ভালোবাসার রঙ মাখানো গ্রাম

প্রকাশ | ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ১৪:২০ | আপডেট: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ১৪:২২

ইমতিয়াজ উল ইসলাম, সাভার

ভালোবাসা, পবিত্রতা আর সৌন্দর্য্যের প্রতীক ফুল। আর ফুল বলতে আমরা অনেকটা গোলাপকেই বুঝি। সবুজ বাগানের মাঝে লাল টকটকে গোলাপের সৌন্দর্য্য কার না মনকে বিহ্বল করে তোলে। বাড়তি পাওনা হিসেবে সেই ভালোবাসার প্রতীক গোলাপ ফুলের লাল রঙ যদি দিগন্ত বিস্তৃত হয় তাহলেতো কথাই নেই। এমনি লাল গোলাপের চাদরে মোড়ানো এক গ্রাম সাভারের বিরুলিয়া। গ্রামটির শত শত হেক্টর জায়গাজুড়ে বিস্তৃত তাজা গোলাপ ফুলের নিখাদ সৌরভ ও নান্দনিকতা, যা মন কেড়ে নেয় সকলের। এ যেন ভালোবাসার প্রতীক গোলাপের লাল রঙে মাখানো এক গ্রাম।

বিশ্ব ভালোবাসা দিবস ঘনিয়ে আসার আগেই দর্শনার্থী ও গণমাধ্যমগুলোর কাছে কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয় গোলাপ গ্রাম খ্যাত রাজধানীর নিকটবর্তী সাভারের বিরুলিয়া। প্রতিদিন শত শত দর্শনার্থী তরুণ-তরুণীসহ নানা বয়সের মানুষ এখানে গিড় করেন ভালোবাসার রঙ গোলাপকে একান্তে দেখতে। বিশেষ করে প্রিয়জনদের সঙ্গে ভালোবাসার পরখ নিতে তরুণ-তরুণীরা ছুটে আসেন গ্রামটিতে। সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত ঘুরে বেড়ান গোলাপ বাগানের মেঠোপথ ধরে। তরুণীরা মাথায় গোলাপ ফুলের তৈরি রিং আর দু’হাত ভরে গোলাপ নিয়ে মেতে উঠছেন ফটোশেসনে। আর বাগান থেকে প্রিয়জনকে তাজা ফুল কিনে উপহার দিতে পেরে দারুণ উচ্ছ্বসিত দর্শনার্থীরা।

শুধু যুগলরাই নয়, পরিবার ও বিশ্ববিদ্যালয় পড়–য়া শিক্ষার্থীদের অনেকেও চিত্তবিনোদনের জন্য বেছে নিয়েছেন এই গোলাপ গ্রাম। পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমকর্মীরা প্রায় প্রতিদিনই গোলাপ গ্রামের সৌন্দর্য্যকে তুলে ধরতে চলে আসেন এখানে।

ঘুরে দেখা গেছে, বিরুলিয়া ইউনিয়নের কমলাপুর, মোস্তাপাড়া, সাদুল্ল্যাহপুর, শ্যামপুর, আকরানসহ প্রায় বিশটি গ্রামে ব্যাপক পরিসরে গোলাপ চাষ হয়ে থাকে। মেরিন্ডা, হাজারি, লিংকন, পাপা মিলন, বধূয়া বা হলুদ ও সাদা গোলাপের চাষ হয় এখানে। তবে মেরিন্ডা বা লাল গোলাপের চাষই বেশি।

গোলাপ গ্রামে ঘুরতে আসা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তানজিম তাসনিমা জানান, অনেক দিন ধরে পরিকল্পনার পর তারা কয়েকজন সহপাঠী মিলে গোলাপ গ্রামে ঘুরতে এসেছেন। এখানে এসে তাদের অনেক ভালো লাগছে। শহরের যান্ত্রিকতা থেকে বেরিয়ে এমন লাল টকটকে গোলাপ ফুলের বিস্তৃত বাগানে এসে তারা অভিভূত। যতদূর চোখ যায় লাল গোলাপের নান্দনিকতা আর সৌরভ মোহিত করেছে তাদের।

এই এলাকার ফুল চাষি আমজাদ হোসেন বলেন, প্রতিদিন শত শত দর্শনার্থী দূর দূরান্ত থেকে তাদের বাগানগুলোতে গোলাপ ফুলের অপরূপ সৌন্দর্য্য দেখতে দলবেঁধে আসেন। দিনভর ছবি তুলে ও খেতের মেঠো পথ ধরে ঘুরে বেড়ান এসব দর্শনার্থীরা। তবে বিপত্তি আসে মাঝে মধ্যে তারা বাগানের ভেতর প্রবেশ করেন। এতে করে ব্যবসায়িকভাবে কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হন তারা। তাই সরকারি উদ্যোগে যদি দর্শনার্থীদের দেখভাল করা হয় তাহলে একদিকে যেমন দর্শনার্থী বাড়বে, তেমনি তারাও ক্ষতিগ্রস্ত হবেন না বলে দাবি তাদের।

বিরুলিয়ার ফুল চাষি সমিতির আহ্বায়ক মুহাম্মদ নাসির জানান, তাদের গ্রামে সড়কের পাশে, বাড়ির সামনে এমনকি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনের সব জায়গাতেই গোলাপ চাষ হচ্ছে। শুধু যে ব্যবসায়ীদের দৃষ্টি এ গ্রামটিতে তা নয়, গোলাপের গ্রামগুলোর সৌন্দর্যের কথা সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। ফলে প্রতিদিনই ঢাকাসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে মানুষ এসে ভিড় জমাচ্ছেন গ্রামের এসব বাগানগুলোতে।

সাভার উপজেলা কৃষি অফিসার নাজিয়াত আহমেদ জানান, সাভারের বিরুলিয়া গ্রামে প্রচুর গোলাপ চাষ হওয়ায় দিন দিন দর্শনার্থীদের কাছে গ্রামটি জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। সবুজ বাগানের মাঝে লাল টকটকে গোলাপ আর মেঠো পথ নজর কাড়ে সকলের। ফুলের রানী গোলাপের দিগন্তজোড়া সমারোহের কারণে এই গ্রাম ইতোমধ্যেই ‘গোলাপ গ্রাম’ নামে পরিচিতি লাভ করেছে।

ঢাকাটাইমস/১৪ফেব্রুয়ারি/আইআই/এমআর