সালমান শাহের আত্মহত্যার পেছনে পাঁচ কারণ

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ১৬:১৬ | প্রকাশিত : ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ১৬:০৪

ঢাকাই চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় নায়ক সালমান শাহের আত্মহত্যার পেছনে পাঁচটি কারণ ছিল বলে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) তদন্তে উঠে এসেছে।

সোমবার সকালে ধানমন্ডিতে পিবিআই কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব কারণ তুলে ধরেন সংস্থাটির প্রধান ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার।

বনজ কুমার বলেন, চিত্রনায়ক সালমান শাহ আত্মহত্যাই করেছেন বলে দীর্ঘ তদন্তে বেরিয়ে এসেছে। পিবিআইয়ের বিশেষ পুলিশ সুপার মো. বশির আহমেদের স্বাক্ষর করা বিজ্ঞপ্তিতে আজ ওই তদন্তের বিষয়ে জানানো হয়। সেখানে নায়ক সালমানের আত্মহত্যার পাঁচটি কারণ তুলে ধরা হয়। সেগুলো হচ্ছে-

১. সালমান শাহ ও চিত্রনায়িকা শাবনূরের অতিরিক্ত অন্তরঙ্গতা

২. স্ত্রী সামিরার সঙ্গে সালমানের দাম্পত্য কলহ;

৩. সালমান শাহর মাত্রাতিরিক্ত আবেগপ্রবণতা এবং একাধিকবার আত্মঘাতী হওয়া বা আত্মহত্যার চেষ্টা করা;

৪. মায়ের প্রতি অসীম ভালোবাসা এবং জটিল সম্পর্কের বেড়াজালে পড়ে পুঞ্জিভূত অভিমানে রূপ নেয়া;

৫. সন্তান না হওয়ায় দাম্পত্য জীবনের অপূর্ণতা।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ‘হত্যা নয়, আত্মহত্যাই করেছিলেন সালমান শাহ। শাবনূরকে বিয়ে করে দুই স্ত্রী নিয়ে সংসার করতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু স্ত্রী সামিরা সতীনের ঘর করতে রাজি ছিলেন না। এখান থেকেই পারিবারিক ও দাম্পত্য জীবনে কলহের শুরু।’

প্রায় ৬০০ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদন তুলে ধরে বনজ কুমার বলেন, ‘৪৪ জনের জবানবন্দিসহ সার্বিক তদন্তে দেখা যাচ্ছে, চিত্রনায়ক সালমান শাহ পারিবারিক কলহের জেরে আত্মহত্যা করেছেন। হত্যার অভিযোগের কোনোও প্রমাণ মেলেনি।

‘১০ জন সাক্ষীর ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি পর্যালোচনা করে এবং ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন এবং সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকসহ সবার মতামত বিশ্লেষণ করে প্রমাণ পাওয়া যায়, সালমান শাহ খুন হননি, তিনি আত্মহত্যা করেছেন।’

বনজ কুমার জানান, পিবিআই তাদের তদন্তের ক্ষেত্রে যেসব বিষয় বিবেচনা করেছে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে- প্রথম ও দ্বিতীয় সুরতহাল প্রতিবেদন, প্রথম ও দ্বিতীয় ভিসেরা প্রতিবেদন, কেমিক্যাল প্রতিবেদন, প্রথম ও দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন, বিশেষ মেডিকেল বোর্ডের মতামত, হস্তলিপি বিশারদের মতামত, ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও ভবনে প্রবেশ ও বের হওয়া সংক্রান্ত বিশেষজ্ঞের মতামত।

এছাড়া রিজভী আহমেদ ওরফে ফরহাদ ও জরিনা বেগমের অডিও রেকর্ড, সাক্ষীদের ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় দেয়া জবানবন্দি, ঘটনা সংশ্লিষ্ট সাক্ষীদের জিজ্ঞাসাবাদ শেষে রেকর্ড করা ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬১ ধারায় দেয়া জবানবন্দি, জব্দ করা আলামত পর্যালোচনা, আগের তদন্ত প্রতিবেদনগুলো পর্যালোচনা এবং বিভিন্ন দালিলিক সাক্ষ্য, পারিপার্শ্বিক সাক্ষ্য, কাগজপত্র ও অন্যান্য সাক্ষ্য পর্যালোচনার বিষয়গুলোও পিবিআইয়ের তদন্তে বিবেচনা করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর মারা যান চলচ্চিত্র অভিনেতা চৌধুরী মোহাম্মদ শাহরিয়ার ইমন ওরফে সালমান শাহ। সে সময় এ বিষয়ে অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করেছিলেন তার বাবা প্রয়াত কমরউদ্দিন আহমদ চৌধুরী।

এরপর ১৯৯৭ সালের ২৪ জুলাই ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে অভিযোগ এনে মামলাটিকে হত্যা মামলায় রূপান্তরিত করার আবেদন জানান তিনি। ওই সময় অপমৃত্যুর মামলার সঙ্গে হত্যাকাণ্ডের অভিযোগের বিষয়টি একসঙ্গে তদন্ত করতে থানা পুলিশের পরিবর্তে সিআইডিকে নির্দেশ দেন আদালত।

তদন্তের পর ১৯৯৭ সালের ৩ নভেম্বর আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয় সিআইডি। চূড়ান্ত প্রতিবেদনে সালমান শাহের মৃত্যুকে আত্মহত্যা বলে উল্লেখ করে সংস্থাটি। ওই মাসের ২৫ নভেম্বর ঢাকার সিএমএম আদালতে প্রতিবেদনটি গৃহীত হয়। কিন্তু সিআইডির প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে তার বাবা কমরউদ্দিন আহমদ চৌধুরী রিভিশন মামলা দায়ের করেন। এর ফলে ২০০৩ সালের ১৯ মে মামলাটি বিচার বিভাগীয় তদন্তে পাঠায় আদালত। এরপর প্রায় ১৫ বছরে মামলাটি বিচার বিভাগীয় তদন্তে ছিল।

পরে ২০১৪ সালের ৩ আগস্ট ঢাকার সিএমএম আদালতের বিচারক বিকাশ কুমার সাহার কাছে বিচার বিভাগীয় তদন্তের প্রতিবেদন দাখিল করেন মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ইমদাদুল হক। ওই প্রতিবেদনেও সালমান শাহর মৃত্যুকে আত্মহত্যা হিসেবে উল্লেখ করা হয়।

আবারও ২০১৪ সালের ২১ ডিসেম্বর সালমান শাহর মা নীলা চৌধুরী ছেলের মৃত্যুতে বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করেন এবং বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে নারাজি দেবেন বলে আবেদন করেন।

২০১৫ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি নীলা চৌধুরী ঢাকা মহানগর হাকিম জাহাঙ্গীর হোসেনের আদালতে বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদনের নারাজির আবেদন দাখিল করেন। নারাজি আবেদনে উল্লেখ করা হয়, আজিজ মোহাম্মদ ভাইসহ ১১ জন তার ছেলে সালমান শাহর হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকতে পারেন।

পরে মামলার তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয় র‌্যাবকে। কিন্তু র‌্যাবের তদন্ত চলাকালে বেশ কয়েকবার শুনানি নিয়ে ২০১৬ সালের ১৯ মে মহানগর দায়রা জজ কামরুল হোসেন মোল্লা বিব্রত বোধ করে ঢাকার ৬ নম্বর বিশেষ জজ আদালতে মামলার নথি পাঠিয়ে দেন। এ আদালতের বিচারক মো. ইমরুল কায়েস ওই বছরেরই ২১ আগস্ট র‌্যাবের মাধ্যমে পুনঃতদন্তের (অধিকতর) আদেশ আইনসম্মত হয়নি উল্লেখ করে বিষয়টি আবারও শুনানি নেওয়ার জন্য ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিমকে দায়িত্ব দেন।

এর ধারাবাহিকতায় মহানগর হাকিম লস্কর সোহেল রানা নারাজি আবেদনের ওপর আবারও শুনানি নেন। পরে ৭ ডিসেম্বর শুনানির পর সালমান শাহর মৃত্যুর ঘটনা ‘হত্যা না আত্মহত্যা’ তা নির্ধারণের জন্য র‌্যাবের বদলে পিবিআইকে দায়িত্ব দেন।

ঢাকাটাইমস/২৪ফেব্রুয়ারি/এসএস/এমআর

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

জাতীয় এর সর্বশেষ

বাউন্ডারি ভেঙে বিমানবন্দরে প্রকৌশলীকে চাপা দেওয়া বাসচালকের লাইসেন্স ছিল না: র‌্যাব

দেশীয় খেলা প্রসারের জন্য যা দরকার সরকার তা করছে: প্রধানমন্ত্রী

নির্বাচন অনেকটা ইনজেকশনের মতো, অনেকে ভয় পায়: ইসি আলমগীর

সড়ক দুর্ঘটনায় বছরে ক্ষতি ২৫ হাজার কোটি টাকার বেশি: বিআরটিএ

নানা আয়োজনে আমেরিকায় ‘বাংলাদেশ সম্মেলন’ অনুষ্ঠিত

অপতথ্য রোধে গণমাধ্যমকে ভূমিকা পালনের আহ্বান তথ্য প্রতিমন্ত্রীর

ফুলেল শ্রদ্ধায় শিব নারায়ণ দাশকে শেষ বিদায়

আগামী বাজেটে তামাকপণ্যের দাম বাড়ানোর দাবি

উপজেলা নির্বাচনের সময় আ.লীগের সব ধরনের কমিটি গঠন বন্ধ থাকবে: কাদের

হজ প্যাকেজের খরচ ১ লাখ ৪ হাজার টাকা কমানো হয়েছে: ধর্মমন্ত্রী

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :