বইমেলা জার্নাল

বঙ্গবন্ধুর পাশে কিছুক্ষণ!

হাবিবুল্লাহ ফাহাদ
ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ১৪:৩২ | প্রকাশিত : ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ১৩:৩৪

চেয়ারে বসে আছেন বঙ্গবন্ধু। পেছনে আঁচড়ানো কাঁচাপাকা চুল। কালো ফ্রেমের মোটা চশমার আড়ালে টলটলে দুটো চোখ। বাঁ গালের কালো তিলটার কাছাকাছি ছাঁটা গোঁফ। সব ছাপিয়ে সেই মায়াময় হাসি। সাদা পাজামা-পাঞ্জাবি আর কালো কোট জড়িয়ে বসে আছেন। কাঠের সোফায়। কাঁচের টেবিলটায় রাখা অ্যাসট্রেতে সেই পাইপ। কল্পনার বাতাসে ছড়াচ্ছে তাঁর প্রিয় এরিনমোরের সুগন্ধ। অবিকল যেন তিনি। ফাল্গুন দুপুরে চিকচিকে রোদে উজ্জ্বল হয়ে আছেন। তবে কি তিনিই এসেছেন?

দূর থেকে দেখলে মন থেকে বেরিয়ে আসবে প্রশ্নটি। ওই তো, বঙ্গবন্ধু। তাকিয়ে আছেন, বইমেলায় আসা হাজারো মানুষের দিকে। ছোটো ছোটো বাচ্চারা আপন সুখে হেঁটে বেড়াচ্ছে। কেউবা আবার বাবা-মায়ে হাতে গুজে দিয়েছে হাত। বঙ্গবন্ধু তাদের ডেকে বলছেন, ‘কাছে এসো। দেখিতো কী কী বই কিনলে? বাহ্! অনেক বই তো।’

কাল্পনিক সেই কথার জবাবও আসছে কানে। “হ্যাঁ, অনেক বই। আপনিও তো আছেন। গল্পে গল্পে আপনি! এই যে, দেখুন, গ্রাফিক নোভেল ‘মুজিব’, সুন্দর না?”

সৌম্য দর্শন বঙ্গবন্ধুও সায় দিলেন। ‘হ্যাঁ, তাইতো তাইতো! কতসুন্দর কার্টুন! খুবই সুন্দর।’

শিশুদের কাছে টেনে নিচ্ছেন তিনি। মা-বাবারা সেই মুহূর্ত মুঠোফোনের ফ্রেমে ধরছেন। বড়রাও বাদ যাচ্ছেন না। বঙ্গবন্ধুর পাশে দাঁড়িয়ে হাসিমুখে বন্দি হচ্ছেন ছবির ফ্রেমে। বইতে পড়া, ছবিতে দেখা আর ভরাট কণ্ঠের স্বাধীনতার ডাক শোনা মানুষটির পাশে দাঁড়াতে পেড়েছেন—এর চেয়ে বড় প্রাপ্তি আর কী হতে পারে!

বাংলা একাডেমি চত্বরে ছাত্রলীগের উদ্যোগ ‘মাতৃভূমি’র আয়োজন এটি। স্টলের পাশে বঙ্গবন্ধুর কাটআউটটি রেখেছেন তারাই। ভিন্নধর্মী আয়োজন। একের পর এক মানুষ পাশে দাঁড়াচ্ছেন। ছবি তুলছেন। বাড়ি ফিরছেন বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে কিছু মুহূর্তের স্মৃতি নিয়ে।

কল্পনার ঘোরে তাকিয়ে আছি। অদূরে দাঁড়িয়ে দেখছি আকাশের মতো উদার মানুষটিকে। দেখছি মানুষ তাঁকে কতটা ভালোবাসে। কতটা আপন বলে জানে। সারামেলা ঘুরে ক্লান্ত পা দুটো থির হয়ে যাচ্ছে এখানটায় এসে। শ্রদ্ধায়। ভালোবাসায়।

মাহরুশ নাফাসাত। মা-বাবার হাত ধরে এসেছে মেলায়। কাছ থেকে নিবিড়ভাবে দেখছে বঙ্গবন্ধুকে। তার চোখে অপার বিস্ময়। যে মানুষটার কথা সে শুনেছে বাবা-মায়ের মুখে, পড়েছে বইয়ের পাতায়, তাকে যেন আজ কাছে পেলো। পুলকিত চোখ দুটো, তাই বলছে।

কাছে ডাকলে নাম বললো। কথা হলো আরও। পড়ছে ঢাকার ন্যাশনাল আইডিয়াল স্কুলে। ক্লাস থ্রিতে। বললাম, ‘বঙ্গবন্ধুর পুরো নামটা জানো তুমি?’

বিনয়ী গলায় বলল, ‘হ্যাঁ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।’

একুশে ফেব্রুয়ারির দুপুরের রোদ তখন আরো ঝকমকিয়ে উঠেছে। হঠাৎ গরম পড়েছে। নাফাসাত জানালো, অনেকক্ষণ হয় মেলায় এসেছে। চারটি বই কিনেছে। গল্প-কবিতা-ছড়া। কবিতা পড়তে ভালো লাগে ওর। একজন কবির নাম জানতে চাইলে সময় নিলো না। বলল, ‘কাজী নজরুল ইসলাম।’ বাংলা-ইংরেজি দুই ধরনের বই-ই পড়ে ও। তবে বাংলা পড়ে আনন্দ পায় বেশি।

বললাম, ‘বইকে তুমি বন্ধু ভাবো?’

‘হ্যাঁ, বন্ধুর চেয়েও বেশি।’

‘তোমার বন্ধুরাও কি বই পড়ে?’ জানতে চাইলাম।

‘পড়ে। আমিও তাদের পড়তে বলি।’

নাফসাতের বাবা মামুনুর রহমান। বেসরকারি চাকুরে। বললেন, ‘বইমেলায় এলে অন্যরকম এক ভালোলাগা কাজ করে। ছাত্রজীবনে বন্ধুদের সঙ্গে আসা হতো। এখন স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে আসি। বইয়ের চেয়ে নির্মল বন্ধু তো আর কিছু নেই! সন্তানকে বইয়ের সংস্পর্শে আসার অভ্যাসটা তো বাবা-মাকেই করতে হয়।’

তারা বিদায় নিলেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে ঘিরে থাকা মানুষ কমলো না। নানা বয়সের ছেলেমেয়েরা তখনো পাশে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছে। তাদের চোখেমুখে অপার বিস্ময়। এ বিস্ময়ের কোনো তুলনা হয় না। তেমনই অতুলনীয় বঙ্গবন্ধু।

.......................

২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২০

সংবাদটি শেয়ার করুন

ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :