে একটি রাসায়নিক যৌগ যেখানে ম্যাগনেসিয়াম, সালফার ও অক্সিজেন রয়েছে। যখন এ লবণকে পানিতে মেশানো হয় তখন এটি থেকে ম্যাগনেসিয়াম ও সালফেট আয়ন নির্গত হয়, যা ত্বকের মাধ্যমে শোষিত হয়ে গুরুত্বপূর্ণ শারীরিক কাজে অবদান রাখে। এখানে এপসম সল্টকে পানিতে মিশিয়ে ব্যবহার করলে উপকার পাওয়া যায়। এপসম লবণের সাথে হালকা গরম পানিতে ভিজিয়ে রাখলে হাড় এবং জয়েন্টের ব্যথা পাশাপাশি পেশীর ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়া বাথটাবে এপসম সল্ট মিশিয়ে বসে/শুয়ে থাকা জনপ্রিয়তা পাওয়ার একটি কারণ হচ্ছে, এটি কঠোর পরিশ্রম বা ব্যায়ামের পর মাংসপেশিতে যে ব্যথা অনুভূত হয় তা উপশমে সহায়তা করতে পারে। সেইসঙ্গে আর্থ্রাইটিসের ব্যথা হ্রাস করে। পাঁচ লিটার পানিতে দুই কাপ এপসম সল্ট মিশিয়ে তাপ দিন। লবণ মিশ্রিত এ পানি কুসুম গরম পানিতে রূপ নিলে আক্রান্ত জয়েন্টকে ভেজান অথবা সেখানে গরম সেঁক দিন।নিমিষেই ব্যথা দূর হয়ে যাবে।

(ঢাকাটাইমস/৮ফেব্রুয়ারি/আরজেড)