দীর্ঘায়ুর খোঁজে: কীভাবে বেশি দিন বেঁচে থাকে

ফিচার প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ১৬:২৬ | প্রকাশিত : ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ১৪:২৭

সুন্দর এই পৃথিবী ছেড়ে কেউ কি চলে যেতে চায়! এজন্যই যুগ যুগ ধরে বিজ্ঞানীরা প্রতিনিয়ত বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও গবেষণা-সমীক্ষা চালিয়ে যাচ্ছেন। কীভাবে মানুষ দীর্ঘায়ু লাভ করতে পারে। দীর্ঘজীবন সর্বদা মানবজাতিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করছে। অন্তত দার্শনিকের পাথর তৈরি করার চেষ্টাগুলোর মধ্যে দেখা যায় যার অন্যতম কাজ ছিল অমরত্ব হয়ে ওঠার।

আধুনিক সময়ে অনেকগুলো ডায়েট, জীবন সম্পর্কে সুপারিশ এবং অসংখ্য ছদ্ম-গোপন রহস্য রয়েছে যা কোন ব্যক্তি তার সহযোদ্ধাদের চেয়ে বেশি দিন বাঁচতে পারে। তাই এখন পর্যন্ত কেউ কোনও বৃদ্ধির গ্যারান্টি দিতে পারে নাই। এ কারণেই যারা সফল হয়েছিল তাদের সম্পর্কে লোকেরা আগ্রহী।

দীর্ঘায়ু লাভের কিছু বৈজ্ঞানিক উপায় আছে। যেমন:

• দ্রুত হাঁটলে আয়ু বাড়ে

• আনন্দে থাকলে আয়ু বাড়ে

• নিরামিষ খেলে বেশি দিন বাঁচে

• সূর্যালোকে থাকলে

• পর্যাপ্ত ঘুমালে

• চাপমুক্ত থাকলে

• নিয়মিত শরীরচর্চা করলে

• ধূমপানমুক্ত থাকলে

গবেষকদের মতে, দীর্ঘকালীন জীবিকার সংখ্যাগরিষ্ঠ ব্যক্তিরা সারাজীবন শারীরিকভাবে কাজ করেছেন এবং সাধারণ খাবার খান।

এটি সুবিদিত যে খারাপ অভ্যাস এবং জাঙ্ক ফুড জীবনকে উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করে। আপনি এটি নিয়ে তর্ক করতে পারবেন না। এগুলো হৃৎপিণ্ড, রক্তনালী, লিভার এবং কিডনির রোগগুলোকে উস্কে দেয়। এই রোগগুলোই অকাল মৃত্যুকে জড়িত করে।

বাস্তুশাস্ত্র আজ সবচেয়ে চাপের বিষয়। এটি কাউকে অবাক করে দেবে না যে প্রায় সমস্ত শতবর্ষজীবী বাস্তুগতভাবে অনুকূল অঞ্চলে বাস করেন যেখানে বড় উদ্যোগ নেই। পরিষ্কার বাতাস, পানি, প্রাকৃতিক খাদ্য, মানসিক চাপমুক্ত, পারিবারিক সহযোগিতা দীর্ঘজীবনের জন্য এগুলো প্রধান শর্ত।

প্রথমত, পুষ্টি সুষম হওয়া উচিত, অর্থাৎ সবকিছু সংযত হওয়া উচিত। কোনও ব্যক্তি এভাবে কাজ করেন যাতে শরীরের সঠিক ক্রিয়াকলাপের জন্য বিভিন্ন উপাদানের মধ্যে থাকা অনেক উপাদান প্রয়োজনীয় হয়।

দ্বিতীয়ত, মানসিক চাপ আধুনিক বিশ্বকে চাপ এবং হতাশা থেকে পৃথক করা যায় না যা স্বাস্থ্যের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। তারা বিপুল সংখ্যক রোগকে উস্কে দেয়। বহু বছর ধরে বসবাস করে এবং বার্ধক্যজনিত প্রক্রিয়াটিকে ট্রিগার করে। কোনও ব্যক্তির বৈষয়িক এবং আধ্যাত্মিক বিশ্বের মধ্যে একটি ভারসাম্যহীনতা রয়েছে, যা তাকে মানসিক চাপের জন্য দুর্বল করে তোলে। দুর্দান্ত নার্ভাস স্ট্রেসের ক্ষেত্রে হাঁটাচলা করুন, নিজেকে কিছু করার জন্য শখ দিন, আরও সক্রিয়ভাবে বিশ্রাম করুন।

এক্ষেত্রে শতবর্ষের বিশাল সংখ্যাগরিষ্ঠ হলো পরিবারের লোক। তিনিই সেই ব্যক্তিকে এমন পরিস্থিতি তৈরি করেন যার অধীনে তিনি দীর্ঘকাল বেঁচে থাকেন। পরিবারের সদস্যদের যত্ন নেওয়া, তরুণ প্রজন্মের সাথে সরাসরি যোগাযোগ, আপনার প্রিয়জনদের প্রতি আপনার তাৎপর্যের প্রতি আস্থা, আপনি যে ভালবাসা দেন, সুরক্ষা এবং আত্মবিশ্বাসের অনুভূতি - এটি প্রয়োজনীয় ভিত্তি যার মাধ্যমে একজন ব্যক্তির জীবনের আগ্রহ রয়েছে, যা প্রয়োজনীয় শক্তি দেয়।

দীর্ঘজীবন বা শতবর্ষজীবী মানুষের খোঁজ পাওয়া যায় অনেক জায়গায়। জাপান, সুইজারল্যান্ড, জার্মানী, অস্ট্রেলিয়া, স্পেন, আইসল্যান্ড, ইতালি, ইসরায়েল, ফ্রান্স, গ্রিসসহ বিভিন্ন দেশে। এরকমই গ্রিসের একটি ছোট দ্বীপ নাম ইকারিয়া। ২৫৪ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত। সেখানে যেন মানুষের জীবনে এমন কিছু একটা ঘটেছে, যার ফলে ‘মৃত্যুকে ভুলতে বসেছেন’ তাঁরা! বা অন্য ভাবে বললে বিষয়টা এমন, ‘অমরত্বের’ রহস্য জেনে ফেলেছেন!

বিস্ময়ে ভরা এই দ্বীপের মানুষের গড় আয়ু ১০০ বছর। এত বছর বয়স মানেই চোখের সামনে কুঞ্চিত চামড়া, ক্ষীণ দৃষ্টি, লাঠি ধরে চেয়ারে বসে থাকার যে ছবি ফুটে ওঠে, তার সঙ্গে ইকারিয়ার বাসিন্দাদের কোনও মিল পাবেন না। ১০০ বছরেও লাঠি-নির্ভর নন এখানকার বাসিন্দারা। পাহাড়ি সিঁড়ি ভেঙে একাই উঠে যান।

এখানকার বাসিন্দারা আজও ঘড়ির উপর নির্ভরশীল নন। ব্যবসায়ীরা নিজেদের ইচ্ছামতো দোকান খোলেন। লাঞ্চে নিমন্ত্রিত অতিথিরা দুপুর ১২টাতে আসতে পারেন, আবার সন্ধ্যা ৬টাতেও। এখানে সবাই নিজের মর্জির মালিক। আর তাতে কারও কোনও সমস্যাও নেই। ছোট্ট এই দ্বীপে সকলেই একটা পরিবারের মতো বাঁচেন। টাকা-পয়সা নিয়ে কেউই মাথা ঘামান না। আর তাই ভীষণ স্ট্রেস মুক্ত জীবন এখানে।

বেশি শাক-সব্জি, ফল খান তাঁরা। ফাস্ট ফুড একেবারেই চলে না এখানে। মাছ-মাংসও পরিমাণে খুব কম খান এখানকার বাসিন্দারা। মৎস্য়জীবী, চাষি, পশুপালন এগুলোই এখানকার মানুষের মূল জীবিকা। আর পাহাড়ি এলাকা হওয়ায় আলাদা করে শরীরচর্চারও প্রয়োজন হয় না। দৈনন্দিন কাজের মধ্যেই সেটা সম্পূর্ণ হয়।

রাতে ঘুমনোর আগে তাঁরা এক ধরনের অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট হার্বাল চা খান। কোনও স্ট্রেস না থাকার কারণে তাঁদের ঘুমও পর্যাপ্ত হয়, যা শরীর সুস্থ রাখার অন্যতম উপায়।

ভাবতে অবাক লাগলেও বয়স তাঁদের যৌবনেও ছাপ ফেলতে পারে না। তাই ৮০ শতাংশ ইকারিয়ান ৬৫ থেকে ১০০ বছরেও সম্পূর্ণ সুস্থ এবং স্বাভাবিক যৌন জীবন পর্যন্ত উপভোগ করেন। ইউনিভার্সিটি অব আথেন্স-র এক গবেষণায় উঠে এসেছে এই তথ্য।

বিশ্বের সবচেয়ে বেশি শতায়ুর সংখ্যা এই দ্বীপে কেন? কেন এখানে মানুষ কম অসুখে ভোগেন? বিশ্বে ভয়ানক হারে বাড়তে থাকা ক্যানসার এবং হৃদরোগ এখানকার বাসিন্দাদের মধ্যে দেখাই যায় না, সেটা কী ভাবে সম্ভব? প্রচুর গবেষণাও হয়েছে এ নিয়ে।

গবেষণায় বারবারই তাঁদের লাইফস্টাইলের বিষয়টি উঠে এসেছে। তাঁদের চিন্তামুক্ত জীবনযাত্রা, খাদ্যাভাস এবং সর্বোপরি এই দ্বীপের জলবায়ু— এই তিনটি কারণের জন্যই ‘মৃত্যুকে ভুলতে বসেছেন’ এঁরা, এমনটাই মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। (ঢাকাটাইমস/১০ফেব্রুয়ারি/আরজেড)

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফিচার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :