বায়ুদূষণে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে ঢাকা

প্রকাশ | ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ১২:৫২ | আপডেট: ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ১৪:৫২

ফিচার প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

রাস্তার ফেলে দেওয়া বর্জ্য ও ময়লা আবর্জনার ওপর দিয়ে যানবাহন চলাচলের ফলে বায়ু দূষণের সৃষ্টি হচ্ছে। সাধারণত খোঁড়াখুঁড়ির মাটি ও অন্যান্য আবর্জনা দ্রুত অপসারণের জন্য পৃথক খাতে খরচ হয়। কিন্তু বিধি মোতাবেক কাজটি হয় না। এছাড়াও ড্রেনের ময়লা আবর্জনা রাস্তার দুপাশে দীর্ঘদিন ফেলে রাখা হয়। ফলে যানবাহন চলাচলের সময় ধুলা-বালি ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ার কারণে ধুলা দূষণের মাত্রা অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায়। ধুলা দূষণে শ্বাসকষ্ট, হাঁপানী, এলার্জি, চর্মরোগসহ নানা জটিল রোগব্যাধি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। ধুলা দূষণে জনদূর্ভোগের পাশাপাশি একদিকে যেমন স্বাস্থ্যগত সমস্যা হচ্ছে তেমনি আর্থিক ও পরিবেশেরও ক্ষতি হচ্ছে। বায়ু দূষণে বছরে ক্ষতি হচ্ছে ২০ হাজার কোটি টাকা।

বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার প্রায় সব জায়গাতেই অধিকাংশ সময় বিভিন্ন সংস্কার কাজের জন্য খোঁড়াখুঁড়ি লেগেই থাকে। যে কারণে মাত্রাতিরিক্তভাবে বাড়ছে ধুলা। দূষিত হচ্ছে বায়ু।

দূষিত বাতাসের শহরের তালিকায় ঢাকা দ্বিতীয় খারাপ অবস্থানে রয়েছে। এ কারণে রাজধানীতে বসবাসরত সকলেই মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছেন।

এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্সে (একিউআই) রোববার সকাল ৮টা ২৭ মিনিটে ঢাকার স্কোর ছিল ২৩০, যার অর্থ হচ্ছে এ শহরের বাতাসের মান ‘খুবই অস্বাস্থ্যকর’ এবং এ অবস্থায় সবাই মারাত্মক স্বাস্থ্য সমস্যার মুখোমুখি হতে পারে।

এছাড়াও এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্সে মঙ্গোলিয়ার উলানবাটর ৪১১ স্কোর নিয়ে প্রথম এবং ভিয়েতনামের হ্যানয় ২২৬ স্কোর নিয়ে তৃতীয় স্থানে রয়েছে।

একিউআই মান ২০১ থেকে ৩০০ হলে স্বাস্থ্য সতর্কতা-সহ তা জরুরি অবস্থা হিসেবে বিবেচিত হয়। এ অবস্থায় শিশু, প্রবীণ এবং অসুস্থ রোগীদের বাড়ির ভেতরে এবং অন্যদের বাড়ির বাইরের কার্যক্রম সীমাবদ্ধ রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে।

বিশ্বে বায়ুদূষণ সবচেয়ে বেশি বেড়েছে ভারত ও বাংলাদেশে। বায়ু দূষণের দিক দিয়ে সবার প্রথমে রয়েছে ভারতের দিল্লি।

রাতদিনের বাতাসের মান নিয়ে তৈরি করা একিউআই সূচক একটি নির্দিষ্ট শহরের বাতাস কতটুকু নির্মল বা দূষিত সে সম্পর্কে মানুষকে তথ্য দেয় এবং তাদের জন্য কোনো ধরনের স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি হতে পারে তা জানায়।

জনবহুল ঢাকা দীর্ঘদিন ধরেই দূষিত বাতাস নিয়ে হিমশিম খাচ্ছে। মূলত নির্মাণ কাজের নিয়ন্ত্রণহীন ধুলা, যানবাহনের ধোঁয়া, ইটভাটা প্রভৃতি কারণে রাজধানীতে দূষণের মাত্রা চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে।

বিশ্বব্যাংক ও পরিবেশ অধিদফতরের এক প্রতিবেদনে ঢাকার বায়ুদূষণের প্রধান কারণ হিসেবে এ শহরের চারপাশে অবস্থিত ইটভাটাকে চিহ্নিত করা হয়েছে। যেসব ক্ষুদ্র কণা (মাইক্রো পলুটেন্ট) বাতাসে মিশে একে দূষিত করে তার ৩৮ শতাংশই আসে ইট ভাটার চিমনি থেকে। অন্যদিকে মোটর যান ১৯ শতাংশ, রাস্তার ধুলা ১৮ শতাংশ, মাটির কণা নয় শতাংশ ও ধাতু গলানোয় সাত শতাংশ মাইক্রো পলুটেন্ট বাতাসে মিশছে।

ঢাকা ও এর আশপাশের ৫৯টি এলাকায় বসবাসকারী প্রায় ছয় লাখ মানুষ সীসা দূষণের ঝুঁকিতে রয়েছেন। গবেষণায় সীসা দূষণের উৎস হিসেবে ব্যাটারি রিসাইক্লিং করা হয়ে এমন ২০টি এলাকা, সীসা গলানো হয় এমন ২৩টি এলাকা, চারটি মাল্টিপল ইন্ডাস্ট্রি বিভিন্ন শিল্প কারখানাকে চিহ্নিত করা হয়েছে।

সীসা দূষণের মারাত্মক স্নায়বিক রোগের কারণ। বিশেষ করে শিশুরা এতে বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকে। ঢাকার কিছু শিল্প এলাকায় মানুষের প্রতি ডেসিলিটার রক্তে ১৪-১৫ মাইক্রোগ্রাম সীসার উপস্থিতি পাওয়া গেছে। রিপোর্টে আরও দেখা যাচ্ছে, এক টন কাপড় উৎপাদনে ওয়াশিং, ডাইং ও ফিনিশিং কারখানাগুলো থেকে ২০০টন দূষিত পানি ছাড়া হয়। ঢাকার আশপাশে এরকম ৭১৯টি কারখানা চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব কারখানার দূষিত পানি নদীতে মিশে স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি করছে।

বাংলাদেশের বায়ু দূষণ দূর করার জন্য অবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। যেমন: ইটভাটার দূষণ নিয়ন্ত্রণে সনাতন পদ্ধতি বাদ দিয়ে প্রযুক্তিনির্ভর ইটভাটা করতে হবে। যানবাহনের কার্বন নিঃসরণমাত্রা পরীক্ষা করে ফিটনেসবিহীন যান চলাচল অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। দীর্ঘ যানজটে আটকে থাকলে গাড়ির ইঞ্জিন বন্ধ রাখতে হবে। শিল্পকারখানায় মনিটরিং জোরদার করতে হবে। নির্মাণকাজে ব্যবহৃত বালু, সিমেন্ট, ইট ইত্যাদি পরিবহন ও মজুতের সময় ঢেকে রাখতে হবে। এ ছাড়াও, নিয়মিত রাস্তা পরিচ্ছন্ন ও ধুলা নিয়ন্ত্রণে পানি ছিটানোর ব্যবস্থা করতে। সড়ক নির্মাণ ও মেরামত এবং সেবাদানকারী সংস্থাগুলোর সমন্বয় করে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি করা; উন্মুক্ত স্থানে আবর্জনা না পোড়ানো।

 (ঢাকাটাইমস/২৩ফেব্রুয়ারি/আরজেড)