চিপসের নামে কী খাচ্ছে শিশুরা?

কামরুজ্জামান বাবলু
| আপডেট : ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ১৩:৪১ | প্রকাশিত : ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ১২:৩৫
কামরুজ্জামান বাবলু

গতকাল শনিবার রাত নয়টা। হঠাৎ কাঁধের বোঝাটা নিয়ে মতিঝিলের ডিএসসি বিল্ডিংয়ের নিচে দাঁড়ালেন দুজন লোক। দুজনেরই সারা শরীর যেন ময়লার ভাগাড়। একজন আনজব আলী ও আরেকজন কাশেম মিয়া। বুঝলাম গরিব মানুষ। কিন্তু তার সঙ্গে তো শরীরে এত ময়লা নিয়ে চলাফেরার রসায়নটার মিল কি। কাঁধ থেকে নামানো সোনালী রংয়ের জিনিসগুলো আলো-আঁধারিতে চকচক করছে। জানার আগ্রহ বেড়ে গেল।

কি জিনিস এগুলো ভাই? প্রশ্ন করতেই বললেন- মামা এগুলো চিপস, বাচ্চাদের জন্য। চিপসের সঙ্গে কি? আবারও বললেন- এগুলা খেলনা। এত রাতে এগুলো নিয়ে কই যাচ্ছেন? এক প্রশ্নের জবাবে মিললো অনেক উত্তর। আনজব আলী এগুলো রাজশাহী পাঠাবেন। তাই বাসের জন্য অপেক্ষা করছেন। জানালেন রাজধানীর দনিয়ায় তাদের কারখানা। ময়দার সঙ্গে পচা গলা কলা মিশিয়ে তারা বানান এসব চিপস। পরে চাহিদা অনুয়ায়ী সেগুলো পাঠান সারাদেশে।

পাতলা পলিথিনে কোনোভাবে প্যাকেট করে বাজারজাত করা হয় এসব শিশুখাদ্য। বাচ্চাদের কাছে টানতে সঙ্গে দেয়া হয় প্লাস্টিকের খেলনা। আনজবের ময়লা শরীরের কথা জিজ্ঞাসা করতেই সোজাসাপটা উত্তর- আমরা কারখানায় কাজ করি, নিজেরাই কষ্ট করে এগুলো বানাই। এত পরিস্কার থাকার সময় কই পাবো? যা বুঝার বুঝলাম।

এখন বিষয় হচ্ছে চিপসের নামে কি খাচ্ছে আমাদের শিশুরা? কোথায়, কি দিয়ে, কিভাবে বানানো হচ্ছে এসব অখাদ্য তার কোনো ঠিকানা কি আমরা জানি? আছে কি কোনো তদারকি? কারা বানাচ্ছে সে তালিকা কি আছে আছে খাদ্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট? হলফ করে বলতে পারি এগুলোর কোনোটিই নেই কর্তৃপক্ষের নিকট।

তাহলে কি দাড়াঁলো? ময়দার সঙ্গে কলার নামে যা মিশিয়ে বানানো এসব চিপস নামের যে বিষ খাওয়ানো হচ্ছে আমাদের কলিজার টুকরা শিশুদের আমরা কি একটিবারও ভাবছি? আমরা কি ভাবছি- চিপসের সাথে খেলনা নামক প্লাস্টিকের ভয়াবহ কেমিক্যাল যে চিপসের মাধ্যমে প্রবেশ করানো হচ্ছে কোমলমতি বাচ্ছাদের তা কি আমরা টের পাচ্ছি? কোনো রকম ফুড গ্রেড ছাড়া পাতলা পলিথিনের বিষাক্ত কেমিক্যাল থেকে যে খাবারগুলোতে বিষ ছড়িয়ে পড়ছে তা কি দেখছি?

এমন হাজারও প্রশ্ন করলে হয়তো একটি উত্তরও পাবেন না আপনি। তাহলে কি করবেন? আসুন, স্বোচ্চার হই এই অরাজকতার বিরুদ্ধে। জনসচেতনতা সৃষ্টি করি। শামিল হই প্রতিবাদের সারিতে। তাতে যদি কোনো একদিন টনক নড়ে কুম্ভকুহরের।

লেখক: গণমাধ্যমকর্মী ও প্রধান নির্বাহী, নিরাপদ খাদ্য ও ভোগ্যপণ্য আন্দোলন, বাংলাদেশ।

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :