কোভিড-১৯: হজক্যাম্পে কোয়ারেন্টাইনের দিনগুলো

ইমশিয়াত শরীফ
| আপডেট : ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ১২:৪০ | প্রকাশিত : ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ১১:০১

চীনের উহানে অবরুদ্ধ ছিলাম। গত ২৩ জানুয়ারি থেকে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত টানা ৮ দিন। কোভিড-১৯ ভাইরাসটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ায় দেশটির সরকার ১ কোটি ১০ লাখ মানুষের উহান শহরটি লকড ডাউন করে দেয়। কিছুদিন পর উহানের আশপাশের আরও ১৩টি শহর লকড ডাউন করে দেয়া হয়। পরিচিত শহরটি হঠাৎ করেই অপরিচিত হয়ে উঠে। দোকানপাট বন্ধ, যানবাহন নেই, রাস্তাঘাটে লোকজনের দেখা নেই, জনশূন্য, ভুতুড়ে আতঙ্কের একটি শহরে পরিণত হয়। এদিকে দিন যতই যায় আতঙ্ক আর ভয় বাড়তে থাকে। শূন্যতা আর একাকীত্বে দিনগুলো কাটাতে থাকে।

অবশেষে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় বিশেষ বিমানযোগে আমরা ৩১২ জনের মতো গত ১ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশে আসি। অবরুদ্ধ থেকে এসে আবারও অবরুদ্ধ হলাম। তবে এ অবরুদ্ধ ছিল একটু ভিন্নরকম। সবার চোখেমুখে ছিল স্বস্তি এবং শান্তি। একই ছাদের নিচে ৩১২ জনের বসবাস। যেন বিশাল একটি পরিবার। যে পরিবারের সদস্য ছিল বিসিএস কর্মকর্তা, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকা, ডাক্তার, পিএইচডি গবেষক, ব্যাচেলর-মাস্টার্সের একঝাঁক মেধাবী ছাত্রছাত্রী। ছিল অনেক কিউট বাচ্চা। যাদের মধ্যে ছিল শ্রদ্ধা, ভালোবাসা আর আন্তরিকতা। একসঙ্গে খাবার খাওয়া, নামাজ পড়া, বিকালে ছাদে হাঁটাহাঁটি করা, বসে গল্প করা, তাস, লুডু , দাবা খেলা, টিভি দেখা। সবাই একে অপরকে খুব কাছে থেকে জেনেছে, বুঝেছে, যেন এক মায়ার জালে আবদ্ধ হয়ে গেছে।

প্রথমদিকে যদিও হজক্যাম্প কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনা দেখে সবার মাঝে একধরনের হতাশা আর বিরক্তি কাজ করছিল। কারণ ঢালাওভাবে এক রুমে ৪০-৫০ জনের মতো মেঝেতে বিছানা করে থাকার ব্যবস্থা, ছেলে-মেয়ে ও বাচ্চারা খোলাভাবে থাকা, প্রচুর মশার উৎপাত যা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছিল না। কিন্তু মিডিয়ায় হজক্যাম্পের এ রকম চিত্র তুলে ধরায় একদিনেই হজক্যাম্পের অনেক পরিবর্তন এলো, ছেলে-মেয়েদের পৃথক করা, পরিবারগুলোকে আলাদা করা, মশার ওষুধ দেয়া হলো। এছাড়াও দিনের পর দিন অনেক সুযোগ সুবিধা বাড়ানো হয়েছে।

যদিও প্রথম দিনেই বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কর্মকর্তারা এবং আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক মীরজাদী সেব্রিনা ফিরে আসা বাংলাদেশিদের উদ্দেশে বলেছিলেন আপনারা অনেক উন্নত দেশে ছিলেন, অনেক ভালো ভালো সুযোগ-সুবিধা পেয়েছেন, সেরকম হয়তো আমরা রাতারাতি দিতে পারবো না, বিনয়ের সঙ্গে দুঃখ প্রকাশও করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, সরকারের নিয়ম মেনেই আমাদেরকে সব করতে হচ্ছে। সময়মতো সব পাবেন। আপনাদের একটু ধৈর্য ধরতে হবে।

এরপর দুই দিন যেতে না যেতেই প্রয়োজনীয় সবকিছুই দেওয়ার চেষ্টা করেছেন এখানকার দায়িত্বরত কর্মকর্তারা। দিনে পাঁচ বেলা খাবার, নিয়মিত তাপমাত্রা চেকআপ, প্রয়োজনীয় ওষুধ প্রদান, মাস্ক দেওয়া, সাবান, পেস্ট, তোয়ালে, নামাজের ব্যবস্থা করা, এছাড়াও বিনোদনের জন্য টেলিভিশন, ইন্টারনেট, দাবা, লুডু , কেরামবোর্ড, তাছাড়া সার্বক্ষণিক খোঁজখবর তো রাখছেন।

এ ১৪ দিনে খুব কাছে থেকে দেখলাম, আমাদের আবেগময় মানুষের ভালোবাসা, কত আন্তরিকতা, পাশে থেকে দেখছি কেউ কথা বলছে বাবা-মার সঙ্গে, তার সন্তানের সঙ্গে, প্রিয়জনের সঙ্গে। প্রতিদিন কারও না কারও আত্মীয়স্বজন রান্না করে খাবার পাঠাচ্ছে, সেই খাবার সবাই একসঙ্গে মিলেমিশে খাচ্ছে। সকাল হলে দেখা যাচ্ছে অনেকের আত্মীয়স্বজন একনজর দেখার জন্য হজক্যাম্পের আশপাশে ভিড় করছেন। বৃদ্ধ মা এসেছেন তার সন্তানকে দেখার জন্য, স্ত্রী এসেছে তার স্বামীকে দেখার জন্য। অনেকেই ছাদে ২০০ গজ দূর থেকে আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে হাত নেড়ে অনুভূতি প্রকাশ করছেন।

একদিন দেখলাম জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আলমগীর হোসেন ছাদে দাঁড়িয়ে বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা স্ত্রী এবং তার মেয়ের সঙ্গে কথা বলছেন, ওদিক থেকে মেয়ে ভিডিওকলে বাবাকে বলছে বাবা চলে আসো, আমার কাছে আসো, আমি তোমাকে দেখতে পাচ্ছি। ৩ বছরের মেয়েটির কথা শুনে বাবা আবেগ ধরে রাখতে পারেননি, ধরে রাখতে পারেননি চোখের পানি।

এবার একটু ভিন্ন অভিজ্ঞতায় চলে আসি, ভিন্ন গল্প বলি। অত্যন্ত হৃদয়বিদারক, খুবই মর্মান্তিক, চোখের পানি আমিও ধরে রাখতে পারিনি।

চীন ফেরত এক স্বামী তার স্ত্রীকে ফোন দিয়ে বললো, আমার জন্য একটি জায়নামাজ পাঠিয়ে দিও। ওদিক থেকে স্ত্রী খুব কড়া স্বরে বললো পারবে না। বুঝতে পারলাম, তাদের মাঝে হয়তো আগে থেকে মনমালিন্য আছে বা ঝগড়াঝাটি হয়েছে। আমি অবাক হলাম, দুই দিন পর দেখলাম সে আবার চেষ্টা করছে স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে কিন্তু স্ত্রী ফোন ধরছে না। সে এবার মেয়ের বাবার সঙ্গে কথা বলছে, বাবাও দেখি ছেলেটির কোনো কথার গুরুত্ব দিলো না, উল্টো বলে দিলো মেয়ে ফোন ধরছে না, তুমি ফোন দিচ্ছো কেন। এদিকে ছেলেটির এক বন্ধু তার এই মানসিক অবস্থা দেখে স্ত্রীর অফিসে ফোন দেয় এবং তার সহকর্মীকে বুঝিয়ে বলে তার স্ত্রী যেন তার স্বামীর সঙ্গে কথা বলে। এবার স্ত্রীর ফোন এলো ঠিকই কিন্তু অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ এবং জানিয়ে দিলো সে আর সংসার করবে না।

ছেলেটির কাছে জানতে পারলাম, গত মাসেও স্ত্রীর জন্মদিনে সুদূর চীন থেকে সে তার বন্ধুকে দিয়ে আড়ং থেকে দামি জামা আর কেক কিনে স্ত্রীর অফিসে পাঠায়। সেই স্ত্রী কি করে এত নিষ্ঠুর আচরণ করতে পারে, তার ভিতর কি একটু দয়া-মায়া কাজ করলো না। স্বামী যতই খারাপ হোক না কেন, এরকম পরিস্থিতিতে কোনো স্ত্রী স্বামীর খোঁজখবর নেবে না ভাবতেই অবাক লাগে, আর কোনো শ্বশুরও এই পরিস্থিতিতে ফোন দেবে না কেমন করে হয়। তাহলে কি ভেবে নেবো, করোনাভাইরাস আতঙ্ক কাজ করছে তাদের মাঝে, না পারিবারিক কোনো দ্বন্দ্ব, না মেয়েটি নতুন করে স্বামী ছাড়া অন্য কোনো স্বপ্ন দেখছে।

মানুষ অন্ধ হয়ে গেলে এই ভুলগুলো করে। আল্লাহ তাদের হেদায়াত দান করুক। ফিরে আসুক ছেলেটির ঘরে তার ভালোবাসার মানুষটি।

আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি এত বড় মহামারি ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব থেকে বাংলাদেশ সরকার আমাদেরকে রাষ্ট্রীয় খরচে অর্থাৎ ২ কোটি ৩০ লাখ টাকা খরচ করে বাংলাদেশে ফিরিয়ে নিয়ে এসে বড় মহত্ত্বের পরিচয় দিয়েছে। এ যেন যুদ্ধের ময়দান থেকে ৩১২ জন সৈনিককে উদ্ধার করেছেন। এটা অনেক সম্মানের, অনেক গর্বের। ধন্যবাদ এবং বিশেষ কৃতজ্ঞতা সরকারের কাছে।

আর একটি কথা না বললেই নয়, চীন থেকে আসার পর অনেকের ফোন আসতে থাকে। সবার একই প্রশ্ন আপনি ভালো আছেন তো। জানি সবাই ভালোবাসা ও আন্তরিকতা থেকে জানতে চায়। আবার অনেকের মাঝে ভুল ধারণাও জন্ম নিয়েছে। অনেকে মনে করছেন চীন থেকে আসা আমরা এখানে সবাই কোভিড-১৯ ভাইরাসে আক্রান্ত। এজন্য আমাদের কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। একটা বিষয় পরিষ্কার করতে চাই, আমরা এখানে যারা আছি কেউ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত নই। চীন থেকে আসার সময় তিন জায়গায় আমাদের মেডিকেল চেকআপ করা হয়েছে। এছাড়াও বাংলাদেশেও আমাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়েছে। এবার আসি কেন ১৪ দিন আমাদের কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্টে বলা হয়েছে, এ ভাইরাসের নমুনা ধরা পড়তে কমপক্ষে ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইনে রাখা প্রয়োজন। তাছাড়া বাংলাদেশ দূতাবাস এবং চীন সরকারের ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইনে রাখার চুক্তিতে আমাদের নিয়ে আসা হয়। তাই আমরা সরকারের নিয়ম মেনেই চলছি। সবার কাছে অনুরোধ, নেতিবাচক মনোভাব দূর করে ইতিবাচক মনোভাব তৈরি করুন। সচেতনতা বৃদ্ধি করুন। সবাই সবার পাশে থাকুন।

বাইরে থেকে অনেকেই মনে করছেন, আমরা হজক্যাম্পে অনেক কষ্টে ছিলাম, যেন কারাগার, বন্দিজীবন, কিন্তু না মোটেই না। আমরা এখানে খুব আরামে ছিলাম, কোনোরকম কষ্ট অনুভূত হয়নি। আমরা রাষ্ট্রীয় সম্মানে ছিলাম, কোনো কিছু চাইতে না চাইতে পেয়ে যেতাম, আমার কাছে তো মনে হয় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবনে রাষ্ট্রীয় আতিথেয়তায় ছিলাম। এখানকার দায়িত্বরত সেনাবাহিনী ভাই ও চিকিৎসকদের অশেষ ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা আমাদের সার্বক্ষণিক খোঁজখবর রাখার জন্য।

আগামীকাল শেষ হবে অপেক্ষার প্রহর। ফিরে যাবে সবাই তাদের পরিবারের কাছে। ছেলে ফিরে যাবে তার বাবা-মার কাছে। কোনো বাবাও হয়তো ফিরবে তার ফুটফুটে বাচ্চাটির কাছে। কোনো প্রিয়জন ফিরবে তার প্রিয়জনার কাছে। আনন্দের এক একটি অনুভূতি অপেক্ষা করছে শেষ মুহুর্তটির জন্য। যে যেখানেই ফিরি না কেন, সবাই সুস্থ থাকুক, পরিবার-পরিজনের সঙ্গে সম্পর্ক মজবুত হোক, ভালোবাসার বন্ধনে অটুট থাকুক আনন্দের মুহুর্তগুলো। পাশাপাশি আমরা প্রত্যেকেই যার যার অবস্থান থেকে সচেতন হই। অন্যকে সচেতন করি। ভাইরাসটি সম্পর্কে জানার চেষ্টা করি। বেশি বেশি পেপার পড়ি ও টিভি নিউজ দেখি। বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করি। অহেতুক বিভ্রান্তি না ছড়াই।

আল্লাহর কাছে শুকরিয়া, এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে এই ভাইরাসে কেউ আক্রান্ত হয়নি। ইতিমধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কোভিড-১৯ ভাইরাসটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে। চীনের অবস্থা ভয়াবহ। আজ পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ১৫২৪ এবং আক্রান্তের সংখ্যা ৬৬৫৭৮। আমরা প্রার্থনা করি আল্লাহ আমাদের হেফাজত করুক। পাশাপাশি চীন দেশের জন্যও আমরা দোয়া করি। খুব দ্রুত কোভিড-১৯ ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধ করুক। একটা কথা মনে রাখবেন সৃষ্টির আদিকাল থেকেই মহামারি রোগের প্রচলন। তাই আমরা কোনো দেশকে ছোট করে না দেখি, কোনো জাতিকে খারাপ চোখে না দেখি। মনে রাখবেন পার্শ্ববর্তী দেশ ভালো থাকলে আমরাও ভালো থাকবো। তাই শুভকামনা হোক সবার জন্যই।

ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে, যার নির্দেশনায় এবং প্রচেষ্টায় ৩১২ জন বাংলাদেশিকে উহান থেকে দ্রুত ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছেন। সেই সঙ্গে ধন্যবাদ জানাই চীনের বাংলাদেশ দূতাবাসের সকল কর্মকর্তাকে অক্লান্ত পরিশ্রম এবং সার্বিক সহযোগিতার জন্য। ধন্যবাদ বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃপক্ষকে। ধন্যবাদ বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এবং হজক্যাম্পের দায়িত্বরত সকলকে। কৃতজ্ঞতা দেশবাসীর কাছে দোয়া করার জন্য এবং ধন্যবাদ মিডিয়ার সাংবাদিক বন্ধুদের উহানে আটকেপড়া বাংলাদেশিদের খবর সুন্দরভাবে তুলে ধরার জন্য ও সার্বিকভাবে সহযোগিতা করার জন্য।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আরও একটি অনুরোধ রাখবো, উহানের আশপাশের শহরগুলোতে এখনো প্রায় ৩০০ এর মতো বাংলাদেশি ছাত্রছাত্রী আটকা পড়ে আছে। অবস্থা খুবই করুণ, আতঙ্ক আর শূন্যতায় দিন পার করছে তারা। তারা ফিরে আসতে চায়। আশা করি খুব দ্রুত ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করবেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী।

চীন সরকারের কাছে আমার বিশেষ কৃতজ্ঞতা, কোভিড-১৯ মহামারির সংকট মুহুর্তে যখন নিজের দেশের মানুষকেই বাঁচাতে পারছেন না, প্রতিদিন লাশের পর লাশ গুনতে হচ্ছে, সেই মুহূর্তে আমাদের মতো বিদেশি ছাত্রছাত্রীদের বিশেষ নজর ও দেখভাল করা এবং আমাদের বাংলাদেশে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা এবং সার্বিকভাবে সহযোগিতা করার জন্য। আমি আশা করি চীন সরকারের যে প্রচেষ্টা তাতে দ্রুত এই কোভিড-১৯ সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে সক্ষম হবে।

লেখক: চীন ফেরত পিএইচডি গবেষক

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফেসবুক কর্নার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :