নারী উন্নয়নে এগিয়ে এ. এফ. মুজিবুর রহমান স্কুল

প্রকাশ | ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ১৮:৩০

সাজ্জাদ বাবু, ফরিদপুর থেকে

সকাল নয়টা বাজতেই প্রত্যন্ত অঞ্চলের মেয়েরা বাইসাইকেল চালিয়ে বিদ্যালয়ে আসতে শুরু করে। শিক্ষার আলোয় আলোকিত হতে সামাজিক সকল বাধা অতিক্রম করে তারা এখন নিয়মিত স্কুলে আসে। ফরিদপুর সদর উপজেলার গেরদা ইউনিয়নের বেশ কয়টি গ্রামের মেয়েরা নির্বিঘ্নে এখন বাইসাইকেল চালিয়ে স্কুলে যাওয়া আসা করে।

ফরিদপুর সদর উপজেলার গেরদা গ্রামে এ. এফ. মুজিবুর রহমান মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ক্লাস শুরু হওয়ার আগে,  টিফিন পিরিয়ডে বা স্কুল ছুটির সময়ে এমন মনোরম দৃশ্য চোখে পড়ার মতো। শুধুমাত্র শিক্ষার আলো পেতে প্রতিদিন দুই থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূর থেকে সাইকেলে যাতায়াত করে ছাত্রীরা। বিশেষ করে কাফুরা, মুন্সিবাজার, পশরা, আলিয়াবাদ, গদাধরডাঙ্গি, বিলমামুদপুরসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে মেয়েরা বাইসাইকেল চালিয়ে স্কুল আসে।

১৯৬৯ সালে বিদ্যালয়টি অল্প কয়েকজন শিক্ষার্থী নিয়ে যাত্রা শুরু করলেও বর্তমানে শিক্ষার্থী সংখ্যা ৫৩০। যার মধ্যে বেশির ভাগই ছাত্রী। শিক্ষক রয়েছেন ১৬ জন। এর মধ্যে দাতব্য প্রতিষ্ঠান এ. এফ. মুজিবুর রহমান ফাউন্ডেশন নিয়োগকৃত সার্বক্ষণিক শিক্ষক ছয় জন।

একটা সময় স্কুলে ছাত্রীদের উপস্থিতি বেশ কম ছিল। দূরত্ব আর সামাজিক অবস্থার কারণে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মেয়েরা নিয়মিত স্কুলে অনুপস্থিত থাকত। আর এই পরিস্থিতিকে জয় করতে এ. এফ. মুজিবুর রহমান ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে মেয়েদের বাইসাইকেল চালনো প্রশিক্ষণ শেষে বিনামূল্যে সাইকেল প্রদান করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় মেয়াদের খালি হাতে আত্মরক্ষা কৌশল তায়কোয়ান্দো প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আর এসব প্রশিক্ষণের জন্য ফাউন্ডেশনের অর্থায়নে মেয়েদের জন্য দেয়াল ঘেরা আলাদা মাঠের ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রতি ব্যাচে নিয়মিত দু-তিন মাসে ২০ থেকে ২৫ জন মেয়েকে প্রশিক্ষণের পরই ফাউন্ডেশনের খরচে বাইসাইকেল কিনে দেয়া হচ্ছে। এরই মাঝে ৬৯ জন ছাত্রী বিনামূল্যে সাইকেল পেয়েছে।

আয়েশা আক্তার নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, আমার বাড়ি স্কুল থেকে তিন কিলোমিটার দূরে। প্রতিদিন বাইসাইকেল চালিয়ে স্কুলে যাতায়াত করি। প্রথম প্রথম সমস্যা হতো, কিন্তু এখন কোনো সমস্যা হয় না।

দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী জুই আক্তার বলেন, আগে পায়ে হেঁটে স্কুলে আসতে অনেক সময় লাগত। তাই নিয়মিত স্কুলে আসা হতো না। এখন বাইসাইকেল নিয়ে আসার কারণে অনেক সময় বেচে যায়। টিফিনের সময়ে বাড়ি গিয়ে খেয়ে আবার সহজেই স্কুলে আসতে পারি। স্কুল ম্যানেজিং কমিটি তৎপর থাকায় রাস্তাঘাটে ছেলেরা উত্ত্যক্ত করার সাহস পায় না।

অভিভাবকরা প্রথমদিকে কিছুটা দ্বিধায় থাকলেও এখন মেয়েদের সাইকেল চালানোর ব্যাপারটা খুবই ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন। তারা মনে করেন এতে করে নারী শিক্ষার প্রসারের পাশাপাশি সামাজিক বন্ধন সৃষ্টি হচ্ছে। কেটে যাচ্ছে অপ্রয়োজনীয় জড়তা বা সংস্কার।

বাইসাইকেল প্রশিক্ষক তৃষ্ণা বিশ্বাস বলেন, আমাদের মেয়েরা এখন অনেক এগিয়ে। আমরা নিয়মিত এদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছি। তাছাড়া এ স্কুলে মেয়েদের খেলাধুলা, শারিরীক শিক্ষা, গার্লস গাইডসহ অন্যান্য সহশিক্ষায় উদ্বুদ্ধ করা হয়।

প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলাম বলেন, আগে দূরত্ব আর রাস্তাঘাটে ইভটিজিং এর কারণে মেয়েরা স্কুলে কম উপস্থিত হত। এই স্কুলের ম্যানেজিং কমিটি ও দাতাদের বিভিন্ন উদ্যোগ  নারী জাগরণে অভুতপূর্ণ সাড়া ফেলেছে । আগে সাইকেল চালানোর ব্যাপারটা সমাজে সহজ ছিল না। এখন একে অপরের দেখা-দেখি সাইকেল চালিয়ে আসে। এতে স্কুলে মেয়েদের উপস্থিতির সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। খালি হাতে আত্মরক্ষা প্রশিক্ষণ নিয়ে মেয়েরা আত্মবিশ্বাসী হওয়ায় রাস্তাঘাটে ইভটিজিং কমে গেছে।

দাতব্য প্রতিষ্ঠান এ.এফ, মুজিবুর রহমান ফাউন্ডেশনের প্রতিনিধি লোনা টি. রহমান ঢাকাটাইমসকে বলেন এ স্কুলের প্রশিক্ষিত ছাত্রীদের বাই-সাইকেল বিতরণ একটি অব্যহত প্রক্রিয়া। ২০১৮ সাল থেকে বছরে কয়েক ধাপে সাইকেল বিতরণ করা হচ্ছে। এ ব্যবস্থা আগামীতেও চালু থাকবে। প্রথম দিকে কেবল যে সব মেয়েরা চালাতে জানে তাদেরকেই সাইকেল দেয়া হয়েছে। এখন ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে একজন মহিলা বি. পি. এড শিক্ষক নিয়োগ করে প্রশিক্ষিতদেরই সাইকেল দেয়া হচ্ছে। এ ব্যাপারে ছাত্রীদের পড়াশুনার ফলাফলও বিবেচনা করা হচ্ছে। এ স্কুলের দেখাদেখি অন্যান্য স্থানেও দাতা ব্যক্তিরা নিজ নিজ এলাকার স্কুলগুলিতে এ ধরনের সহায়তার হাত প্রসারিত করবেন বলে আমরা আশা করি।

ঢাকাটাইমস/২৫ফেব্রুয়ারি/ইএস