রেলের কামরায় শিব মন্দির ঘিরে ভারতে বিতর্ক

প্রকাশ | ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ২১:০২ | আপডেট: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ২১:০৮

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

ভারতে সদ্য চালু হওয়া একটি ট্রেনের কামরার একটি ছবি ছড়িয়ে পড়েছে, যাতে দেখা যাচ্ছে একটি বার্থে হিন্দুদের দেবতা শিবের ছবি আর তার সামনে দাঁড়িয়ে একজন পুজো করছেন।

ওই ছবিটি টুইট করে এএনআই সংবাদ সংস্থা জানিয়েছে যে কাশী ইন্দোর মহাকাল এক্সপ্রেসের বি-৫ কামরার ৬৪ নম্বর আসনটিতে শিবের একটি ছোট মন্দির গড়া হয়েছে।

দ্বিতীয় একটি টুইটে ওই সংবাদ সংস্থা রেলওয়ে কর্মকর্তাদের উদ্ধৃত করে জানায় যে তাদের পরিকল্পনা রয়েছে যে ওই বিশেষ আসনটি ভগবান শিবের জন্য সবসময়ে সংরক্ষিত রাখতে আর ওই আসনটিতে শিবের একটি মন্দির গড়া হবে।

সংবাদ সংস্থা পি টি আই-ও ভারতীয় রেলের মুখপাত্র দীপক কুমারকে উদ্ধৃত করে জানায় যে ওই আসনটি ভগবানের জন্য সংরক্ষিত থাকবে।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী মহাকাল এক্সপ্রেস নামের এই ট্রেনটি তৃতীয় ট্রেন যা সরাসরি ভারতীয় রেল না চালিয়ে তুলে দিয়েছে তাদেরই অধীনস্থ অন্য একটি সংস্থার (আই আর সি টি সি) হাতে।

ওই ট্রেনের একটি আসন সবসময়ের জন্য শিবের নামে সংরক্ষিত থাকবে আর সেখানে মন্দির গড়া হবে জেনে সামাজিক মাধ্যমে শুরু হয় এ নিয়ে ব্যাপক চর্চা।

হিন্দু-মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের মানুষই এরকম সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেন টুইটারে।

হায়দ্রাবাদের সংসদ সদস্য আসাদুদ্দিন ওয়াইসি প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরকে ট্যাগ করে সংবিধানের মুখবন্ধের একটি ছবি পাঠিয়ে দেন, যেখানে ভারত যে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র, তার উল্লেখ রয়েছে।

নিশান্ত নিশেষ নামে একজন লিখেছেন, "এটা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। রেলওয়ে জাতীয় সম্পত্তি। এটাকে ধর্মীয় বার্তা দেওয়ার জন্য ব্যবহার করা উচিত নয়"।

বালাকৃষ্ণা নামের একজন ওই ছবিটি দেখে মন্তব্য করেছেন "যিনি পুজো করছেন, তিনি আবার দেশলাইও জ্বালাচ্ছেন কামরার ভেতরেই! আগুন লেগে গেলে কী হবে!"

জয় জে -র মন্তব্য "ট্রেন-মন্দির হবে মোদী-আর এস এস হিন্দুত্বের তত্ত্ব ব্যবহার করে রেলওয়েকে ব্রাহ্মণ্যবাদী রেল ব্যবস্থা গড়বেন। তখন রেল স্টেশনগুলিতে শুধুই নিরামিষ খাবার পাওয়া যাবে, জাতপাতের ভাগাভাগি হবে, রজ:স্বলা নারীদের তখন আর ট্রেনে চড়তে দেওয়া হবে না বা স্টেশনেও তারা প্রবেশ করতে পারবেন না।'

অজয় কাপ্পস নামের একজনের প্রশ্ন করেছেন "এই ট্রেনটা কী শুধুই পুরুষদের জন্য? সাত্ত্বিক খাবার? কুর্তা-পাজামা পরতে হবে? জুতো-চপ্পল চলবে না? বাথরুম থাকবে না? দলিত, অন্যান্য পশ্চাদপর জাতি বা মুসলিমদের চড়তে দেওয়া হবে না?"

হিন্দু মন্দিরে রজ:স্বলা নারীদের প্রবেশে নিষেধ রয়েছে। তাই ট্রেনের কামরায় যখন মন্দির গড়া হবে, সেখানেও রজ:স্বলা নারীদের বা মুসলমানদের চড়তে দেওয়া হবে কী না, ব্যঙ্গ করে সেই কথাও তুলেছেন অনেকে।

কদিন আগে গুজরাতের একটি ছাত্রীদের হোস্টেলে পোশাক খুলে পরীক্ষা করে দেখা হয়েছে যে তাদের মধ্যে কে রজ:স্বলা।

সেই প্রসঙ্গ টেনে এনে তানভির আজমি নামে একজন টুইটে জানতে চেয়েছেন "ওই কামরায় ঢুকতে দেওয়ার আগে কী নারীদের পোশাক খুলিয়ে তল্লাশি করা হবে যে তিনি রজ:স্বলা কিনা!"

ইমরান উল্লা খান লিখছেন, 'এটা জনগণের সম্পত্তি। এটা তৈরি হয়েছে, এটিকে রক্ষণাবেক্ষণ করা হয় - সবই করের টাকায়। বহুধর্মের এই সমাজে করের টাকা দিয়ে একটা ধর্মনিরপেক্ষ সরকার জনগণের উপকার করবে, হিন্দু মন্দির বানানোর জন্য নয়।'

তবে অনেকে আবার এই উদ্যোগকে স্বাগতও জানিয়েছেন। আবার তেমনই অনেকে রেল লাইনের ওপরে সারি দিয়ে নামাজ পড়ার ছবি শেয়ার করেছ লিখেছেন "যেখানে খুশি নামাজ পড়তে বসে পড়া যায়! তখন তো কোনও কথা উঠে না!"

রেল লাইনের ওপরে নামাজ পড়ার ছবি কোথাকার, তা এখনও স্পষ্ট নয়।

তবে বিতর্কের মাঝেই ট্রেনটির পরিচালন ব্যবস্থা যাদের ওপরে, সেই আই আর সি টি সি বিবৃতি দিয়ে আগের অবস্থান থেকে সরে এসেছে।

তারা জানিয়েছে, "প্রথমদিনের যাত্রা শুরুর আগে কর্মীরা ওই পুজো করছিলেন। শ্রী মহাকালের ছবিটিও সাময়িকভাবে বসানো হয়েছিল শুধুমাত্র উদ্বোধনী যাত্রার জন্য। এটা একবারের জন্যই করা হয়েছিল। ২০ তারিখ থেকে যখন যাত্রী পরিষেবা শুরু হবে তখন ওই বিশেষ আসনটি পুজোর জন্য সংরক্ষিত রাখা হবে না"।

সূত্র: বিবিসি বাংলা

(ঢাকা টাইমস/১৮ফেব্রুয়ারি/আরআর)