প্রশস্ত পরিসরে স্বস্তিতে বইপ্রেমীরা

তানিয়া আক্তার, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ২২:১৪ | প্রকাশিত : ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ২১:৫৯

বারোয়ারি পণ্যের পসরা নেই, নেই হকারের হাঁকডাক। সন্ধ্যার আলো মিলিয়ে আসতেই দেখা যায়নি ফুটপাতে কাপড় বিছিয়ে বই বিক্রি কিংবা গায়ে গায়ে লাগানো স্টল। এবার প্রবেশপথ যেমন রয়েছে হকারমুক্ত তেমনি নান্দনিক বিচিত্রতায় সাজানো প্রতিটি স্টলের সামনে প্রশস্ত জায়গা। মেলাঙ্গনের নতুন আর্কিটেকচার ডিজাইনের ফলে শনিবার ছুটির দিনে প্রচুর ভিড়েও বইমেলায় স্বস্তির আবহ। আর তা বই অনুরাগীরাও বেশ উপভোগ করছেন।

এক যুগ ধরে মেলায় আসছেন শেহজাদ ও হুমায়রা দম্পতি। ছাত্রাবস্থায় দেখা তাদের সেই বইমেলা আর এখনকার বইমেলায় বিস্তর পার্থক্য দেখছেন তারা। গত কয়েক বছরের চেয়ে এবারের প্রশস্ত পরিধি আর নান্দনিক বিন্যাস তাদের সন্তোষ জুগিয়েছে।

শেহজাদ ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘এত চমৎকার লাগছে পরিবেশটা যে একদম একঘেয়েমি নেই। একটু চা খেতে চাইলে লিটলম্যাগ চত্বরের পেছনে ফাঁকা। ঘাসের ওপর বসে স্বস্তি নিয়ে আড্ডা দিতে কিংবা চা খাওয়া যাচ্ছে। চাইলে লেকপাড়েও বসা যাচ্ছে।'

রাফিয়া ইসলাম ঋদিও বেশ প্রশংসা করেছেন এবারের মেলাঙ্গনের বিন্যাসে। তিনি বলেন, ‘কাঙ্ক্ষিত স্টল খুঁজে পেতে একদমই কষ্ট হচ্ছে না। বরং হাঁটতেই ভালো লাগছে। তাছাড়া ধুলা নেই এটা একটা ভালো দিক।'

পুরো মেলা নান্দনিকভাবে সাজানোর দায়িত্ব ছিল ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট ক্রস ওয়াকের। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ মারুফ ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘এবারে আমরা প্রথমবার বইমেলা সাজানোর কাজটা নিয়েছি। চেষ্টা করেছি নান্দনিক ও স্বস্তিদায়ক পরিবেশ তৈরি করতে। প্রতিটা বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে কাজ করেছি আমরা।'

বাংলা একাডেমিও এবার বইপ্রেমীদের স্বস্তির দিকটিতে বিশেষ নজর দিয়েছিল। একাডেমির মহাপরিচালক কবি হাবীবুল্লাহ সিরাজী ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘বইপ্রেমীর স্বস্তির জন্য আমরা পরিধি বাড়িয়েছি। আগামীতেও বইমেলার পাঠকদের কীভাবে শান্তি দেয়া যায় সে চেষ্টা আমাদের থাকবে।'

শিশুরা মেতেছে দ্বিতীয় শিশুপ্রহরে

এবারের বইমেলার শিশুপ্রহরের দ্বিতীয় দিন শনিবারও কোলাহল আর উচ্ছ্বাসে মেতেছিল শিশুরা। বই দেখা, বাছাই করা আর কেনার পর খেলেছেও অনেকে। ভাগাভাগি করেছে আনন্দ।

গতকালের শিশুপ্রহরের আনন্দ ঝাঁপি খুলতেই সকাল থেকে শিশুদের পদচারণে মুখর হয়ে উঠেছিল মেলা প্রাঙ্গণ।

শিশুরা বাবা-মায়ের হাত ধরে বিভিন্ন স্টল ঘুরে ঘুরে বই দেখেছে আর কিনছে।

মায়ের আঙুল ছাড়ছিল না ছোট্ট নিতি। পঙ্খিরাজ প্রকাশনী থেকে বই কেনার পর নিতি জানাল, স্কুলের বইয়ের বাইরে গল্পের বই পড়তে ভীষণ ভালো লাগে তার।

নিতি বলল, ‘আমাদের বাসায় অনেক বই। আমার আরো বই লাগবে। কারণ আমি সবগুলো পড়ে ফেলেছি।'

নিতির মা স্কুলশিক্ষিকা। তিনি বলেন, ‘শুধু নিজের সন্তানকেই না, স্কুলের শিক্ষার্থীদেরও বই পড়তে উৎসাহিত করি। ছোটবেলা থেকে বইয়ের অভ্যাস থাকলে তারা ভাষার ব্যবহার অনেক সুন্দরভাবে করতে পারে। পরীক্ষার খাতায় লিখতেও পারে ভালো।'

বরাবরের মতো এবারও মেলায় শিশুদের পছন্দের তালিকায় আছে ভূতের গল্প এবং রূপকথার বই। কার্টুনের বইও বরাবরের মতো জনপ্রিয় তালিকায় রয়েছে।

শিশুদের পাশাপাশি মেলায় এসেছে কিশোররাও। তবে তারা একটু বিপাকে আছে। বয়ঃসন্ধির এই সময়টায় কোনো বয়সের সঙ্গেই নিজেদের মেলাতে পারে না তারা। ফলে যারা একা এসেছে তাদের অনেকটা খাপছাড়া হাঁটতে দেখা গেছে। তবে দলবল নিয়ে যারা এসেছে তারা বেশ আড্ডা দিয়েছে, হইহুল্লোড় করেছে। খুঁজেছে পছন্দের বই। উল্লেখ্য, প্রতি শুক্র ও শনিবার বেলা ১১টা থেকে ১টা পর্যন্ত থাকে শিশুপ্রহর।

নতুন বই

বাংলা একাডেমির জনসংযোগ উপবিভাগের দেয়া তথ্য থেকে জানা যায়, শনিবার বইমেলায় নতুন বই এসেছে ২০১টি। উল্লেখযোগ্য বইয়ের মধ্যে রয়েছে বাংলা একাডেমির সৈয়দ শামসুল হকের লেখা ও ফকরুল আলম অনূদিত ‘বঙ্গবন্ধুর শিশুতোষ জীবনী গ্রন্থ ‘ব্যালাড অব আওয়ার হিরো বঙ্গবন্ধু’, শোভা প্রকাশ এনেছে জুলফিকার নিউটনের প্রবন্ধ ‘বঙ্গবন্ধুর রাষ্ট্রচিন্তা ও রাজনীতি’, আগামী প্রকাশনী এনেছে বঙ্গবন্ধু বিষয়ক বেলাল চৌধুরীর ‘বত্রিশ নম্বর’, অনিন্দ্য থেকে এসেছে মোশতাক আহমেদের সায়েন্স ফিকশন ‘রিরি’, পুথিনিলয় এনেছে ‘বুক পকেটে রবীন্দ্রনাথ (২৫ খ-), চন্দ্রাবতী একাডেমি এনেছে মারুফুল ইসলামের ‘মানুষ মানুষ আয়না’, বাংলা প্রকাশ এনেছে হাবীবুল্লাহ সিরাজীর ‘প্রকৃতি ও প্রেমের কবিতা’, শিশু গ্রন্থকুটির এনেছে জাহীদ রেজা নূরের ‘স্পেনের রূপকথা’, কথাপ্রকাশ এনেছে সুমন্ত আসলামের ‘প্রধানমন্ত্রী প্রতিদিন চা খেতে আসেন আমাদের বাসায়’, অনন্যা এনেছে শামসুর রাহমানের ‘শামসুর রাহমানের গল্প’, জ্ঞানকোষ প্রকাশনী এনেছে মুহম্মদ জাফর ইকবালের ‘আমার সাইন্টিস মামা’।

খুদে কণ্ঠশিল্পীদের আয়োজন

অমর একুশে উদযাপনের অংশ হিসেবে সকালে গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে শিশু-কিশোর আবৃত্তি প্রতিযোগিতা আর আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে শিশু-কিশোর সংগীত প্রতিযোগিতার প্রাথমিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। আবৃত্তি প্রতিযোগিতায় ক-শাখায় ১৩০ জন এবং খ-শাখায় ৭০ জন শিশু-কিশোর অংশগ্রহণ করেন।

শিশু-কিশোর সংগীত প্রতিযোগিতার প্রাথমিক প্রতিযোগিতায় ক-শাখায় ৭৯ জন এবং খ-শাখায় ৮৮ জন শিশু-কিশোর অংশগ্রহণ করেন।

মূলমঞ্চে আলোচনা

গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় এম আবদুল আলীম রচিত ‘বঙ্গবন্ধু ও ভাষা-আন্দোলন’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। জাতীয় অধ্যাপক রফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অপরেশ বন্দ্যোপাধ্যায়। আলোচনায় অংশ নেন প্রতিভা মুৎসুদ্দী। লেখকের বক্তব্য প্রদান করেন এম আবদুল আলীম।

কবিকণ্ঠে কবিতা পাঠ করেন কবি অঞ্জন সাহা, আতাহার খান, টোকন ঠাকুর এবং রাসেল আশেকী। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী ইকবাল খোরশেদ, মাসুদুজ্জামান এবং মীর মাসরুর জামান রনি। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশ নেয় গোলাম কুদ্দুছের পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘বহ্নিশিখা’।

সংগীত পরিবেশন করেন আবুবকর সিদ্দিক, অণিমা মুক্তি গোমেজ, বিমান চন্দ্র বিশ্বাস এবং মো. মুরাদ হোসেন। এদিকে, গতকাল লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন শামীম রেজা, দীপু মাহমুদ, শিহাব শাহরিয়ার এবং সাদিয়া মাহজাবীন ইমাম। (ঢাকাটাইমস/০৮ফেব্রুয়ারি/ইএস/মোআ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :