শুভ জন্মদিন পল্লীবন্ধুর যোগ্য উত্তরসূরি

খন্দকার দেলোয়ার জালালী
| আপডেট : ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ১০:২৪ | প্রকাশিত : ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০৮:১২

২৪ ফেব্রুয়ারি। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদেরের শুভ জন্মদিন। একজন স্বচ্ছ ও সাদা মনের রাজনৈতিক নেতা হিসেবে ইতোমধ্যে দেশের রাজনীতিতে সুপরিচিত তিনি। শিক্ষা, কর্ম ও রাজনৈতিক জীবনে অসাধারণ সাফল্যময় এক জীবনের নাম গোলাম মোহাম্মদ কাদের। বাংলাদেশের রাজনীতিতে তিনি জিএম কাদের নামেও বহুল পরিচিত।

১৯৪৮ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন গোলাম মোহাম্মদ কাদের। উত্তরবঙ্গের প্রখ্যাত আইজীবী অ্যাডভোকেট মকবুল হোসেন ও মজিদা খাতুনের সন্তান তিনি। তিনি সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের আদরের ছোট ভাই। গোলাম মোহাম্মদ কাদের ছাত্রজীবনে অত্যন্ত মেধাবী হিসেবে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছেন। তাঁর স্ত্রী দেশবরেণ্য সঙ্গীতশিল্পী শেরিফা কাদের। ছেলে সামস্ কাদের উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণে অস্ট্রেলিয়া আছেন। আর কন্যা ইসরাত জাহান কাদের সপরিবারে থাকেন অস্ট্রেলিয়াতে। সন্তানরা বেড়ে উঠেছে শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক চর্চায়। তার পরিবার জুড়ে সাংস্কৃতিক আবহ বিদ্যমান।

প্রকৌশলী হিসেবে শিক্ষাজীবন শেষ করে কৃতিত্ব দেখিয়েছেন কর্মজীবনেও। নারায়ণগঞ্জ ডকইয়ার্ডে মেকানিক্যাল প্রকৌশলী হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন গোলাম মোহাম্মদ কাদের। পরবর্তীতে বাংলাদেশ টোকাবো, ইরাকের কৃষি মন্ত্রণালয় এবং যমুনা তেল কোম্পানিতে সুনামের সাথে চাকরি করেছেন তিনি। সবশেষ বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনে পরিকল্পনা ও অপারেশন্স পরিচালক হিসেবে সাফল্যময় কর্মজীবনের ইতি টেনে রাজনীতিতে সক্রিয় হন গোলাম মোহাম্মদ কাদের।

বড় ভাই, আধুনিক বাংলাদেশের উন্নয়নের রুপকার ও জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের হাত ধরেই রাজনীতিতে হাতেখড়ি তার। স্বল্প সময়ের মধ্যেই বাংলাদেশের রাজনীতিতে একজন পরিচ্ছন্ন রাজনীতিক হিসেবে পরিচিতি পান গোলাম মোহাম্মদ কাদের। জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং কো-চেয়াম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন দক্ষতার সাথে।

তিনি ১৯৯৬ সালে লালমনিরহাট-৩ নির্বাচনী এলাকা থেকে প্রথমবারের মতো জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০১ সালের নির্বাচনে রংপুর-৩ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০৮ ও ২০১৮ সালে পুনরায় লালমনিরহাট-৩ থেকে বিপুল ভোটের ব্যবধানে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

২০০৯ সালের ৭ জানুয়ারি বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। ২০১১ সালের ৭ ডিসেম্বর থেকে ২০১৪ সালের ১১ জানুয়ারি পর্যন্ত তিনি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। দুটি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে একজন আদর্শবান মানুষ হিসেবে পরিচিতি পান গোলাম মোহাম্মদ কাদের। একজন দক্ষ মন্ত্রী হিসেবে নিজেকে সব ধরনের সমালোচনার উর্ধ্বে রেখেছেন তিনি। একাদশ জাতীয় সংসদে তিনি বিরোধীদলীয় উপনেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

শারীরিক অসুস্থ্যতার কারণে ২০১৯ সালের ৫ মে পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ তার স্নেহাস্পদ গোলাম মোহাম্মদ কাদেরকে জাতীয় পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নিয়োগ করেন। ২০১৯ সালের ১৪ জুলাই পল্লীবন্ধুর মৃত্যুর পর থেকে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন তিনি।

পল্লীবন্ধুর অসুস্থতার পর থেকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে জাতীয় পার্টিকে সংগঠিত করতে একের পর এক চ্যালেঞ্জ নিয়েছেন গোলাম মোহাম্মদ কাদের। ২০১৯ সালের ২৪ থেকে ২৭ জুন রাজধানীর এজিবি কলোনি মিলনায়তনে ৮টি বিভাগীয় সাংগঠনিক সভা অনুষ্ঠান করেন। সাংগঠনিক সভায় ৬৪ জেলার নেতাকর্মীরা প্রাণ খুলে কথা বলেন দলের শীর্ষ নেতাদের সামনে। তৃণমূল নেতাকর্মীদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী প্রতিটি জেলার বর্তমান সাংগঠনিক অবস্থা বিশ্লেষণ করে পরবর্তী পরিকল্পনা প্রণয়ন করেন তিনি। ৮টি বিভাগীয় এবং ১টি আন্তর্জাতিক বিষয়ক সাংগঠনিক কমিটি ঘোষণা করেন। যারা পরবর্তীতে বিভিন্ন জেলা সফর করে দলকে আরো গতিশীল করতে এবং জেলা পর্যায়ের সম্মেলন সফল করতে কাজ করেন। একটি সফল জাতীয় সম্মেলন সম্পন্ন করতে দারুণভাবে কাজ করেছে সাংগঠনিক কমিটিগুলো।

২০১৯ সালের ২৮ ডিসেম্বর রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে জাতীয় পার্টির ৯ম জাতীয় কাউন্সিলে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন গোলাম মোহাম্মদ কাদের। কাউন্সিলে দায়িত্ব পেয়েই দলকে সুসংগঠিত করতে উদ্যোগ নিয়েছেন তিনি। জাতীয় সম্মেলনের পরের দিন ২৯ ডিসেম্বর দলের নেতৃত্ব আরো গতিশীল করতে ৭ জন কো-চেয়ারম্যান নিয়োগ করেন নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান হিসেবে। এর মধ্যে সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এমপি, কো-চেয়ারম্যান এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার, কাজী ফিরোজ রশীদ এমপি, জিয়া উদ্দিন আহমেদ বাবলু, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এমপি, মুজিবুল হক চুন্নু এমপি এবং অ্যাডভোকেট সালমা ইমলাম এমপি।

৩০ ডিসেম্বর দেশের ৮টি বিভাগের সাংগঠনিক নেতৃত্ব আরো শক্তিশালী করতে ৮ জন অতিরিক্ত মহাসচিব নিয়োগ দিয়েছেন জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান। তারা হলেন- গোলাম কিবরিয়া টিপু (বরিশাল), সাহিদুর রহমান টেপা (খুলনা), অ্যাডভোকেট শেখ সিরাজুল ইসলাম (রাজশাহী). ফখরুল ইমাম এমপি (ময়মনসিংহ), এটিইউ তাজ রহমান (সিলেট), ব্যরিষ্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী (রংপুর), অ্যাডভোকেট মোঃ রেজাউল ইসলাম ভূইয়া (চট্টগ্রাম) এবং লিয়াকত হোসেন খোকা এমপি (ঢাকা)

শুধু সংগঠনকে শক্তিশালী করতেই ব্যস্ত নয়, জাতীয় সব ইস্যুতে কথা বলেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান কাদের। গেল বছর যখন ধানের মূল্য পাচ্ছিলেন না সাধারণ কৃষকরা, তখন নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করে দেশের রাজনীতিতে বার্তা দিয়েছেন সুষ্ঠু ধারার রাজনীতির। আবার ঈদুল আজহার পরে যখন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা মূল্য না পেয়ে চামড়া মাটি চাপা দিচ্ছিলেন, তখন সংবাদ সম্মেলন করে চামড়া রপ্তানির পরামর্শ দিয়েছিলেন সরকারকে। একজন দক্ষ ও সুষ্ঠু ধারার রাজনৈতিক নেতা হিসেবে নিজেকে উপস্থাপন করতে সমর্থ হয়েছেন গোলাম মোহাম্মদ কাদের।

জাতীয় পার্টিকে সাধারণ মানুষের রাজনৈতিক মঞ্চে পরিণত করতে প্রস্তুতি নিচ্ছেন গোলাম মোহাম্মদ কাদের। তৃণমূল নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন স্থানীয় পর্যায়ে সাধারণ মানুষের সব দুঃখ-কষ্টে পাশে থাকতে। প্রয়োজনে গণমানুষের পক্ষে স্থানীয়ভাবে কর্মসূচি ঘোষণা করে মাঠে থাকতেও নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। এছাড়া জাতীয় পার্টির নিষ্ক্রিয় নেতাকর্মীদের সক্রিয় করতে বিশেষ কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন তিনি।

যারা আশঙ্কা করেছিলেন পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের অবর্তমানে জাতীয় পার্টি বিলীন হয়ে যাবে, তাদের ধারণা মিথ্যে প্রমাণ করে জাতীয় পার্টিকে আরো শক্তিশালী করতে কাজ করছেন গোলাম মোহাম্মদ কাদের। আর সাধারণ কর্মীরাও পল্লীবন্ধুর ছায়া খুঁজে পেয়েছেন সৎ ও স্বচ্ছ রাজনীতির প্রতীক গোলাম মোহাম্মদ কাদেরের মাঝে।

শুভ জন্মদিন পল্লীবন্ধুর যোগ্য উত্তরসূরি। সুস্বাস্থ্যে দীর্ঘজীবী হোন।

লেখক: সাংবাদিক।

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :