মার্কিনি গরুর দুধে আমিষ, তাই ছাড়পত্র পাচ্ছে না ভারতে

প্রকাশ | ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ১১:৩৬

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

‘গোমাতাকে হতে হবে খাঁটি নিরামিষাশী। তবেই গোদুগ্ধ পবিত্র থাকবে। গোমাতা যদি নিজেই আমিষাশী হয়ে যায়, তাহলে তার দুধও আর নিরামিষ রইল না! আমেরিকান গরুর দুধ সম্পর্কে এমনই বক্তব্য ভারতীয় সংঘের। আমিষ-নিরামিষ দুধের এই বিবাদেই ডোনাল্ড ট্রাম্পের দেশের গরুর দুধ ভারতে ঢোকার ছাড়পত্র পাচ্ছে না। ফলে ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভারত সফরের সময় দু’দেশের বাণিজ্য চুক্তির সামনেও প্রশ্নচিহ্ন ঝুলছে।

ভারতের সঙ্ঘ পরিবারের নেতারা জানিয়ে দিয়েছেন, যজ্ঞে গরুর দুধ আহুতি দিতে হয়। পুজোতেও গরুর দুধ কাজে লাগে। হিন্দুদের কাছে গরুর দুধ নিরামিষ। কিন্তু আমেরিকায় গরুকে আমিষ খাওয়ানো হয়। অন্য প্রাণীর অঙ্গপ্রত্যঙ্গ, রক্তমাংস খাইয়ে গরুকে হৃষ্টপুষ্ট করে তোলা হয়। তাই গরু আমিষ খেলে তার দুধও আমিষ হয়ে যায়। আমিষ দুধ পুজো বা যজ্ঞে কাজে লাগবে না। নিরামিষভোজী হিন্দুরাও আমিষ গোদুগ্ধ মুখে তুলতে পারবেন না।

সঙ্ঘ পরিবারের এই ‘বাণী’ অক্ষরে অক্ষরে পালন করে মোদি সরকার আমেরিকাকে জানিয়ে দিয়েছে, ভারতে আমিষভোজী গরুর দুধ বা অন্যান্য ডেয়ারি পণ্য পাঠানো চলবে না।  অন্যদিকে আমেরিকা অনেক দিন ধরেই চাইছে, তাদের দুধ ও ডেয়ারি পণ্যের জন্য ভারতের বাজার খুলে যাক। কিন্তু মোদি সরকার আমিষাশী গরু নিয়ে আপত্তি তোলায় ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে মোদী সরকারের বাণিজ্য চুক্তি হবে কি না, তা নিয়েই প্রশ্ন।

সঙ্ঘ পরিবারের স্বদেশি জাগরণ মঞ্চর সাফ কথা, আমেরিকাকে লিখিত ভাবে জানাতে হবে, ভারতে যেসব গরুর দুধ পাঠানো হবে, তাদের শুধু নিরামিষ খাবারই খাওয়ানো হয়। স্বদেশি জাগরণ মঞ্চের যুগ্ম-আহ্বায়ক অশ্বিনী মহাজন বলেন, ‘এ দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ধর্মবিশ্বাসে আঘাত লাগে, এমন কোনো পণ্যের জন্য দেশের বাজার খুলে দেয়ার বিরোধিতা করব আমরা।’ এছাড়া দেশের চাষি ও পশুপালকদের রুটিরুজির প্রশ্নও এর সঙ্গে জড়িত বলে তার যুক্তি।

ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রের খবর, আমেরিকায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ‘হাউডি মোদি’র সময়ও বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে দর কষাকষি হয়েছিল। তখনও ভারত শর্ত রাখে, আমেরিকার আমিষাশী গরুর দুধ বা সেই দুধ থেকে তৈরি কোনো কিছুই ভারতে ঢুকতে দেয়া হবে না। তাই সে সময়ও বাণিজ্য চুক্তি সই হয়নি।

অশ্বিনী বলেন, ‘আমেরিকা চাইছে ভারত এই শর্ত তুলে নিক। কিন্তু আমেরিকাকে বুঝতে হবে, ওদের এই দাবি শুধু অন্যায্য নয়। ধর্মীয় কারণে এই দাবি মেনে নেয়া যায় না।’

দুধ উৎপাদনে ভারত বিশ্বে প্রথম। মুরগি উৎপাদনে চতুর্থ। আমেরিকা, রাশিয়া, চিনের পরেই। বিবাদ বেঁধেছে ‘মুরগির ঠ্যাং’ নিয়েও। আমেরিকা থেকে ভারত মুরগির ‘লেগ পিস’ আমদানি করে ঠিকই কিন্তু ১০০ শতাংশ শুল্ক চাপিয়ে।

ট্রাম্প চাইছেন, ওই শুল্ক কমিয়ে ২৫ শতাংশ করা হোক। কারণ মার্কিনরা আবার মুরগির ঠ্যাং পছন্দ করেন না। এ ব্যাপারে অশ্বিনীর বক্তব্য, ‘ওদের জন্য মুরগির ঠ্যাং আবর্জনা। কিন্তু আমাদের পোলট্রি চাষিদের রক্ষা করতেই ওই শুল্ক বসানো হয়েছে।’ সূত্র: আনন্দবাজার

ঢাকাটাইমস/১৬ফেব্রুয়ারি/এএইচ