সালমান শাহ’র মৃত্যু: পিবিআইয়ের প্রতিবেদন আদালতে

প্রকাশ | ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ১৯:১৫

আদালত প্রতিবেদক

জনপ্রিয় চিত্রনায়ক চৌধুরী মোহাম্মদ শাহরিয়ার ইমন ওরফে সালমান শাহকে হত্যা মামলায় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ঢাকা সিএমএম আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছে।

মঙ্গলবার মামলঅর তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআই এর পরিদর্শক সিরাজুল ইসলাম ঢাকা সিএমএম আদালতের ডেসপাস শাখায় এ প্রতিবেদন দাখিল করেন। যা ডেসপাস শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশের এএসআই হেলাল উদ্দিন নিশ্চিত করেছেন।

সূত্র জানায়, বুধবার সিএমএম আদালতে শনাক্তের জন্য এবং আগামী ৩০ মার্চ প্রতিবেদন গ্রহণের বিষয়ে শুনানির জন্য উপস্থাপিত হবে।

এর আগে সোমবার ধানমণ্ডির পিবিআই দপ্তরে সংবাদ সম্মেলনে এ হত্যা মামলার তদন্তে প্রাপ্ত তথ্য সাংবাদিকদের সামনে উপস্থাপন করেন সংস্থাটির প্রধান ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার। সেখানে বলা হয়, সালমান শাহকে কেউ হত্যা করেনি বা অত্মহত্যার প্ররোচনাও দেয়নি। মূলত চিত্রনায়িকা শাবনূরের সঙ্গে সালমানের অতিরিক্ত অন্তরঙ্গতা, স্ত্রী সামিরার সঙ্গে দাম্পত্য কলহ, মাত্রাধিক আবেগপ্রবণতার কারণে একাধিকবার আত্মঘাতী বা আত্মহত্যার চেষ্টা, মায়ের প্রতি অসীম ভালোবাসা জটিল সম্পর্কের বেড়াজালে পড়ে পুঞ্জীভূত অভিমানে রূপ নেওয়া এবং সন্তান না হওয়ায় দাম্পত্য জীবনে অপূর্ণতার কারণেই আত্মহত্যা করেন।

১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর সালমান শাহের ১১/বি নিউ ইস্কাটন রোডের ইস্কাটন প্লাজার বাসার নিজ কক্ষে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। পরে তাকে প্রথমে হলি ফ্যামেলি পরে ঢাকা মেডিকেলে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

ওই ঘটনায় সালমান শাহের পিতা কমর উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী একটি অপমৃত্যুর মামলা করেন। ওই মামলা প্রথমে রমনা থানা পুলিশ পরে ডিবি পুলিশের সহকারী পুলিশ কমিশনার হুমায়ুন কবির তদন্ত করেন। তদন্তকালে সালমান শাহর লাশের প্রথম ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ময়না তদন্ত করে মৃত্যু আত্মহত্যা বলে উল্লেখ করেন। পরিবারের আপত্তি দিলে লাশ কবর থেকে তুলে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পচে যাওয়ার কারণে মৃত্যুর কারণ নির্ণয় কারা সম্ভব হয়নি বলে উল্লেখ করেন। সে অনুযায়ী তদন্তকারী কর্মকর্তা অপমৃত্যু বলেই প্রতিবেদন দাখিল করেন। এরপর বাদী পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড উল্লেখ করে নারাজি দিলে ডিবির সহকারী পুলিশ কমিশনার মজিবুর রহমান তদন্ত করেন। তিনি তদন্তকালে ১৯৯৭ সালের ১৯ জুলাই সালমানের বাবার ডিওএইচএস (জোয়ার সাহারা) এর বাসায় রেজভী আহমেদ ওরফে ফরহাদ নামীয় জনৈক যুবকের আগমন ঘটে। মিথ্যা পরিচয়ে ওই যুবকের বাসায় প্রবেশের অভিযোগে তাকে ক্যান্টনমেন্ট থানা পুলিশের কাছে সোপর্দ করে একটি মামলা করা হয়। ওই মামলায় রেজভীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তিনি সালমান শাহ হত্যার কথা স্বীকার করে তার সহযোগী হিসেবে ডন, ডেভিড, ফারুক, আজিজ মোহাম্মাদ ভাই, সাত্তার, সাজু, সালমান শাহের স্ত্রী সামিরা, সামিরার মা লতিফা হক লুসি ও জনৈক রুবির নাম প্রকাশ করেন। পরে ১৯৯৭ সালের ২২ জুলাই আদালতের তার স্বীকারোক্তি রেকর্ড করা হয়।

এরপর বাদী কমর উদ্দিন অপমৃত্যুর মামলাটি হত্যা মামলায় রূপান্তরের আবেদন করলে ১৯৯৭ সালের ২৭ জুলাই অপমৃত্যুর মামলা এবং ক্যান্টনমেন্ট থানার ওই মামলা একত্রে তদন্তের জন্য সিআইডিকে দেওয়া হয়। সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার খালেকুজ্জামান প্রায় সাড়ে তিন মাস তদন্তের পর ১৯৯৭ সালের ২ নভেম্বর প্রতিবেদনে বলেন. জনৈক রেজভী হত্যাকাণ্ডে নিজে জড়িত এবং অন্যানদের জড়িত থাকার বিষয় নাম প্রকাশ করলেও পরে জেলখানায় তিনি জানিয়েছেন সালমান শাহ হত্যার বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না। এতে প্রমাণিত হয় যে, তার স্বীকারোক্তি স্বেচ্ছা প্রদত্ত ছিল না। মূলত সালমান শাহর সঙ্গে নায়িকা শাবনূরের অতিরিক্ত ঘনিষ্ঠতার কারণে তার স্ত্রীর সঙ্গে দাম্পত্য কলহের কারণেই সে আত্মহত্যা করেন। ওই প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে নারাজি দিলে ১৯৯৯ সালের ৭ মার্চ মামলাটি বিচার বিভাগীয় তদন্তে যায়। প্রায় ১৫ বছর ধরে মামলাটি বিচার বিভাগীয় তদন্তে সালমান শাহর বাবা কমর উদ্দিন ও মা নিলুফার চৌধুরী ওরফে নিলা চৌধুরীসহ পাঁচজনের সাক্ষ্য গ্রহণ করে ২০১৪ সালের ৮ ডিসেম্বর হত্যার অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি মর্মে প্রতিবেদন দাখিল হয়। এরপর ওই বছর গত ২১ ডিসেম্বর মা নিলুফার চৌধুরী নারাজি দিলে ২০১৫ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি র‌্যাবকে তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়। পরে র‌্যাবকে তদন্তে দেওয়া আদেশ উচ্চ আদালত কর্তৃক বেআইনি ঘোষিত হলে ২০১৬ সালের ৬ ডিসেম্বর পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দেয় আদালত। এ সংস্থা তিন বছর দুই মাস তদন্তের পর প্রতিবেদন দাখিল করল।

(ঢাকাটাইমস/২৫ফেব্রুয়ারি/আরজেড/জেবি)