উপকারের চেয়ে ক্ষতিই যেখানে বেশি

সদর উদ্দীন লিমন
| আপডেট : ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ১০:৫১ | প্রকাশিত : ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ১০:৪৭

বর্তমান সময়ে আমরা এমন এক যুগে বসবাস করছি যেখানে রয়েছে তথ্যের অবাধ প্রবাহ। তথ্যের প্রবাহ অবাধ হওয়ার পেছনে বড় অবদান সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের (ফেসবুক, টুইটার, ইউটিউব ইত্যাদি)। এখন আর মানুষকে খবর পেতে দৈনিক পত্রিকার জন্য অপেক্ষা করতে হয় না। এখন যখন ঘটনা ঘটছে ওই মুহূর্তেই মানুষ জেনে যাচ্ছে। জানার জন্য আর দৈনিক পত্রিকা পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে না। আপনি এখন চাইলে যেকোনো স্থান থেকেই আপনার স্মার্টফোন ব্যবহার করে পত্রিকা পড়ার পাশাপাশি টেলিভিশনের সরাসরি সম্প্রচারও দেখতে পারেন।

এগুলো পুরো পৃথিবীর মানুষের জন্য অবশ্যই ইতিবাচক। কিন্তু সকলে এটি নিশ্চয়ই জানেন যে, মুদ্রার দুইটি পিঠ থাকে। সেরকম যেকোনো বিষয়ের দুইটি দিক থাকে। একটি হলো ইতিবাচক, আরেকটি নেতিবাচক। সেরকম তথ্য-প্রযুক্তির ছড়াছড়িতে মানুষের যেমন উপকার হচ্ছে তেমনি অপকারও হচ্ছে। দেখা যাচ্ছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বিস্তারে এখন উপকারের চেয়ে ক্ষতির দিকটাই বেশি।

বলা যায়, বর্তমান সময়ে ‘সবাই সাংবাদিক’। কারণ, এখন অনলাইন পত্রিকা এবং ইউটিউব চ্যানেলের ছড়াছড়ি। দেখা যাচ্ছে, সত্য-মিথ্যা যাচাই না করে, আবার যেটি খবর হওয়ার যোগ্য না সেসব বিষয়ও কিছু অনলাইন পত্রিকা এবং ইউটিউব চ্যানেলে ছাড়া হচ্ছে। যাতে করে মানুষ বিভ্রান্তিতে পড়ছে।

অনেক ইউটিউব চ্যানেলে আসলে মৌলিক কোনো খবর নাই। এরা বিভিন্ন ভিডিও থেকে কেটে কেটে এমন কিছু ভিডিও বানায় যাতে মূল বিষয় আড়ালে যায়। মানুষের সামনে বিকৃতভাবে খবর উপস্থাপন করা হয়। এই বিষয়টি খুবই ‘ভয়ানক’। যদি কেউ ভিডিও বানাতে আগ্রহী হন তাহলে মৌলিক ভিডিও অবশ্যই বানাতে পারেন, শিক্ষামূলক ভিডিও তৈরি করতে পারেন। অর্থাৎ, যেগুলোতে সমাজের মানুষের উপকার হবে সেসব কিছু তো করা যেতেই পারে।

বর্তমান সময়ে আরেকটি বিষয় খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। তা হলো টিকটক। এটি ‘আরো ভয়ানক’। এর মাধ্যমে মানুষের বিভিন্ন ভিডিও বা অডিওর বক্তব্যের সাথে গলা মিলিয়ে, একটু অভিনয় করে নতুন একটি ভিডিও মানুষের সামনে উপস্থাপন করা হচ্ছে। এর মূল উদ্দেশ্য মানুষকে একটু হাসানো। তাছাড়া কিছুই না। এতে শিক্ষণীয় কিছুই নেই। সবচেয়ে বড় ‘অপরাধমূলক’ বিষয়টি হচ্ছে, এসব ভিডিও যারা বানাচ্ছেন তারা যার বক্তব্যকে ব্যবহার করছেন তার অনুমতি নিচ্ছেন না। এদের কাজ আরেকজনের বক্তব্যকে একটু ব্যঙ্গভাবে মানুষের সামনে উপস্থাপন করা। এর মধ্যে শিক্ষণীয় কিছু না থাকলেও তরুণ সমাজ সারাক্ষণ এর মধ্যে মজে থাকছে। যার ফলে নিজের আসল কাজ থেকে তারা দূরে থাকছে।

বর্তমান সময়ে মানুষের হাতে হাতে স্মার্টফোন, ল্যাপটপ, ডিএসএলআর ক্যামেরা ইত্যাদি। যারা স্মার্টফোন ব্যহার করেন তাদের মধ্যে হাতে গোনা দুয়েকজন বাদে প্রত্যেকেই সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলো ব্যবহার করেন। এখন সমাজে কেমন জানি একটা ট্রেন্ড চালু হয়েছে যে, ফেসবুক, টুইটার বা ইউটিউব প্লাটফর্মকে ব্যবহার করে মানুষ অন্যের সমালোচনা করতে হবে। গঠনমূলক সমালোচনা তো করতে বাধা নেই। কিন্তু সমালোচনা করতে গেলেও তো যোগ্যতা লাগে। অনেক ক্ষেত্রে লক্ষ্য করা যায়, কোনো নির্দিষ্ট বিষয়ে ন্যূনতম জ্ঞান না থাকা সত্ত্বেও মানুষ তার সমালোচনা করছে। শুধু তাই নয়, অনেকে কুরুচিপূর্ণ ভাষায়ও এই কাজ করে থাকেন।

অনেকে ফেসবুক-ইউটিউবে নিজেকে এমনভাবে উপস্থাপন করেন যেন, তিনি সব বিষয়ে জানেন। অথচ তার খোঁজ নিলে দেখা যাবে যে, ‘হি/শি ইজ গুড ফর নাথিং’। সম্প্রতি এমন বেশ কিছু খবর পাওয়া গেছে যে, শুধু ফেসবুকে গুজব ছড়ানোর কারণেই অনেক বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে গেছে। আবার হরহামেশাই লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, ১৮ বছরের নিচে বয়স এমন অনেক স্কুলপড়ুয়া শিক্ষার্থীরাও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যুক্ত হয়ে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

এই লেখাটি লেখার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, দয়া করে কেউ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে এমন কোনো গুজব সৃষ্টি করবেন না যাতে করে সমাজের ক্ষতি হয়। ১৮ বছরের নিচে কেউ যেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার না করে সেদিকেও সরকাকে নজর দিতে হবে। আর ইউটিউব চ্যানেল যারা ব্যবহার করেন তাদের প্রতি অনুরোধ থাকবে, মানহীন কোনো ভিডিও না বানিয়ে মৌলিক ভিডিও বানানোর প্রতি গুরুত্ব দিন।

লেখক: ক্রীড়া সাংবাদিক

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :