মিজান-বাছিরের বিরুদ্ধে চার্জশিট আমলে
৪০ লাখ টাকা ঘুষ দেওয়া ও নেওয়ার দুর্নীতির মামলায় পুলিশের বরখাস্তকৃত উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মিজানুর রহমান ও দুদকের পরিচালক (সাময়িক বরখাস্ত) খন্দকার এনামুল বাছিরের বিরুদ্ধে দাখিলকৃত চার্জশিট আমলে নিয়েছে আদালত।
রবিবার ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ কেএম ইমরুল কায়েশ চার্জশিট আমলে নিয়ে আগামী ৪ এপ্রিল চার্জগঠনের শুনানির দিন ধার্য করেছেন।
এর আগে গত ১৯ জানুয়ারি দুদকের পরিচালক শেখ মো. ফানাফিল্ল্যা আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেন।
মামলার চার্জশিটে বলা হয়, দুদক পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছির ২০১৮ সালের ২৯ অক্টোবর থেকে ডিআইজি মিজানের জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগের অনুসন্ধানকারী করছিলেন। অনুসন্ধানচলাকালে ২০১৯ সালের ৯ জুন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ায় সাংবাদ প্রকাশিত হয় যে, ডিআইজি মিজান অনুসন্ধান সংশ্লিষ্টে এনামুল বাছিরকে ৪০ লাখ টাকা ঘুষ/উৎকোচ দিয়েছেন। তাৎক্ষণিক দুদক একটি তদন্ত কমিটি করে তদন্তে প্রাথমিক সত্যতা পায়। এরপর এ সংক্রান্তে তিন সদস্যের অনুসন্ধান কমিটিও ঘটনার সত্যতা পাওয়ায় মামলাটি করা হয়।
চার্জশিটে আরও বলা হয়, মামলার তদন্তকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন, সাক্ষীদের বক্তব্য গ্রহণ এবং এনটিএমসি হতে প্রাপ্ত বিশেষজ্ঞ বিশ্লেষণে প্রতীয়মান হয়, ২০১৯ সালের ১৫ জানুয়ারি ও ২৫ ফেব্রুয়ারি ডিআইজি মিজান একটি বাজারের ব্যাগে কিছু বইসহ যথাক্রমে ২৫ লাখ টাকা ও ১৫ লাখ টাকা রমনা পার্কে এনামুল বাছিরকে দুই দফায় প্রদান করেন। যার চাক্ষুস সাক্ষী আসামি মিজানের দেহরক্ষী হৃদয় হাসান ও অর্ডারলি মো. সাদ্দাম হোসেন। এছাড়া মিজান ও বাছিরের মুঠোফোনের কথোপকথন পর্যালোচনায় দেখা যায়, বাছির তার ছেলেকে কাকরাইলের উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল থেকে আনা নেয়ার জন্য মিজানের কাছে একটি গাড়িও দাবি করেন। যা তিনি দুদকের বিভাগীয় তদন্ত টিমের কাছে স্বীকারও করেছেন।
চার্জশিটে বলা হয়, আসামি মিজান ও বাছির অবৈধভাবে দুটি পৃথক সিম ব্যবহার করে একে অপরের মধ্যে কথোপকথনসহ ক্ষুদেবার্তা আদান-প্রদান করেছেন। সিম দুইটি হেদরক্ষী হৃদয় হাসান ও অর্ডারলি সাদ্দামের নামে কেনা করা। হৃদয়ের নামে কেনা সিমটি মিজান বাছিরকে একটি সামসাং মোবাইলসহ প্রদান করেন। এবং সাদ্দামের নামে কেনা সিমটি নিজে বাছিরের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য গোপনে ব্যবহার করেন। নম্বরগুলো থেকে মিজান বিভিন্ন সময় ক্ষুদেবার্তার মাধ্যমে বাছিলের সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছেন মর্মে তথ্য-প্রমাণ পাওয়া গেছে। তদন্তে আরও প্রমাণিত হয় যে, মিজান অসৎ উদ্দেশ্যে পরিকল্পিতভাবে বাছিরের সাথে ঘুষ লেনদেনসংক্রান্ত কথোপকথন রেকর্ড করে সংরক্ষণ করেন এবং পরবর্তী সময়ে তা গণমাধ্যমে প্রকাশ করেন। মিজান নিজে অবৈধ সম্পদের অভিযোগ থেকে বাঁচার জন্যই অসৎ উদ্দেশ্যে বাছিরকে ঘুষ প্রদান করে প্রভাবিত করেন। আর বাছির সরকারি কর্মকর্তা হয়েও তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালনকালে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার জন্য গোপনে ঘুষ গ্রহণ করেন।
গত বছরের ১৬ জুলাই দুদকের একই কর্মকর্তা আসামি মিজান ও বাছিরের বিরুদ্ধে এ মামলা দায়ের করেন। মামলার পর ২২ জুলাই রাতে রাজধানীর মিরপুরের দারুস সালাম এলাকা থেকে এনামুল বাছিরকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরদিন তাকে একই আদালতে হাজির করা হলে আদালত জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এর আগে ঘুষ প্রদানের তথ্য মিডিয়ায় প্রকাশ করে আত্মগোপনে থাকা ডিআইজি মিজানকে একই বছর ১ জুলাই হাইকোর্ট পুলিশের হাতে তুলে দেয়। পরদিন নিম্ন আদালতে হাজির করা হলে তার জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানো হয়। এরপর থেকে তারা কারাগারেই আছেন।
(ঢাকাটাইমস/০৯ফেব্রুয়ারি/আরজেড/জেবি)