পাটলাই নদীতে আটকা নৌশ্রমিকরা

‘ভাই, ছবিটা দিয়েন- তারা দেখব নে’

প্রকাশ | ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ২২:১৭ | আপডেট: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ২২:২২

জাহাঙ্গীর আলম ভূঁইয়া, সুনামগঞ্জ

‘ভাই, একমাস হলো বউ, ঘর-সংসার রাইখা এখানে নৌকা নিয়ে আটকে আছি। নৌকায় কয়লাবোঝাই করে এখানে এসে যে আটকা পরলাম, কোনভাবেই ছোটার সুযোগ পাচ্ছি না। আমাদের তো মা-বাবা, বৌ-বাচ্চা আছে। তারাও আমাদের অপেক্ষোয় আছে, ছবিটা দিয়ে আপনাদের ফেসবুকে, টিভি আর পত্রিকায় দেখব নে। কতদিন ধরে তাদের কাউকে দেখি না, তারাও দেখে না।’

এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন জুলহাস মিয়া। তার বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগর থানার মাইজহাটি গ্রামে। তিনি আরো বলেন, ‘এভাবে আর কতদিন আটকে থাকতে হবে। স্থানীয় কিছু লোক আছে তারা তো খুশি, আমরা আটকে আছি। কারণ এখানে আটকে থাকার কারণে দ্রব্য মূল্যের দাম বাড়িয়ে ভাল বেচাকেনা হচ্ছে ব্যবসায়ীদের। লাভ তো তাদের হচ্ছে, আর আমরা ক্ষতির শিকার। এতদিন আটকে থাকায় পকেটের টাকাও শেষ। বাড়ি থেকে টাকা এনে চলছি। আল্লাহ ভালো জানেন কবে ছাড়া পাব, নৌকা নিয়ে যাব। ছাড়া পাই আর না পাই- ভাই, ছবিটা দিয়েন ফেসবুক, টিভি আর পত্রিকায় দেখব নে।’

সিফাত অ্যান্ড ঐতিহ্য নৌ পরিবহনের সুকানি তছলিম মিয়ার বাড়ি কিশোরগঞ্জের বাজিতপুরে। তিনিও ২৫ দিন ধরে এখানে আটকে আছেন নৌকা নিয়ে। নৌকায় তাদের জীবনযাপন করতে হচ্ছে।

তিনি জানান,এই নদীর নব্য কমে যাওয়ায় এখানে এই নৌ যানজটে পড়ে মহাবিপদে আছি। বাড়িতে ছেলে-মেয়ে পড়ে আছে তাদের কাছে যেতে পারছি না। তারাও আমাকে দেখতে পারছে না। বাড়িতে অনেক কাজ পড়ে আছে, এখান থেকে গিয়ে তা সারতে হবে। দামি অ্যান্ডড্রয়েড ফোন নেই। ভাই, ছবি তুলে ফেসবুকে, টিভি আর পত্রিকায় দিয়েন- দেখব নে।’

শুধু তছলিম মিয়া, জুলহাস মিয়া নয় সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়নের সোলাইমানপুর বাজারের সামনে থেকে পুকরা পর্যন্ত পাটলাই নদীতে পাঁচ শতাধিক নৌকার মাঝি ও তাদের সহযোগী হাজার হাজার শ্রমিক আটকে থাকায় একেই কথা।

নদীতে নৌ যানজট থাকার কারণে গত কয়েক দিন ধরেই ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার সংবাদকর্মীরা সংবাদ সংগ্রহ করতে যাচ্ছেন, আর তাদের সাথে কথা বলছেন।

শুক্রবার সরজমিনে কথা বলার পর সবাই বলেন- ‘ভাই, ছবি তুলেন আর ফেসবুক, টিভি আর পত্রিকায় দিয়েন, দেখব নে মা-বাবা, বৌ আর ছেলেমেয়েরা।

তাদের সবার দাবি, সরকার যেন দ্রুত এই নদীটি খনন কাজ শুরু করে এই দুর্ভোগ থেকে মুক্তি দেয়। নাহলে ব্যবসায়ী ও নৌ শ্রমিক মালিক এই নদী পথে নৌকা নিয়ে আসবে না।

তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিজেন ব্যানার্জি জানান, নদীর নাব্য সংকটে নৌকার শ্রমিক, মালিক সবাই নৌকা নিয়ে আটকে থাকার কারণে কষ্টে আছে। আমি সব সময় গিয়ে খোঁজ নিচ্ছি। দ্রুত এই সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছি।

প্রসঙ্গত, সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়নের পাঠলাই নদীতে নব্য সংকটে গত একমাসের অধিক সময় ধরে পাঁচ শতাধিক নৌকা কয়লা, চুনাপাথর নিয়ে আটকে আছে। শুধু এই বছর নয়, প্রতিবছর এই দুর্ভোগের স্বীকার হচ্ছেন নৌকামালিক ও শ্রমিকরা।

(ঢাকাটাইমস/২১ফেব্রুয়ারি/এলএ)