দিল্লি ঘুরে যা দেখল বিবিসি

প্রকাশ | ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০৯:২৩ | আপডেট: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ১২:৫৩

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, ঢাকা টাইমস

ভারতের রাজধানী দিল্লিতে যে ঘটনাকে বিতর্কিক নাগরিকত্ব আইনকে কেন্দ্র করে পক্ষে-বিপক্ষের সমর্থকদের মধ্যে মারামারির ঘটনা বলে মনে হচ্ছিল, সেটি যে পুরোদস্তুর সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা- তা নিয়ে এখন আর কেউ সন্দেহ করছেন না।

বুধবার দুপুরের পর বিবিসির সংবাদদাতা শুভজ্যোতি গিয়েছিলেন উত্তর-পূর্ব দিল্লির জাফরাবাদ এলাকায় যেখানে সোমবার এই সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সূত্রপাত হয়। বিস্তৃত এই এলাকাটিতে হিন্দু-মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের মানুষের বসবাস। তাদের সিংহভাগই খেটে খাওয়া গরীব মানুষ।

ওই এলাকা ঘুরে বিবিসির সংবাদদাতা শুভজ্যোতি বলেন, ‘দিল্লির একদিকের জীবনযাত্রা দেখে মনে করার কোনো উপায় নেই শহরের একাংশে চরম খুনোখুনি হচ্ছে। যমুনার ওপরের সেতু পেরিয়েই উত্তর-পূর্ব দিল্লিতে ঢোকার পরপরই যেন মনে হলো একটা মৃত্যুপুরীতে ঢুকলাম।’

তিনি জানান, মূল সড়কের দুপাশে সারি সারি দোকানের সব বন্ধ, কোনোটি আগুনে পোড়া, এখনও কোনোটি থেকে ধোঁয়া বেরুচ্ছে। তারপর মূল সড়ক থেকে গলির ভেতরে ঢুকেও মনে হচ্ছিল পুরো এলাকা যেন জনশূন্য। মানুষজন দরজা বন্ধ করে সব ঘরের ভেতর বসে আছেন। ভয়ে সিটিয়ে আছেন।

শুভজ্যোতির কথায়, ‘প্রথম ৪৮ ঘণ্টা মনে হচ্ছিল একটা সহিংসতা চলছে, কিন্তু এখানে এসে মানুষজনের সঙ্গে কথা বলে এখন আর কোনো সন্দেহ নেই যে এটা পুরাদস্তুর একটা সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা। নাগরিকত্ব আইন ছিল শুধুই একটা ছুতো।’

এলাকার মুসলিম প্রধান এলাকাগুলোতে শুধু বাড়ি ঘরেই নয়, অনেক মসজিদে হামলা হয়েছে, আগুন দেওয়া হয়েছে।

জাফরাবাদের মেট্রো স্টেশনের কাছে মুস্তাফাবাদ এলাকায় একটি বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির বৈঠকখানায় কয়েকশ মুসলিম, যাদের অধিকাংশই নারী এবং শিশু- তারা বাড়ি-ঘর থেকে পালিয়ে এখানে আশ্রয় নিয়েছেন। তাদের চোখে মুখে আতংক, অবিশ্বাস।

পারভেজ নামে একজন মুসলিম ব্যবসায়ী উপদ্রুত লোকজনের জন্য তার বৈঠকখানাটি খুলে দিয়েছেন। সেখানে মাঝবয়সী এক নারী বলেন, কোথা থেকে হঠাৎ করে ‘জয় শ্রীরাম’ হুঙ্কার দিয়ে শত শত গুণ্ডা মুসলিমদের বাড়িতে হামরা চালায়। তারা চিৎকার করছিল, মুসলমানদের খতম করে দেব। বাঁচতে দেবনা। তারা বলছিল পুলিশ তাদের কিছুই করতে পারবেনা।

অনেক বাড়িতে লোক নেই। মানুষজন পালিয়ে অন্য জায়গায় আশ্রয় নিয়েছে। বহু মানুষ বলেছেন, সোমবার থেকে দুদিন ধরে চলা এই সহিংসতার সময় পুলিশ ছিল নিষ্ক্রিয়।

শুভজ্যোতি বলেন, ‘এই অভিযোগ আমি অসংখ্য মানুষের কাছ থেকে শুনেছি। মুস্তাফাবাদের বাসিন্দারা বলছিলেন এলাকার ফারুকিয়া মসজিদ এবং মিনা মসজিদের যখন হামলা হচ্ছিল, তখন সামনেই পুলিশ দাঁড়িয়ে ছিল। তারা বাধা দেওয়ার বিন্দুমাত্র চেষ্টা করেনি।’

নিহতের সংখ্যা ২০ ছাড়ানোর পর মঙ্গলবার মধ্যরাত থেকে ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা প্রধান অজিত দোভাল দাঙ্গা উপদ্রুত এলাকাগুলোতে ঘুরছেন। মানুষজনের সঙ্গে কথা বলছেন, আশ্বস্ত করার চেষ্টা করছেন। কিন্তু যে আতঙ্কের ছাপ উত্তর-পূর্ব দিল্লির মানুষের চোখে-মুখে তৈরি হয়েছে তা সহজে যাবে বলে মনে হয়না।

ঢাকা টাইমস/২৭ফেব্রুয়ারি/একে