বসন্ত বাতাসে দুলছে অজস্র ফুল

প্রকাশ | ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ২২:৫০

ব্যুরো প্রধান, রাজশাহী

প্রকৃতিতে বইছে বসন্তের বাতাস। আর সেই বাতাসে দুলছে অজস্র  ফুল। কাঁটায় ভরা ক্যাকটাস থেকে লাল টুকটুকে গোলাপ, সবই আছে সেখানে। রাজশাহীর ওয়ান ব্যাংক পুষ্পমেলায় শত শত ফুলের এমন সমাহার দৃষ্টি কাড়ছে ক্রেতাদের। ফুলপ্রেমীরা মেলায় আসছেন। ফুল গাছ কিনছেন। তাদের পদচারণায় রাজশাহী মহানগরীর সিঅ্যান্ডবি এলাকায় মনিবাজার চত্বরে জমে উঠেছে এই মেলা।

রাজশাহীর বৈকালী সংঘ এ মেলার আয়োজন করেছে। এতে পৃষ্ঠপোষকতা করছে ওয়ান ব্যাংক লিমিটেড। বৈকালী সংঘ প্রতিবছরই এ মেলার আয়োজন করে থাকে। এবারের আয়োজন ১৫তম। ওয়ান ব্যাংক মেলার সঙ্গে আছে পঞ্চমবারের মতো।

গত ১৪ ফেব্রুয়ারি, যেদিন বিশ্ব ভালোবাসা দিবস সেদিনই মেলা শুরু হয়েছে। সেদিন ঋতুরাজ বসন্তেরও ছিল প্রথম দিন। ফলে মেলার আকর্ষণ এবার সবচেয়ে বেশি।

পুষ্পমেলায় এবার ২৪টি স্টল অংশ নিয়েছে। মেলায় অন্তত ৫০০ প্রজাতির দেশি-বিদেশি ফুল রয়েছে। শুধু গোলাপেরই ২৫০টি প্রজাতি রয়েছে মেলায়। গাঁদা, সূর্যমুখী, ডালিয়া, রজনীগন্ধা, চন্দ্রমল্লিকা, সাদাপাপড়িসহ ডালিয়া, ক্যানচো, ইনসেফিয়া, পেঞ্জি, পানচাটিয়া, পিটুনিয়া, ইফোরভিয়া, স্টোক, ড্যানথাস, ন্যাশটেশিয়াম, ভারবেনা, কসমস, জিপসি, কানেসান, সিনারিয়া, লিলিয়ামের মতো দেশি-বিদেশি নানা প্রজাতির শত শত ফুল এখন মেলা প্রাঙ্গণে দুলছে বসন্ত বাতাসে।

আগামী ১৮ ফেব্রুয়ারি পাঁচ দিনের এই মেলা শেষ হবে। তাই মেলায় এখন ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড়। রবিবার সকালে মেলায় এসেছিলেন গোলাপপ্রেমী বিপাশা চৌধুরী। নগরীর টিকপাড়া এলাকায় এই গৃহিনীর বাড়ি। তিনি জানান, আগের দিন শনিবারও তিনি মেলায় গিয়েছিলেন। আট প্রজাতির ফুলের গাছ কিনে নিয়ে গেছেন। রবিবার আবার এসেছেন শুধু গোলাপ ফুলে গাছ কিনতে। বিপাশা জানান, বাড়ির ছাদে তার ৩২ প্রজাতির গোলাপ রয়েছে। নানা প্রজাতির গোলাপ রাখা তার একটা নেশা।

মেলায় গিয়েছিলেন রাজশাহী বক্ষব্যধি হাসপাতালের প্রাক্তন তত্বাবধায়ক ডা. মনিরুল হক ও তার স্ত্রী সোনালী ব্যাংকের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শিরিন সুলতানা। তারা জানান, ১৩ বছর ধরে তারা ছাদবাগান করেন। প্রতিবছরই এই মেলায় এসে নতুন নতুন প্রজাতির ফুলগাছ সংগ্রহ করেন। এবারও বেশকিছু ফুলগাছ কিনতে এসেছেন।

ডা. মনিরুল হক বলেন, রাজশাহীতে একসঙ্গে এতো ফুলের সমাহার আর কোথাও হয় না। মেলায় আসলেই চোখ জুড়িয়ে যায়। সুবাসে মন বিমোহিত হয়। অসাধারণ।

মেলায় মেসার্স মায়ের দোয়া নার্সারির বিক্রয়কর্মী রনি আহমেদ জানান, তাদের স্টলে প্রায় ৪০০ প্রজাতির ফুলগাছ রয়েছে। এর মধ্যে গোলাপই আছে ১৩৬ প্রজাতি। উদ্বোধনের পর থেকেই মেলায় ক্রেতারা আসছেন। তবে সকালের চেয়ে বিকালে ভিড় বেশি। মেলায় আহম্মেদ ভিলা নার্সারি শুধু গোলাপেরই প্রজাতি এনেছে ২০০টি।

এই স্টলের বিক্রয়কর্মী রাজু আহমেদ জানান, প্রতিদিন প্রায় ২০ হাজার টাকার ফুলগাছ বিক্রি করছেন তারা। ফাল্গুনি নার্সারির মালিক আবদুল বারী জানালেন, তার বিক্রি দৈনিক ১০ হাজার টাকার।

মেলায় টবে ফুটে থাকা ফুলগাছ ছাড়াও শুধু ফুল বিক্রির স্টলও রয়েছে। আছে ফুল গাছের বীজ, সার, কীটনাশক এবং টব বিক্রির দোকানও। সম্রাট নার্সারি অ্যান্ড বীজ ভাণ্ডার এমন স্টলই দিয়েছেন। এর মালিক এমএ সালাম বলেন, মানুষ এখন ছাদ বাগানে ঝুঁকেছেন। বাগানের পরিচর্যাও নিচ্ছেন। তার দোকানে রাসায়নিক ও কীটনাশক সার রয়েছে। কোঁচো কম্পোষ্ট সারও আছে। নতুন মডেলের দৃষ্টিনন্দন টব আছে। নানা প্রজাতির ফুলগাছ রয়েছে। আছে ফুল গাছের বীজও। তারও বিক্রি চলছে বেশ ভালো। সব মিলিয়ে প্রতিদিন তিনি ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকার গাছ, টব, সার ও বীজ বিক্রি হচ্ছে।

আয়োজকরা জানান, নতুন প্রজন্মকে হাজারো প্রজাতির ফুলের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে খেলাধুলার পাশাপাশি প্রতিবছরই এ মেলার আয়োজন করা হয়। এর সঙ্গে থাকে শিশুদের আবৃত্তি, চিত্রাংকন, নৃত্য, দেশের গান ও ছড়ার প্রতিযোগিতার আয়োজন। মেলার সমাপনি অনুষ্ঠানে এর পুরস্কার বিতরণ করা হয়। আগামী ১৮ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় সমাপনী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে। এখন প্রতিদিন সন্ধ্যায় অনুষ্ঠান মঞ্চে চলছে সাংষ্কৃতিক অনুষ্ঠান।

(ঢাকাটাইমস/১৬ফেব্রুয়ারি/কেএম/এলএ)