আমানতে ভালো ব্যাংক বাছার দায় গ্রাহকের

রহমান আজিজ, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০৮:১৬
ফাইল ছবি

দেশের সার্বিক আর্থিক খাত অনেকটাই ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। সম্প্রতি বেশ কিছু আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে লাল তালিকায় লিপিবদ্ধ করছে নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংক। ইতোমধ্যে পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেডকে অবসায়ন করা হয়েছে।

এছাড়া গ্রাহকদের আমানতের অর্থ ফেরত দিতে ব্যর্থ হওয়ায় ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স সার্ভিসেস লিমিটেড (আইএলএফএসএল) এ স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান হিসেবে সাবেক ডেপুটি গভর্নর খন্দকার ইব্রাহিম খালেদকে দ্বায়িত্ব নিতে প্রস্তাব দিয়েছে উচ্চ আদালত।

এমনকি মোট ঋণের ৯৬ শতাংশ খেলাপি হওয়ায় বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানির (বিআইএফসি) কে অবসায়নের জন্য হাইকোর্টে রিটও করা হয়েছে। রাষ্ট্রায়ত্ব বেসিক ব্যাংক নতুন ঋণ বন্ধ করে দিয়েও ঘুরে দাঁড়াতে ব্যর্থ হয়েছে। এমন হাজারো সমস্যায় জর্জারিত দেশের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান।

অর্থনীতি সংশ্লিষ্ট্ররা জানিয়েছেন, দেশে ব্যাংক ও নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা অনেক। সব ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান সংকটে নেই। তাই ব্যাংকে টাকা রাখতে আমনতকারীদের অবশ্যই সর্তকতা এবং আর্থিক অবস্থা বিচার বিবেচনায় নিতে হবে। অন্যথায় গ্রাহকরা আমানত ফিরে পাওয়ার ঝুঁকিতে থাকবে।

জানা গেছে, সাবেক ওরিয়েন্টাল (বর্তমানে আইসিবি ইসলামী ব্যাংক) নাম ও মালিকানা পরিবর্তন করেও তেমন কোন উন্নতি দেখা যায়নি। বরং প্রতিবছরই লোকসানের পাল্লা ভারি হচ্ছে। এমন সংকটময় পরিস্থিতি মোকাবোলায় সরকার আমানতকারীদের জন্য ‘আমানত সুরক্ষা আইন-২০২০’ এর খসড়া চূড়ান্ত করেছে।

এই আইনে বলা হয়েছে, কোনো ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান অবসায়িত (বন্ধ) হলে প্রত্যেক আমানতকারী সর্বোচ্চ ১ লাখ টাকা পর্যন্ত ক্ষতিপূরণ পাবেন। ওই প্রতিষ্ঠানের কোনো গ্রাহকের একাধিক অ্যাকাউন্টে এক লাখ টাকার বেশি থাকলেও তিনি সর্বোচ্চ ১ লাখ টাকাই পাবেন।

সূত্র জানায়, আমানত সুরক্ষা আইনের খসড়ায় আরও বলা হয়, এর অধীনে কোনো কার্যক্রমের ব্যত্যয় ঘটলে দায়ী ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা বা ফৌজদারি আইনে কোনো ব্যবস্থা নেয়া যাবে না।

আর কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান পর পর দু’বার বীমার প্রিমিয়ামের অর্থ পরিশোধে ব্যর্থ হলে গ্রাহকের কাছ থেকে আমানত সংগ্রহ করতে পারবে না। টানা দু’য়ের অধিক প্রিমিয়াম দিতে ব্যর্থ হলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে অবসায়ন করা হবে।

বর্তমান সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানে প্রায় ৮ কোটি হিসাবধারী গ্রাহক বা আমানতকারী আছেন। তাদের জন্য আমানত সুরক্ষা আইন প্রণয়ন করা হচ্ছে। এর আগে ব্যাংক আমানত বীমা আইন-২০০০ ছিল।

ওই আইনের মাধ্যমে আমানতকারীদের কিছুটা সুরক্ষার দেয়ার বিধান ছিল। সেখানেও ব্যাংক অবসায়ন হলে সর্বোচ্চ ১ লাখ টাকা দেয়ার বিধান রয়েছে। সে আইনটি রহিত করে নতুনভাবে আমানত সুরক্ষা আইনের খসড়া তৈরি করেছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা টাইমসকে বলেন, আমানতকারীদের আমানতের দিক বিবেচনা করে আইনটি যুগোপযোগী করা হচ্ছে। অনেক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। তবে অধিকাংশের আর্থিক সূচক খুব বেশি ভালো নয়। গ্রাহকদের সুরক্ষা দিতে আইনটি আরও শক্ত করার উদ্যোগ নিয়েছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ।

এই আইনটি গ্রাহকদের জন্য কতটা কল্যানকর হবে জানতে চাইলে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর ঢাকা টাইমসকে বলেন, গ্রাহকদের জন্য এটা অবশ্যই ক্ষতিকর।

তিনি বলেন, ‘এ আইন যুক্তরাষ্ট্র, ভারতসহ পৃথিবীর অনেক দেশেই আছে। আমাদের দেশেও আগে থেকে আছে। তবে এটা মোটেও বড় বিনিয়োগকারীদের জন্য কল্যানকর নয়। যদি কেউ ৫০ লাখ টাকা রাখে তিনি সে এক লাখ টাকা পাবেন। বাকি ৪৯ লাখ টাকা ক্ষতি হবে তার। সরকার যদি ১ লাখ থেকে ২ লাখে নিয়ে টান ক্ষতিপূরণ তবে ৪৮ লাখ টাকা ক্ষতি হবে সে আমানতকারীর। তাই এ আইন বিনিয়োগকারীদের জন্য কল্যাণকর নয়।

তিনি আরো বলেন, ‘সরকার ও নিয়ন্ত্রণ সংস্থাকে গ্রাহক আমানত সুরক্ষার জন্য স্বদিচ্ছা থাকতে হবে। যেমন দুর্বল প্রতিষ্ঠানে প্রশাসক নিয়োগ দেয়া, পরিচালনা পর্ষদ ভেঙ্গ পুর্ণগঠন করা ইত্যাদি।’

অপরদিকে গ্রাহককে ব্যাংকে টাকা জমার ক্ষেত্রে অবশ্যই ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সার্বিক খোঁজ-খবর নিয়ে বিচার বিশ্লেষণ করে রাখতে হবে। কারণ দেশের সব ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান দুর্বল বা খারাপ না। ভাল অনেক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সেটা খোঁজ খবর নিয়ে রাখতে হবে। অন্যথায় ব্যাংক দেউলিয়া হলে ক্ষতি মেনে নিতে হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘এ ধরনের বিধান কেন্দ্রীয় ব্যাংকে আগেই ছিল। কোনো ব্যাংক অবসায়ন হলে ওই ব্যাংকের গ্রাহকদের ক্ষতিপূরণ ১ লাখ টাকা দেয়ার বিধান ছিল। এ আইনটি মূলত ছোট আমানতকারীদের সুরক্ষা দেয়ার জন্য। একজন গ্রাহকের ১ কোটি টাকা ব্যাংকে থাকলে সে ক্ষেত্রে অবসায়ন হলে ওই গ্রাহকের পুরোটা ক্ষতি হচ্ছে।’

সুরক্ষা আইনে গ্রাহকের লাভক্ষতির বিষয়ে প্রশ্নে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক এই গভর্নর বলেন, ‘বড় গ্রাহকরা তার টাকার সুরক্ষার জন্য নিজেরা কিছু করছেন না। এটি ব্যাংকের পক্ষ থেকে বীমা করে করা হচ্ছে। যে কারণে বড়দের নিয়ে ব্যাংকগুলো সেভাবে ভাবছেও না।’

(ঢাকাটাইমস/২৩ফেব্রুয়ারি/ডিএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিশেষ প্রতিবেদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :