নিয়ম না মেনে নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার ও যানজট দূষণের বড় দুই কারণ

প্রকাশ | ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ১০:১৬ | আপডেট: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ১৬:৪৮

বোরহান উদ্দিন, ঢাকাটাইমস
ফাইল ছবি

বায়ুদূষণের সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে থাকা রাজধানী ঢাকার জনস্বাস্থ্য ও জলবায়ু সুরক্ষায় জরুরিভিত্তিতে এখনই উদ্যোগ নেয়া জরুরি বলে মনে করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. আবদুস সালাম। ঢাকার বায়ুর মান ও দূষণের ওপর দেড় দশকের বেশি সময় কাজ করা এই গবেষকের মতে, বায়ুদূষণ রোধে বৃহৎ কর্মকাণ্ড শুরু করা না গেলেও জরুরি ভিত্তিতে ছোটখাটো উদ্যোগ নিতে হবে। এতে অন্তত বায়ুদূষণের ক্ষতির হাত থেকে অনেকখানি নিরাপদ থাকা সম্ভব হবে।

বায়ুদূষণের কারণে বাংলাদেশ প্রতি বছর মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ১৪০০ কোটি ডলার আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছে বলে এক গবেষণা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। সেন্টার ফর রিসার্চ অন এনার্জি অ্যান্ড ক্লিন এয়ার এবং গ্রিনপিসের দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া শাখার ‘বিষাক্ত বাতাস: জীবাশ্ম জ্বালানির খেসারত’ শীর্ষক ওই প্রতিবেদনে বায়দূষণজনিত মৃত্যুর সংখ্যা নিয়েও একটি ধারণা দেয়া হয়েছে।

ওই প্রতিবেদনে উঠে আসা বিভিন্ন তথ্যের বিষয়ে ঢাকা টাইমসকে এক সাক্ষাৎকারে আবদুস সালাম বলেন, ঢাকায় বায়ুদূষণে অন্যতম কারণ যানজট এবং নির্মাণসামগ্রীর নিয়মনীতি ছাড়া ব্যবহার, ফেলে রাখা। এতে পরিবেশ দূষণের কারণে জলবায়ু, মানুষের স্বাস্থ্য ও কৃষিখাতের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। তাই দূষণরোধে বৃহৎ কর্মকাণ্ড শুরু করতে না পারলেও ছোটখাটো উদ্যোগ নিতে হবে। এতে শতভাগ ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পাওয়া না গেলেও অনেকখানি নিরাপদে থাকা সম্ভব হবে।’

পরিবেশ দূষণের প্রভাব জলবায়ু, মানুষের স্বাস্থ্য ও কৃষিখাতের ওপর সরাসরি পড়ে উল্লেখ করে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের এই শিক্ষক বলেন, ‘কেউ হয়তো হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছে বা ডায়েবেটিকস বা শ্বাসকষ্ট হয়েছে। ফলে তার চিকিৎসার জন্য অনেক অর্থ ব্যয় হচ্ছে, কাজের সময় নষ্ট হচ্ছে। এ ছাড়াও বায়ুদূষণের কারণে চারদিক উত্তপ্ত হচ্ছে। ফলে এসি ব্যবহার করতে হচ্ছে। সেখানেও বড় রকমের ব্যয় হচ্ছে। এসির বায়ুতেও ক্ষতি হচ্ছে। এসব মিলেই ক্ষতির বিষয়টি ধরা হয়।’

রসায়নের অধ্যাপক সালাম বলছেন, কৃষিতে ওজন প্রডাকশন বেড়ে গেলে উৎপাদনও কমে যাচ্ছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ২০ ভাগ কৃষি উৎপাদন কমে যাচ্ছে। এটা অনেক বড় একটি ক্ষতি। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো- বায়ুদূষণের কারণে মানুষের লাইফটাইম কমে যাচ্ছে। অর্থাৎ একজন মানুষের কাজের যে সময় তার এক থেকে দুই বছর কমে যাচ্ছে। বিশাল একটি জনগোষ্ঠীর এমন ক্ষতি একত্র করলে দেখা যাবে অনেক বড় একটি ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে।

কীভাবে এই ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যেতে পারে- প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘শতভাগ ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পাওয়া না গেলেও কিছু কিছু পদক্ষেপ নেয়া গেলে অনেকখানি নিরাপদে থাকা সম্ভব। বায়ু দুষণ রোধ করার জন্য ঢাকায় বাতাসের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র ধূলিকণা অর্থাৎ পিএম ২ দশমিক ৫ লেভেল একশো থেকে দেড়শোর মধ্যে থাকে। মাঝে মাঝে ৩০০ হয়ে যায়। সেটা যদি কমিয়ে একশোর নিচে আনা যায় তাহলে খুব ভালো না হলেও উপকার হবে।’

তিনি বলেন, ‘ট্রাফিক জ্যাম এবং নির্মাণসামগ্রী বা কনস্ট্রাকশনের কাজ বায়ুদুষণের জন্য অন্যতম দায়ী। এখন আমরা যদি এটাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি অর্থাৎ- নিয়মনীতি মেনে ভবন বা স্থাপনা নির্মাণ করতে হবে। উম্মুক্ত স্থানে নির্মাণ সামগ্রী রাখা যাবে না। এতে করা কিছুটা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব।’

‘এছাড়া ট্রাফিক জ্যাম থেকে সামগ্রিক যে ক্ষতি হচ্ছে এটা খুবই চিন্তার বিষয়। কারণ ২০ মিনিটের পথ যেতে আড়াই থেকে তিনঘণ্টা সময় লাগছে। ফলে কাজের সময় নষ্ট হচ্ছে, অর্থ অপচয় হচ্ছে আবার বায়ুদূষণও হচ্ছে। তাই যানজট যদি কমিয়ে আনা সম্ভব হয় তাহলে বিশাল ক্ষতির হাত থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।’

ইট ভাটার বিরুদ্ধে অভিযান বা ভেঙে ফেলার বিষয়ে আবদুস সালাম বলেন, ‘ঢাকার আশপাশে প্রায় আটশর বেশি ইটভাটা আছে। এরমধ্যে দক্ষিণ দিকে অর্থাৎ বুড়িগঙ্গার পাড়ে যেসব ভাটা তার প্রভাব ঢাকা শহরে পড়ে না। সাভার-ধামরাই, আশুলিয়া, গাজীপুর এসব এলাকার ভাটার প্রভাব ঢাকায় পড়ে। ইটভাটা থেকে দূষণের যে পরিমাণ তার থেকে ট্রাফিক এবং কনস্ট্রাকশন খাতের দুষণ সব থেকে বেশি প্রভাব ফেলছে। তাই এগুলো যদি নিয়ন্ত্রণ করা যায় তাহলে অনেক দিক থেকে আমরা কিছুটা হলেও নিরাপদ থাকতে পারব।’

তিনি আর বলেন, ‘আইন অনুযায়ী নির্মাণসামগ্রী যেমন- ইট, বালু এসব পরিবহনের সময় ঢেকে নিতে হবে। কিন্তু সরকারি কিংবা ব্যক্তি মালিকানার যেকোনো কাজে যারাই এসব পরিবহন করছেন তারা কেউ এসব মানেন না। খোলা ট্রাকে করে এসব সামগ্রী নিয়ে আবার তা ফেলে রাখা হয় রাস্তার পাশে। ফলে দ্বিতীয়বারের মতো দূষণ ছড়ায়। এসব বন্ধ করতে হবে। ইনহেলার ব্যবহারকারীদের সঙ্গে কথা বললে দেখা যাবে কি পরিমাণ টাকা তাদের খরচ হচ্ছে এর পেছনে।’

আবদুস সালামের পরামর্শ, বড় পদক্ষেপ নিতে সময় লাগলেও পরিবেশ রক্ষা বা বায়ুুদূষণের হাত থেকে রক্ষা পেতে ছোট ছোট পদক্ষেপগুলো নেয়া যেতে পারে। যেমন- গাছ লাগানো যেতে পারে, সড়কে পানি ছেটানো, সকালে নিয়মিত ঝাড়ু দেয়া নিশ্চিত করতে হবে। তবে বায়ুদূষণের হাত থেকে নগরবাসীকে রক্ষার জন্য কঠোরভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে তা প্রয়োগের বিকল্প নেই।

(ঢাকাটাইমস/১৪ফেব্রুয়ারি/ডিএম)