বিলাসবহুল বাড়ি-গাড়ি, দেশে-বিদেশে বিপুল অর্থ পাপিয়ার
প্রকাশ | ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ১৮:২৯
সদ্য বহিষ্কৃত যুব মহিলা লীগের নেত্রী শামীমা নূর পাপিয়ার নামে রাজধানী ঢাকা ও নরসিংদীতে বিলাসবহুল বাড়ি-গাড়িসহ নামে-বেনামে বিপুল পরিমাণ অর্থের সন্ধান পেয়েছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। রাজধানীর বিভিন্ন পাঁচতারকা হোটেলে নারীদের অনৈতিক কাজে বাধ্য করে অর্থ আয়ের মাধ্যম ছিল তার। এছাড়া, রেলওয়ে ও পুলিশে এসআই পদে চাকরির কথা বলে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নেন তিনি।
রবিবার বিকালে রাজধানীর কারওয়ানবাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে র্যাব-১ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল শাফী উল্লাহ বুলবুল সাংবাদিকদের জানান এসব তথ্য।
এর আগে সকালে রাজধানীর ফার্মগেট ইন্দিরা রোডে পাপিয়ার বাসায় অভিযান চালিয়ে একটি বিদেশি পিস্তল, দুটি ম্যাগজিন, ২০ রাউন্ড গুলি, পাঁচ বোতল বিদেশি মদ, ৫৮ লাখ ৪১ হাজার টাকা, পাঁচটি পাসপোর্ট, তিনটি চেক, বেশকিছু বিদেশি মুদ্রা ও বিভিন্ন ব্যাংকের ১০টি এটিএম কার্ড উদ্ধার করেছে র্যাব।
র্যাব কর্মকর্তা শাফী উল্লাহ বুলবুল বলেন, প্রাথমিক তদন্তে ফার্মগেটে পাপিয়ার দুটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট, নরসিংদী শহরে দুটি ফ্ল্যাট, দুই কোটি টাকা মূল্যের দুটি প্লট, চারটি বিলাসবহুল গাড়ি এবং গাড়ি ব্যবসায় প্রায় দেড় কোটি টাকা বিনিয়োগের তথ্য পাওয়া গেছে। এছাড়া, বিভিন্ন দেশের ব্যাংকে নামে-বেনামে অনেক অ্যাকাউন্টে বিপুল পরিমাণ অর্থ গচ্ছিত থাকার কথা জানা গেছে।
র্যাব জানায়, পাপিয়া ও তার স্বামী মতি সুমনের বিরুদ্ধে রেলওয়ে ও পুলিশের এসআই'তে চাকরির প্রলোভনে ১১ লাখ টাকা, একটি কারখানায় অবৈধ গ্যাস সংযোগ দেওয়ার কথা বলে ৩৫ লাখ টাকা, একটি সিএনজি পাম্পের লাইসেন্স করে দেওয়ার কথা বলে ২৯ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার প্রমাণ পাওয়া গেছে। এর বাইরে নরসিংদী এলাকায় চাঁদাবাজি, মাদক ও অস্ত্র ব্যবসাসহ বিভিন্ন অপরাধের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা উপার্জন করেছে বলে জানা গেছে।
র্যাব-১ অধিনায়ক বলেন, পাপিয়ার আয়ের আরেকটি অন্যতম উৎস নারীদের দিয়ে জোরপূর্বক অনৈতিক কাজ করানো। ঢাকার বিভিন্ন বিলাসবহুল হোটেলে অবস্থান করে কম বয়সী মেয়েদের দিয়ে জোরপূর্বক অনৈতিক কাজে বাধ্য করা হতো। যাদের বেশির ভাগকে নরসিংদী থেকে চাকরির প্রলোভনে ঢাকায় আনা হয়েছিল। অনৈতিক কাজে বাধ্য না হলে তাদেরকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করা হতো।
পাপিয়ার সঙ্গে বিভিন্ন বিশিষ্টজনের ছবির বিষয়ে জানতে চাইলে র্যাব কর্মকর্তা বলেন, ‘বর্তমান যুগে যদি কেউ কারো সঙ্গে ছবি তুলতে চায় তাহলে বিষয়টি সাধারণত এড়ানো যায় না। তাই কারো সঙ্গে ছবি থাকা মানেই পাপিয়ার সঙ্গে সখ্য বিষয়টি প্রমাণ করে না।’
শনিবার দুপুরে রাজধানীর হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হয়ে দেশত্যাগের সময় শামিমা নূর পাপিয়া ওরফে পিউসহ চারজনকে আটক করে র্যাব-১। এদিন র্যাব জানায়, রাজধানীর গুলশানের হোটেল ওয়েস্টিনে প্রেসিডেন্ট স্যুট নিজের নামে সবসময় বুকড করে নানা ধরনের অসামাজিক কার্যকলাপ চালিয়ে যাচ্ছিলেন পাপিয়া। যিনি হোটেলটির বারে বিল বাবদ প্রতিদিন পরিশোধ করতেন প্রায় আড়াই লাখ টাকা। বৈধ আয় অনুযায়ী পাপিয়ার বাৎসরিক আয় মাত্র ১৯ লাখ টাকা। অথচ হোটেল ওয়েস্টিনে শুধু গত তিন মাসেই বিল পরিশোধ করেছেন প্রায় এক কোটি ৩০ লাখ টাকা। যিনি নারীসংক্রান্ত অপকর্ম ছাড়াও অস্ত্র-মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজি ও বিভিন্ন তদবির বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত।
(ঢাকাটাইমস/২৩ফেব্রুয়ারি/এসএস/জেবি)