৯৯৯ এর সেবার আনন্দে ঘুমই এলো না!

মাহমুদ রাকিব
| আপডেট : ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ১৩:০২ | প্রকাশিত : ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ১২:৫২
মাহমুদ রাকিব

রাত তখন প্রায় পৌনে ৩টা। বউ বাচ্চা বাসায় নেই। সাভারে, শ্বশুর বাড়ি। বাসায় আমি, মা ও ছোট দুই ভাই। মাঝরাত যেহেতু, সবাই যে যার রুমে গভীর ঘুমে। তো ঘুমের মধ্যে হঠাৎ করেই মনে হলো প্রচণ্ড ঝাঁকুনি দিয়ে পুরো বিল্ডিং কেঁপে উঠেছে। ভূমিকম্প হলে যেমন অনুভূতি হয় অনেকটা সেরকম।

সঙ্গে সঙ্গে ঘুম ভেঙে গেলো। কানে দ্রিম দ্রিম শব্দ আসতে লাগলো। শব্দের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বারবার বিল্ডিং কেপে উঠছিলো। বুঝলাম, বাসার নিচে পুরো রাস্তা কেটে পুনরায় ওয়াসার বিশাল মোটা পাইপ বসানোর কাজ চলছে। যা দেড় থেকে দুই বছর আগেও বসানো হয়েছিলো। তাই মোটা ঢালাই করা রাস্তা ও রাস্তার নিচের পাইপ ভাঙা হচ্ছে। বিছানায় শুয়েই বুঝতে পারলাম বিশাল ক্ষমতা সম্পন্ন এক্সকোভেটর (যা দিয়ে বড় বড় স্থাপনা ভাঙা হয়) দিয়ে এই মাঝ রাতে আশপাশের এলাকার কয়েক হাজার ক্লান্ত নগরবাসীর ঘুম হারাম করে এই অপরিকল্পিত উন্নয়ন চলছে আদাবরের আবাসিক এলাকায়।

কিছুক্ষণ শুয়ে শুয়ে ঝাঁকুনি খাচ্ছিলাম আর অপেক্ষা করতে লাগলাম এই বুঝি শেষ হবে। ১০ মিনিট, ২০ মিনিট আধাঘণ্টা। রাতের নিরবতা ভেঙে এক্সাভেটরের আকাশ বাতাস কাঁপানো শব্দ আর বিল্ডিং কাঁপাকাপি শেষ হয় না। ততক্ষণে যে আমাদের ভবনসহ আশপাশের কয়েকটি রাস্তার হাজারো ভবনের সকল বাসিন্দাদের ঘুম নাই হয়ে গেছে তা নিশ্চিত হয়ে গেলাম। কি করব বুঝতে পারছিলাম না। সকালে আবার অফিস। এদিকে এটাও বুঝলাম, এই দ্রিম দ্রিম শব্দ সকালের আগে আর থামবে না।

বিছানায় উঠে বসলাম। মোবাইলে চেয়ে দেখলাম রাত তখন ৩টা ১৪ মিনিট। মোবাইলে এলার্ম দেয়া রয়েছে ভোর ছয়টায়। কি করবো ভাবছি..... কিন্তু শব্দ আর বিল্ডিংয়ের ঝাঁকুনিতে মাথায় কিছুই আসছে না। এতগুলো মানুষ আমার মতো জেগে আছে ভাবতে ভাবতে হঠাৎ মনে হলো জরুরি সেবা ৯৯৯ এ ফোন দিয়ে দেখি। ফোন দিলাম, ওপাশের ভদ্রলোক গভীর রাতে ভারী কণ্ঠে সুন্দরভাবে সব শুনলেন। বললেন, আপনি লাইনে থাকুন আপনার কলটি আদাবর থানায় ফরোয়ার্ড করে দিচ্ছি। তাদেরকে সব বলুন। ফরোয়ার্ড করলেন, আমি ফের সব বললাম। তারা দুজনই তখন বলছিলেন, সরকারি উন্নয়ন কাজ স্যার। কি-ই বা করার আছে!! রাত ছাড়া কখন করবে? তবে শেষে বললেন, তাও স্যার আমরা বিষয়টি দেখছি কি করা যায়।

৭/৮ মিনিট অপেক্ষা করলাম। বিকট শব্দ থামছে না। বিছানা থেকে নামলাম। ভাবলাম নিচে গিয়ে অনুরোধ করবো কিনা... আবার ভাবি, সরকারি কর্মচারীরা কী আর সাধারণ নাগরিকদের গুরুত্ব দিবে। এসব ভাবতে ভাবতে চশমাটা চোখে লাগিয়ে দরজা খুলে বেলকনিতে গেলাম। গিয়ে তো আমি অবাক!! নিচে তাকিয়ে দেখি একটি বাইকে বসা দুই পুলিশ ভাই। পেছনে আরো একটি পুলিশভ্যান!!

যারা কাজ করছিলো তাদের ডেকে কি সব বলতে লাগলেন তারা। এক্সকাভেটর দিয়ে রাস্তা ভাঙার শব্দে কথোপকথন শোনা যাচ্ছিল না। আশপাশে তাকিয়ে দেখি সব বারান্দাতেই অসহায়ের মতো এই নগরীর বাসিন্দারা নির্ঘুম দাঁড়িয়ে আছেন। আমি তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করছি ওয়াসার লেবাররা পুলিশের কথায় কনভিসড হয় কিনা। দুই পক্ষের কথা চালাচালির ২/৩ মিনিটের মাথায় হঠাৎ এক্সকাভেটর বন্ধ হলো। তখন এক পুলিশ ভাইয়ের কণ্ঠ ভেসে এলো। “এই যে দেখছেন এখন কেমন শান্ত লাগছে। আর এতক্ষণ কেমন ভয়াবহ শব্দ হচ্ছিলো। ওরকম শব্দে ঘুমানো যায়?? সারাদিন কাজ করে মানুষগুলা রাতে একটু ঘুমায়। সকালের আগে মেশিন চালু হলে সব ধরে নিয়ে যাবো।” এই বলে বাইক আর পুলিশ ভ্যানটি ঘুরে চলে গেলো। সব মিলিয়ে আমার ফোন করা থেকে শুরু করে এক্সকাভেটর বন্ধ করে দিয়ে পুলিশের চলে যাওয়া, ১২-১৫ মিনিট!!! আমি অবাক!!!

পুলিশ ভাইয়েরা যখন চলে যাচ্ছিলেন, তখন আশপাশের জানালা দিয়ে তাদের উদ্দেশ্যে নানা কৃতজ্ঞতা সুলভ শব্দ ছুঁড়ে দিচ্ছিলেন উন্নয়নের মহাসড়কে থাকা রাজধানীর অসহায় বাসিন্দারা। আর আমি বারন্দা থেকে নিজের অজান্তেই হাসতে হাসতে বিছানায় গিয়ে মশারির ভিতরে ঢুকলাম। ৯৯৯ এর জরুরি সেবার আনন্দে সকাল পর্যন্ত আর ঘুমই এলো না!

লেখক: গণমাধ্যম কর্মী

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফেসবুক কর্নার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :