শহিদুল ইসলাম: সৃষ্টিশীল সাহিত্যানুরাগী

প্রকাশ | ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ২২:৫৩

মোশারফ হোসেন

শহিদুল ইসলাম বর্তমান সময়ে একজন অগ্রগণ্য উদীয়মান তরুণ লেখক। তিনি একাধারে লেখক, শিক্ষক, প্রাবন্ধিক, কলামিস্ট ও সাহিত্যিক। দেশ-বিদেশের  নানা পত্র-পত্রিকায় বহু প্রবন্ধ লিখেছেন বিভিন্ন সময়ে।

এশিয়ান ইউনির্ভাসিটি অব বাংলাদেশের সাবেক জনসংযোগ কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম একসময় মাসিক মানবাধিকার খবর পত্রিকার সহকারী সম্পাদক ছিলেন। বর্তমানে তিনি সরকারি ইস্পাহানী কলজের দর্শন বিভাগের প্রভাষক হিসেবে কর্মরত।

সাহিত্য সাধনার স্বীকৃতিস্বরূপ খুলনা বিভাগে শ্রেষ্ঠ সাহিত্যিক হিসেবে ‘রকি সাহিত্য পুরস্কার (২০১১)’ এবং ‘কবি নজরুল সাহিত্য সম্মাননা (২০১৩)’ অর্জন করেন তিনি। দর্শনের ছাত্র শহিদুলের লেখালেখি ও পাঠের আগ্রহের বিষয় সাহিত্য, সমাজ, বিজ্ঞান, ধর্ম, সংস্কৃতি প্রভৃতি ।

একজন তরুণ শক্তিমান লেখক শহিদুল ইসলাম সংজ্ঞা দিয়ে বোধ্য করেছেন প্রজ্ঞা ও জ্ঞানকে। তার লেখায় দেশ, জাতি, জাতীয়তাবাদ, স্বদেশপ্রেম, সমসাময়িক নানা বিষয়ের উপজীব্য উঠে এসেছে। সমাজের উপস্থিত বিষয়গুলো নজর এড়ায়নি তার। সেসব তিনি সাবলীলভাবে তার স্বকীয় লেখনীর কারিশমায় ফুটিয়ে তুলেছেন নান্দনিকভাবে। তার রচনার প্রতিটি চরণ বিবেককে জানিয়ে দেয়- জাগো, সবাইকে জাগাও। তিনি যুদ্ধ করেন লেখনীর মাধ্যমে।

শহিদুলের ‘মূল্যবোধ ও মানবতা’ বইটির ভূমিকায় তার সম্পর্কে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের অধ্যাপক ড. আমিনুল ইসলাম মতামত দিয়েছেন এভাবে-

‘...এই উভয়বিধ চেতনার উদ্বোধন ও অনুশীলন বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস। এ কথা ঠিক শহিদুল ইসলাম লেখক হিসেবে এখনো নবীন এবং তার রচনার সংজ্ঞা সামান্য। কিন্তু এর মধ্যে তার যে কয়টি লেখা প্রকাশিত হয়েছে, তাতে আমি আন্তরিক অঙ্গীকার, তীক্ষ্ন বিচারশীলতা ও সংস্কারধর্মী মানসিকতার উপলব্ধি লক্ষ করেছি।’

‘মূল্যবোধ ও মানবতা’ বইতে যুদ্ধ সম্বন্ধে আইনস্টাইন ও ফ্রয়েডের ঐতিহাসিক চিঠি প্রবন্ধে শহিদুল ইসলাম সময় উপযোগী নিগূঢ় সত্য শিক্ষার উৎস হিসেবে প্রকৃতির শিক্ষাই যে আসল শিক্ষা সেটি তুলে তুলেছেন অত্যন্ত সুনিপুণভাবে।

লেখক শহিদুল ইসলামের জাতীয় দৈনিকে শতাধিক প্রবন্ধ ও কলাম প্রকাশিত হয়। তার ৯টি গ্রন্থের মধ্যে আছে- ‘মূল্যবোধ ও মানবতা’ (২০০৫), ‘নতুন শতকের উদ্বোধন’ (২০১১), ‘সমাজ জীবন ও সংস্কৃতি’ (২০১৭), ‘গড়ৎধষ ঈৎরংরং’ (২০১৮), ‘সত্যের সন্ধানে’ (২০১৯), ‘৩০ মনীষীর জীবনদর্শন’ (২০১৯), প্রকাশিতব্য গ্রন্থের মধ্যে আছে ‘মূল্যবোধ ও মানবতা’ ২য় খণ্ড ,   ইসলাম ও মানবতাবাদ’, ‘স্বাধীনতা সমাজ ও বুদ্ধিবৃত্তি’ ।

ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় দর্শন বিভাগ অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন স্মরণিকায় ২০১৮ ও ২০২০ সালে দুটি প্রবন্ধ প্রকাশিত হয় শহিদুলের। বিজ্ঞান সম্পর্কিত প্রবন্ধগুলো নবীনবিজ্ঞানী পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।

লেখকের লেখার বিষয়গুলো বুদ্ধিদীপ্ততাসম্পন্ন, সৃষ্টিশীল। ভাষাগত মাধুর্যতার অবয়বে সামাজিক সমস্যার অতি কাছে গিয়ে শক্তিশালী রূপে প্রকাশ ঘটিয়েছেন। খ্যাতি বা পরিচিতির বাহনে সওয়ার হননি কখনো। বরং বোধ-বিবেচনাকে কাজে লাগিয়ে ভেতরের জাগ্রত বিবেক সঠিকভাবে পরিচালনা করে সাহিত্যচর্চা ও গবেষণা করেন তিনি।

১৯৭৮ সালের ৯ সেপ্টেম্বর সাতক্ষীরার কলারোয়া থানার বহুড়া গ্রামের জন্ম নেওয়া শহিদুল ইসলাম ছাত্রজীবনে স্কাউট ও বিএনসিসির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। বাবা আব্দুল করিম গাজীর ছয় সন্তানের মধ্যে তিনি চতুর্থ।

লেখক বিশ্বাস করেন মেহনত থেকে সব শিক্ষার উৎস। আর এই শিক্ষা থেকে তিনি লেখেন দেশ ও দেশের মানুষের জন্য। লেখকের ভাষায়, ‘আমি লিখব দেশ ও দেশের মানুষের কথা ভেবে, সমাজের প্রগতির পরিবর্তনের জন্য মা-মাটি ও শিকড়কে অবলম্বন করে।’

[এই প্রবন্ধের লেখক: প্রভাষক, সরকারি ইস্পাহানি কলেজ, কেরানীগঞ্জ, ঢাকা।]