বইমেলার নিরাভরণ প্রাথমিক চিকিৎসা কেন্দ্র চোখে পড়ে না

প্রকাশ | ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০৮:২৬

তানিয়া আক্তার, ঢাকাটাইমস

বাংলা একাডেমির বইমেলায় হঠাৎ কারও কোনো শারীরিক সমস্যা দেখা দিলে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার জন্য ওষুধের ঝাঁপি নিয়ে বসে আছেন ডা. মাহফুজা। সঙ্গে আছেন অনিমা ও রেজা। তারাও চিকিৎসক। টেবিলে সাজানো কতগুলো সচেতনতামূলক লিফলেট। এই তরুণ চিকিৎসকদের অপেক্ষা বিনামূল্যে প্রাথমিক চিকিৎসা সেবাদানের। কিন্তু বেশির ভাগ সময় ফাঁকা পড়ে থাকে স্টলটি।

নানা সাজের বিভিন্ন স্টলের ভিড়ে দুটি কাপড় দিয়ে ঘেরা প্রাথমিক চিকিৎসাকেন্দ্রটি কারও চোখেই পড়ে না। ফলে প্রয়োজনীয় সময় এর সুবিধা নেওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বইমেলায় আগতরা।

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ফুডকোর্টের সামনের সারিতে এর অবস্থান। বাংলা একাডেমি আর সব স্টলের মতো এই স্টলের কাঠামো করে ঢাকা জেলা সিভিল সার্জেন্ট অফিসকে দিয়েছে। কিন্তু বরাদ্দের অভাবে এর সাজসজ্জা করতে পারেনি সরকারের জনস্বাস্থ্যবিষয়ক সংস্থাটি।

অন্য বছরগুলোতে সাধারণত অনেকটা নির্জন জায়গায় প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা স্টল থাকত। এবার সেটা নিয়ে আসা হয় ফুডকোর্টের সামনে। তার পরও শুধু সাদামাটা থাকায় চোখ এড়িয়ে যাচ্ছে প্রায় প্রত্যেকের।

এর সামনেই রয়েছে বেঙ্গল টি-এর স্টল। অনেকে এখানে চা পান করছেন, অথচ তাদের চোখও এড়িয়ে যাচ্ছে প্রাথমিকি চিকিৎসার স্টলটি।
বেঙ্গল টি স্টলে দাঁড়িয়ে চায়ের কাপ হাতে মিজান আহমেদ। বইমেলায় প্রাথমিক চিকিৎসা স্টলটি কোথায় আছে জিজ্ঞেস করতেই উনি তথ্যকেন্দ্রের সহায়তা নিতে বললেন। যখন দেখানো হলো তার পাশেই রয়েছে স্টলটি, তখন অবাক হলেন তিনি।

হাঁটতে গিয়ে হোঁচটের চোট কিংবা হঠাৎ মাথা ব্যথার কারণে অনেকের বইমেলায় কাঙ্ক্ষিত সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করা কিংবা পছন্দের বইটি না কিনেই ফিরে যেতে হচ্ছে।

এই চমৎকার সুবিধা থেকে বঞ্চিত একজন নীলা রহমান। প্রথম শিশুপ্রহরে সন্তানকে নিয়ে এসেছিলেন বইমেলায়। হঠাৎ সন্তানের বমিতে ভড়কে গিয়েছিলেন। তথ্যকেন্দ্রে গিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা স্টলের অবস্থান জানতে পারলেও সোহরাওয়ার্দীর ঠিক কোথায় বুঝে উঠতে না পেরে ফিরে গিয়েছিলেন।

নীলা রহমান ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘ফুডকোর্টে খেতেও গেছি সেদিন। তারপরও চোখে পড়ল না স্টলটি। যদি দেখতে পেতাম তাহলে চিকিৎসক দেখিয়ে হয়তো আরও কিছু সময় থাকতে পারতাম মেলায়। আরও কিছু বই কেনার ইচ্ছেও ছিল তার। পুরো বইমেলা জুড়ে এত সুন্দর সুন্দর স্টল! এই স্টলটা একটু আকর্ষণীয় করে সাজালে নিশ্চয় চোখে পড়ত সবার।’

মেলার দুই প্রাঙ্গণে ঘুরেছেন এমন অনেকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল তারা কেউই প্রাথমিক চিকিৎসার স্টলটির অবস্থান জানতে পারছেন না। তারা প্রায় সবাই সোহরাওয়ার্দীর ফুডকোর্টে খেয়েছেন নয়তো এর পাশেই রয়েছে নামাজ ঘর, সেখানে গিয়েছেন। তারা বলতে পারেননি কোথায় প্রাথমিক সেবা পাওয়া যাবে বিনামূল্যে।

পায়ে ব্যথা নিয়ে মেলা থেকে ফেরত গিয়েছিলেন শফিক আহমেদ। বৃহস্পতিবার আবার এসেছেন। তিনি ঢাকাটাইমসকে বলেন, 'নীলক্ষেতে থাকি। বইমেলার কাছাকাছি বাসা থাকায় বন্ধুবান্ধব সবাই আমাকেই বই কিনতে বলে। ফলে সেদিন প্রচুর হাঁটতে হয়েছিল। হাতে অনেক বই ছিল। হঠাৎ পায়ে ব্যথা পাওয়ায় কোনোমতে মেলা থেকে বেরিয়ে একটা সিএনজিতে করে ঢাকা মেডিকেলে যাই। জানতামই না ঢাকা মেডিকেলের ডাক্তাররাই বইমেলায বিনামূল্যে চিকিৎসা দিচ্ছেন!'

মেলায় আসা বইপ্রেমীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ঢাকা সিভিল সার্জন ও বাংলা একাডেমির এই সুবিধা বরাবরের মতো এবারও রয়েছে। ঢাকা সিভিল সার্জন অফিসের নির্দেশনায় ডিউটি ডাক্তাররা রোস্টার অনুযায়ী এখানে সেবাদান করছেন। সার্বিক সহায়তা দিচ্ছে বাংলা একাডেমি।

স্টলের দুই পাশে দুটি স্বেচ্ছায় রক্তদান সেবাদানকারী স্টল থাকায় নিরাপদ বোধ করছেন নারী ডাক্তাররা। অল্প রোগী আসছেন তবে সেবা ও আন্তরিকতার কোনো ঘাটতি নেই। তবে সাদামাটা স্টলটি নিয়ে আক্ষেপ রয়েছে তাদেরও। স্টলটি সহজে চোখে পড়লে এর উদ্দেশ্য সফল হতো।

ডা. মাহফুজা ঢাকাটাইমসকে বলেন, 'আমরা শুধু প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে থাকি। মেলায় অনেক গর্ভবতী, মৃগীরোগী, বয়স্ক, নবজাতকসহ অনেক মানুষে এসে থাকেন। মেলা অনেক বড় হওয়ায় হাঁটতে হাঁটতে নানা অসুবিধায় পড়তে পারেন কেউ। স্টলটি আরেকটু দৃষ্টি আকর্ষক হলে এটি খুঁজে পেতে সেবাপ্রার্থীদের জন্য সহজ হতো।

স্টলটি কেন এতটা সাদামাটা রাখা হয়েছে জানতে চাইলে বাংলা একাডেমির প্রশাসন, মানবসম্পদ উন্নয়ন ও পরিকল্পনা বিভাগের পরিচালক কে এম মুজাহিদুল ইসলাম ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘বাংলা একাডেমির দায়িত্ব হলো কাঠামো তৈরি করে দেয়া। আমরা সেটা প্রতিটা স্টলের জন্যই করে থাকি। প্রাথমিক চিকিৎসা স্টলের জন্য আমরা সে কাঠামো দিয়েছি। বাকিটা দেখবে সিভিল সার্জন। তারা স্টল ডেকোরেশনের দায়িত্বে আছেন। তারপরও আমরা চেয়ার টেবিল এবং দুই পাশে পর্দা দিয়েছি। এ ছাড়া এখানে দায়িত্বরত ডাক্তারদের খাবারের ব্যবস্থা করেছি। যদিও এগুলো আমাদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না তবুও আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি।'

সিভিল সার্জনের পক্ষ থেকে ডা. মইনুল হাসান ঢাকাটাইমসকে বলেন, 'স্টলটি সাজানোর জন্য আমাদের আলাদা কোনো বরাদ্দ নেই। এছাড়া ডাক্তারদের খাবার দেয়া কিংবা পরিবহন বিল দেয়া সেগুলোর জন্যও বরাদ্দ থাকে না। তবে স্টলটা একটু কীভাবে সাজানো যায় যাতে সহজেই চোখে পড়ে, সেই চেষ্টা আমরা করব।

(ঢাকাটাইমস /১৪ফেব্রুয়ারি/মোআ)