ফুলের গায়ে সুঁইয়ের ফোঁড়ে গাঁথা জীবন

প্রকাশ | ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ১৮:২৬ | আপডেট: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ২০:০৩

তানিয়া আক্তার, ঢাকাটাইমস

প্রতিটি সুঁইয়ের ফোঁড়ে লুকিয়ে আছে জীবনের গল্প। এর পেছনে আছেন যেসব কারিগর, ফুলের সঙ্গেই কাটছে তাদের যুগের পর যুগ। কৈশোর, যৌবন আর প্রৌঢ়কাল গুচ্ছ গুচ্ছ ফুলের মতো সুতার বাঁধনে আটকা তাদের।

সুঁচই জীবিকার একমাত্র অবলম্বন ফুল কারিগরের। এক সময় নকশিকাঁথা সেলাই আর এখন ফুলের মালা গাঁথা। জীবিকার মাধ্যমে পরিবর্তন এলেও রয়ে গেছে সেই সুঁই। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে ছড়িয়েছেন ফুলের সুবাস। সাদিয়া, হালিমা ও হারুনের মতো ফুল কারিগরের নিপুণ শিল্পীর হাতে তৈরি হয় বিনুনি কিংবা খোঁপার মালা। তাদের সন্তানেরও জীবিকার সঙ্গী ফুল।

তবে, ফুলের মতো কোমল নয় তাদের জীবন। জমাটবাধা রক্তের মতো তাদের জীবনের গল্পগুলো আড়ালেই থেকে যায়। গভীর মনোযোগে গাঁথা এই ফুলগুলোর মজুরি যেমন কম তেমনি বছরজুড়ে থাকে না কাজ।

শাহবাগের ফুল দোকানের সামনের অংশটুকুতে ফুল ছড়িয়ে মালা গাঁথতে গাঁথতেই কথা হয় ফুল কারিগরদের সঙ্গে। দিন ফুরোলেই বসন্ত আর ভালবাসা দুটি দিবস একই দিনে। ব্যস্ততার ফুরসত নেই। এদেরই একজন হালিমা খাতুন। থাকেন ঢাকার হাজারীবাগে।

হালিমা খাতুন ঢাকাটাইমসকে বলেন, 'আজ এইহানে তো কাল ওইহানে। ভালো কোনো জায়গায় বসে কাজ করার সুযোগ নাই। রোদ-ঝড়-বৃষ্টিতে ঝামেলা বেশি।'

বাসর ঘরের জন্য একটা লম্বা চিকন মালা দুই টাকা, গায়ে হলুদের গয়না কিংবা বিয়ের মালা ২০ টাকা থেকে ২০০ টাকা পেয়ে থাকেন তারা। ফুলের দোকানগুলো সুতা, ফুল দিয়ে থাকেন। তাদের শুধু সুঁই আর মালা গাঁথার অভিজ্ঞতা থাকতে হয়। তবে তাদের বিক্রি করতে হয় না। মালা গাঁথার পর ফুল বিক্রেতারা বিক্রি করেন। তাই যে যত বেশি ফুল গাঁথার সুযোগ পাবেন, তার টাকা ততবেশি।

প্রায় তিন যুগ ধরেই ফুলের মালা গাঁথার কাজ করছেন সাদিয়া আক্তার। তিনি ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘বেশি কাজ পাইলে টেহা বেশি আহে। দিনে ২০০ টেহা আবার মাঝেমধ্যে যোহন ফাগুন বৈশাখ আহে যহন ৩০০ টেহাও আহে। আবার কোনো কোনো দিন কোনো কাজই থাহে না। আর পুরা রোজার মাস কোনো কাজ নাই। ঘরে বইয়া থাকি।’

তবে কষ্ট সংগ্রামের এ জীবনে বাড়তি বিড়ম্বনা হিসেবে যোগ হয় টয়লেট সারা। নারী হওয়ায় প্রতিদিনই টয়লেটের অসুবিধায় পড়েন তারা। আশেপাশে পাবলিক টয়লেট থাকলেও অর্থসংকটে সেই সুবিধা নিতে কষ্ট হয় সবার।

আছিয়া আক্তার বলেন, 'প্রতিদিন তিনবার চারবার গেলে সব মিলায়ে ৩০ টাকা করে চলে যায়। আবার যাওয়া-আসার ভাড়া তো আছেই। এজন্য মাঝেমধ্যে টয়লেট চাপায় রাখি।'

ফুলের কারিগর সাদিয়ার ছেলেও ফুলের কাজ করেন। এভাবে ফুলের ওপর নির্ভর করেই চলছে প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম।

(ঢাকাটাইমস /১৩ ফেব্রুয়ারি/ টিএটি/ইএস)