দৌলতদিয়ায় আরেক যৌনকর্মীর জানাজা

রাজবাড়ী প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ২০:৫০

এবার দ্বিতীয়বারের মতো রাজবাড়ী গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া পতিতাপল্লীর যৌনকর্মী রিনা বেগম (৫৫) মৃত্যুর পর ধর্মীয় বিধান অনুযায়ী তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। পরে তাকে পল্লীর নিদ্দিষ্ট কবরস্থানে দাফন করা হয়। এখন থেকে আর মৃত্যুর পর কোন যৌনকর্মীর লাশ আর নদীতে ভাসিয়ে বা চাপা মাটি দিয়ে ঢেকে দেয়া হবে না।

বৃহস্পতিবার রাত দশটার দিকে দৌলতদিয়া ইউনিয়নের যৌনপল্লী সংলগ্ন গোরস্থানের মাঠে রিনা বেগমের (৫৫) জানাজা হয়। পরে তাকে যথাযথ ধর্মীয় রীতিতে দাফন করা হয়।

পুলিশ সুপার মিজানুর রহমানের উদ্যোগে গোয়ালন্দ থানা জামে মসজিদের ইমাম আবু বক্কর সিদ্দিক এ জানাজার ইমামতি করেন।

জানাজায় অংশ নেন- পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ফকির আব্দুল জব্বার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসক ও অপরাধ) সালাউদ্দিন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (পুলিশ হেডকোয়াটার্স) ফজলুল করিম, গোয়ালন্দ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আব্দুল্লাহ আল মামুন, দৌলতদিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুর রহমানসহ স্থানীয় অনেকে।

এসময় জানাজার ইমাম আবু বক্কার সিদ্দিকী বলেন,ধর্মীয় রীতিতে প্রত্যেক নর-নারীর মৃত্যুর পর জানাজা দেয়া বা দোয়া করা বৈধ।

পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান জানান, ‘ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি মো. হাবিবুর রহমান স্যার দৌলতদিয়া যৌনপল্লীর মানুষের মানবিক দিকগুলো গুরুত্বের সঙ্গে দেখার নির্দেশনা দিয়েছেন। সেই নির্দেশনা মোতাবেক রাজবাড়ী জেলা পুলিশ কাজ করে যাচ্ছে। ধর্মীয় বিষয়টি কারও ওপর চাপানো ঠিক নয়, তাই গোয়ালন্দ ঘাট থানা মসজিদের ইমামকে দিয়ে এইবারের জানাজার নামাজ পড়ানো হয়েছে। আগামীতে ধর্মীয় রীতি মেনে এই জানাজা ও দাফনের কাজ অব্যাহত থাকবে।’

পুলিশ সুপার আরো বলেন, ‘আল্লাহ সর্বশক্তিমান, আল্লাহ ক্ষমাশীল। একজন মানুষের শেষকৃত্ত হওয়ার যে সুযোগ সামাজিক কারণে সেটি যদি না দেই, তাহলে মানুষ হিসেবে মানুষের প্রতি অবিচার করা হবে। সেই আলোকে প্রথম কোন যৌনকর্মীর জানাজা শেষে আজ দ্বিতীয় যৌনকর্মীর জানাজার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ ধারা অব্যাহত থাকবে।’

প্রসঙ্গত, গত ২ ফেব্রুয়ারি প্রথমবারের মতো গোয়ালন্দ ঘাট থানার ওসি আশিকুর রহমানের উদ্যোগে ধর্মের রীতি মেনে এক যৌনকর্মীর জানাজা ও দাফন হয়। এর আগে এতকাল যৌনকর্মীদের মৃত্যুর পর লাশ নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া বা মাটি চাপা দেওয়ার প্রথা ছিল। সেই প্রথা ভেঙে প্রথমবারের মতো যৌনকর্মী হামিদা বেগমের জানাজা ও দাফন হয়। তবে ইসলাম ধর্মের রীতি মেনে যৌনকর্মী হামিদা বেগমের জানাজা পড়ানো নিয়ে স্থানীয়ভাবে দ্বিমত হওয়ায় দৌলতদিয়া রেলস্টেশন মসজিদের ইমাম গোলাম মোস্তফা এবার রিনা বেগমের জানাজা পড়াননি।

দৌলতদিয়া পূর্বপাড়া যৌনপল্লীর ‘অসহায় নারী ঐক্য সংগঠন’ এর সভানেত্রী ঝুমুর বেগম বলেন, ‘আমরা যারা দৌলতদিয়া যৌনপল্লীর বাসিন্দা, আমরাও তো সমাজের অন্য মানুষের মতোই মানুষ। আমাদেরও আছে অধিকার। আগে এখানে কেউ মারা গেলে তাকে নদীতে ভাসানো বা মাটিচাপা দেওয়া হতো। আমরা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের কাছে দাবি জানিয়েছিলাম- আমাদের এই পল্লীর বেশিরভাগ নারীই মুসলিম। আমরা মারা গেলে যেন আমাদের জানাজা আর দাফন হয়। সেই দাবি মেনে এখন আমাদের জানাজার ব্যবস্থা হয়েছে, এটি ভাগ্যের ব্যাপার। আমরা যে কেউ মারা গেলে থানায় খবর দেই। আমাদের কেউ মারা গেলে এখন প্রশাসনের সহযোগিতায় ধর্মীয়ভাবে দাফনের ব্যবস্থা করা হবে। এসব কাজে এগিয়ে এসেছেন ওসি আশিকুর রহমান। তাকে অনেক ধন্যবাদ জানাই।’

গোয়ালন্দ ঘাট থানার ওসি আশিকুর রহমান জানান, এখন থেকে ধর্মীয়ভাবেই যৌনকর্মীদের দাফন ও সৎকারের ব্যবস্থা করা হবে। পুলিশ এ ব্যাপারে সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে।

(ঢাকাটাইমস/২১ফেব্রুয়ারি/এলএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :