কব্জিতে কলম চেপে পরীক্ষা দিচ্ছেন মিনারা

নিজস্ব প্রতিবেদক, কুড়িগ্রাম
| আপডেট : ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ২২:৪১ | প্রকাশিত : ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ২২:৩৩

অভাবের সংসার। বাবা পেশায় দিনমজুর। দিনে এনে দিনে খায়। জন্ম থেকেই শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী। নেই মাথা গুঁজার ঠাঁই। এসবের কিছুই দমাতে পারেনি কুড়িগ্রামের চিলমারীর দাখিল পরীক্ষার্থী মিনারা খাতুনকে। আঙুল নেই তাতে কী হয়েছে। পরীক্ষা হলে মনের বলে কব্জির জোরে কলম চলছে তার।

অদম্য এই শিক্ষার্থী জন্মের কিছুদিন পর মাকে হারায়। এরপর বাবা বিয়ে করলে সংসারে আসে ‘নুতুন মা’। এর উপর শেষ আশ্রয় স্থান ছিল বাঁধে। তাও ভেঙে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। প্রবল ইচ্ছাশক্তির জোরে এবারের এসএসসি (দাখিল) পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। মিনারা চিলমারী উপজেলার কাঁচকোল দক্ষিণ বাঁধ এলাকার রফিকুল ইসলাম ও মৃত মর্জিনা বেগমের মেয়ে। দুই বোনের মধ্যে মিনারা ছোট।

জন্ম থেকেই তার দুই হাতের কব্জি বাঁকা। নেই আঙ্গুল। তবুও থেমে যায়নি মিনারা। এবারে দাখিল পরীক্ষা অংশ নিয়ে দুই হাতের কব্জিতে কলম চেপে ধরে সমানে লিখে চলেছে। মিনারার দুই হাতের কব্জির সাহায্যে লিখেই পঞ্চম শ্রেণির সমাপনী (পিএসসি) ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পাস করে ভালো ফলাফল অর্জন করে। সে এবার দাখিল পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। সে উপজেলার কাঁচকোল খামার সখিনা ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসার ছাত্রী।

ছোটবেলা থেকেই মিনারার পড়ার প্রতি আগ্রহ দেখে বাবা তাকে স্থানীয় কেডি ওয়ারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করিয়ে দেন। মিনারা পড়তে পারলেও লিখতে পারেনি। তারপরও সে মনোবল হারায়নি কখনো। অদম্য সাহসের সঙ্গে বড় বোনের সহায়তায় বাড়িতে বসে দুই হাতের কব্জির সাহায্যে কলম ধরে লিখতে শেখে মিনারা।

স্কুলের শিক্ষকরা অন্যান্য ছাত্র-ছাত্রীদের মতই যত্ন সহকারে তাকে লেখাপড়া শেখাতে থাকেন। সমাজসেবা অধিদপ্তর ও মাদ্রাসা থেকে সে উপবৃত্তি পায়। তা দিয়ে কষ্ট হলেও চলে তার লেখাপড়ার খরচ। শেষ আশ্রয়স্থল ছিল অবদা বাঁধের থাকার স্থানটুকু। কর্তৃপক্ষ ভেঙে ফেলার কারণে সেটিও ছাড়তে হয়েছে। কোনো উপায় না থাকায় বড় বোনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে চলতি দাখিল পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে মিনারা।

কাঁচকোল খামার সখিনা ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসার সুপার মাওলানা আইয়ুব আলী আকন্দ জানান, মিনারা ছাত্রী হিসেবে ভালো। মাদ্রাসায় লেখা-পড়ার সব দায়িত্ব আমরা নিয়েছিলাম।

রাজারভিটা ইসলামিয়া ফাযিল মাদ্রাসা কেন্দ্রের কেন্দ্র সচিব অধ্যক্ষ মিনহাজুল ইসলাম বলেন, দুই হাতের সাহায্যে লিখে মিনারা ভালো পরীক্ষা দিচ্ছে। মেয়েটি ফলাফল ভালো করবে বলে আমরা আশাবাদী।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার এ ডাব্লিউ এম রায়হান শাহ্ বলেন, আমি তাকে দেখেছি। এছাড়াও আমার মনে হয়েছে তার মাঝে অনেক যোগ্যতা রয়েছে। সে ভালো কিছু করতে পারবে। আমরা চেষ্টা করবো তাকে সার্বিক সহযোগিতা করতে।

মিনারা খাতুন সত্যিকার মানুষ হয়ে যেন মানুষের সেবা করতে পারে এবং বিশেষ করে প্রতিবন্ধীদের পাশে দাঁড়াতে পারে সেজন্য সবার দোয়া চেয়েছে।

(ঢাকাটাইমস/১১ফেব্রুয়ারি/কেএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :