গাজীপুরে ব্যবসায়ী হত্যায় স্ত্রী-শ্বশুর গ্রেপ্তার

প্রকাশ | ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ১৭:১৭

গাজীপুর প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস

গাজীপুরের শ্রীপুরের প্রশিকামোড় এলাকায় ফ্লাট থেকে জমি ব্যবসায়ী আব্দুর রহমানের অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় তার স্ত্রী ও শ্বশুরকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। অন্য পুরুষের সঙ্গে যৌনকাজে লিপ্ত হতে বাধ্য করা ও নানান অত্যাচারের কারণে স্বামীকে হত্যা করেন বলে বলে জানিয়েছেন ওই নারী।

 মঙ্গলবার র‌্যাব-১ এর পোড়াবাড়ি ক্যাম্প কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‌্যাব কমান্ডার লে. কমান্ডার আব্দুল্লাহ আল মামুন।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- নিহতের স্ত্রী শ্রীপুর উপজেলার চকপাড়া গ্রামের আলী হোসেনের মেয়ে সামিরা আক্তার ও তার বাবা আলী হোসেন।

র‌্যাব কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি রাতে শ্রীপুর পৌরসভা কেওয়া পশ্চিমখণ্ড (প্রশিকা মোড়) এলাকায় তৃতীয় তলা ভবনের একটি ফ্ল্যাট থেকে পুলিশ, ক্রাইমসিন ইউনিট এবং সিআইডির উপস্থিতিতে জমি ব্যবসায়ী আব্দুর রহমানের ঝলসানো গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এরপর থেকে নিহতের স্ত্রী সামিরা পলাতক ছিলেন। এ ঘটনায় শ্রীপুর থানায় মামলা দায়ের করা হয়।

গত সোমবার রাতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে রাজধানীর দক্ষিণ খান এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে র‌্যাব-১ এর সদস্যরা। সেখান থেকে ভিকটিম রহমানের ৪র্থ স্ত্রী সামিরা আক্তার ও তার বাবা আলী হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

নিহতের স্ত্রী সামিরার ভাষ্যমতে, সামিরা নিহত ভিকটিমের ৪র্থ স্ত্রী এবং আব্দুর রহমান পেশায় একজন জমির ব্যবসায়ী ছিলেন। গত ১০ ফেব্রুয়ারি রতন নামে এক ব্যবসায়িক পার্টনারের সঙ্গে স্ত্রী সামিরাকে যৌন কাজে লিপ্ত হতে বাধ্য করেন নিহত আব্দুর রহমান। রতন তাদের বাসা থেকে চলে গেলে সামিরা পূর্ব পরিকল্পিতভাবে পরের দিন ভোরে বাসায় থাকা ধারালো দা দিয়ে স্বামী আব্দুর রহমানকে ঘুমন্ত অবস্থায় গলাকেটে মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর লাশ তোশকে মুড়িয়ে রাখেন। লাশ যেন চেনা না যায় তার জন্য লাশের মুখ এসিড দিয়ে ঝলসে দেওয়া হয়। হত্যা পরবর্তী তিনদিন একই বাসায় অবস্থান করে অবশেষে লাশ সরিয়ে ফেলতে ব্যর্থ হয়ে বাবা-মায়ের সহায়তায় ওই বাসা থেকে পালিয়ে যান সামিরা। বিভিন্ন এলাকায় আত্মগোপন করার পর সর্বশেষ সামিরা রাজধানীর দক্ষিণ খান এলাকায় তার চাচার বাসায় আত্মগোপন করে ছিলেন।

র‌্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে সামিরা আরো জানায়, সামিরা এবং ভিকটিমের বাড়ি গাজীপুর শ্রীপুর এলাকায় হওয়ায় সেই সুবাদে দুজনের মধ্যে পূর্ব পরিচিত ছিল। গত ২০১৬ সালে ভিকটিম আব্দুর রহমার তার ২য় স্ত্রীকে নিয়ে টঙ্গীতে বসবাস করতেন। দুজনের মধ্যে পূর্ব পরিচিতি থাকার কারণে সামিরা ভিকটিমের টঙ্গী বাসায় থেকে টঙ্গী সরকারি কলেজে তার ডিগ্রি পরীক্ষা দেন। এসময় আব্দুর রহমান সামিরাকে বিভিন্নভাবে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণ করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। অবশেষে আব্দুর রহমান সামিরাকে কৌশলে খাবারের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে তার টঙ্গীর বাসায় নিয়ে একাধিক বার ধর্ষণ ও ভিডিও ধারণ করে। পরবর্তীতে ওই ভিডিও এবং হত্যার ভয় দেখিয়ে সামিরাকে বিভিন্ন সময় ধর্ষণ করতে থাকেন নিহত আব্দুর রহমান।

সামিরা র‌্যাবকে জানান, এক পর্যায়ে ধর্ষণের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ পাওয়ায় সামিরার প্রথম স্বামী তাকে ডিভোর্স দেয়। তারপর থেকে সামিরা শ্রীপুর নয়নপুর এলাকায় একটি ওষুধের দোকান পরিচালনা করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছিলেন। গত ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ভিকটিম সামিরাকে কোর্টের মাধ্যমে বিয়ে করেন এবং তাকে নিয়ে শ্রীপুর এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে সংসার শুরু করেন। ২০১৮ সালের পর থেকে আব্দুর রহমান ব্যবসায়িক স্বার্থে আবার কখনো বিপুল টাকার বিনিময়ে তার পার্টনারদের সাথে স্ত্রী সামিরাকে যৌন কাজে লিপ্ত হতে বাধ্য করতেন। এইসব নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে সামিরা ভিকটিম আব্দুর রহমানের কাছ ডিভোর্স চাইলে ভিকটিম সামিরাকে সহ তার মা-ভাইকে খুন করার হুমকি দেন। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সামিরা প্রতিশোধ নিতে স্বামীকে খুন করেন।

ঢাকাটাইমস/২৫ফেব্রুয়ারি/ইএস