‘ফুলের বাগানের বদলে দেশে ক্যাসিনোর বাগান!’

শাসক দলকে ইঙ্গিত করে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন ‘ফুলের বাগানের বদলে দেশে ক্যাসিনোর বাগান করেছে।’ বৃহস্পতিবার দুপুরে বাগেরহাট শহরের সাংস্কৃতিক ফাউন্ডেশনের এসি লাহা মিলনায়তনে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির দুই দিনব্যাপী খুলনা বিভাগীয় যুব কমিউনিস্ট ক্যাম্পের উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।

মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম, তখন আমরা একটা গান গাইতাম- ‘একটি ফুলকে বাঁচাব বলে যুদ্ধ করি, একটি মুখের হাসির জন্য অস্ত্র ধরি।’ আমি নিজে মুক্তিযুদ্ধে ছিলাম। লড়াইয়ের পর মুক্তাঞ্চল গঠন করে আমাদের স্বাধীন প্রশাসন প্রতিষ্ঠা করেছিলাম। সেখানে কোনো ঘুষ, দুর্নীতি ছিল না। সেখানে কোনো নারী ধর্ষণ, নারী নির্যাতন হতো না। সেখানে চুরি-চামারি, বাটপারি, ডাকাতি হতো না। সেই মুক্তাঞ্চলে আমরা স্বপ্ন দেখতাম- দেশ স্বাধীন হলে সারাদেশে একটা সুন্দর ফুলের সাজানো বাগান আমরা প্রতিষ্ঠা করব। সেই সুন্দর ফুলের বাগানের স্বপ্ন তারা ধ্বংস করে দিয়েছে। সেই ফুলের বাগানের বদলে দেশে ক্যাসিনোর বাগান করেছে। দেশকে দুরাচারের অরণ্যে পরিণত করেছে। তাদের হাতে ভবিষ্যৎ ছেড়ে দেয়া যায় না।

তিনি বলেন, দেশকে রক্ষা করতে হলে যারা ক্ষমতায় থেকে প্রায় ৫০টা বছর দেশকে পরিচালনা করেছে- তাদের হাতে দেশের ভবিষ্যৎ নিরাপদ নয়- এটা প্রমাণিত।

এ বাম নেতা বলেন, আমাদের মুক্তিযুদ্ধ এখনো শেষ হয়নি। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে হলে বামপন্থিদের নেতৃত্বে একটা সৎ রাজনীতির আদর্শবাদী সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সেটা উপর থেকে হবে না, নিচের থেকে ঘরে ঘরে গিয়ে মানুষ তৈরি করতে হবে।

তিনি বলেন, ১৬ কোটি মানুষের ৯৯ ভাগ শোষিত, বঞ্চিত। একভাগ শোষক-লুটেরার বিরুদ্ধে আমাদের আবার বিদ্রোহ করতে হবে। ২০ বছরে বাঙালির সম্পদ বিদেশে যতটা না পাচার করেছে পাকিস্তান, গত ১০ বছরে তার ১০ গুণ সম্পদ আমাদের দেশ থেকে পাচার হয়ে গেছে। দেশের সম্পদ বিদেশে পাচার করা যাবে না- এই কথা বলে আমরা অস্ত্র তুলে ধরেছিলাম। সেইটা যদি ন্যায় সঙ্গত হয়ে থাকে আজকে যারা বাংলার সম্পদ বিদেশে পাচার করে নিয়ে যাচ্ছে সেই এক শতাংশ লুটেরা ধনিক তাদের দালালরা তাদের বিরুদ্ধেও ন্যায় সঙ্গত, যুক্তিসংগত লড়াই, বিদ্রোহ সামনে।

সেলিম বলেন, সমাজে নীতি-নৈতিকতার ধস নেমেছে। অন্য সবকিছু হয়ত পুনর্নির্মাণ করা যায়। কিন্তু নীতি-নৈতিকতা এক প্রজন্ম দুই প্রজন্মে পুনর্নির্মাণ করা যায় না। এক কথায় বলা যায়, সর্বাঙ্গে ব্যথা ওষুধ দেব কোথায়? এমন একটা পরিস্থিতির মধ্যে আমরা আছি।

ইতোমধ্যে দেশ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে মন্তব্য করে তিনি বলেন, এই অবস্থা যদি চলতে থাকে- তাহলে দেশ ধ্বংসের দিকে চলে যাবে, আমাদের অস্তিত্ববিলীন হয়ে যাবে। দেশকে রক্ষা করতে হবে। আমাদের মুক্তিযুদ্ধ এখনো শেষ হয়নি।

কমিউনিস্ট পার্টির বাগেরহাট জেলা শাখার সভাপতি তুষার কান্তি বসুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বিভাগীয় কমিউনিস্ট যুব ক্যাম্পে আরও বক্তব্য দেন- পার্টির সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য সরদার রুহিন হোসেন প্রিন্স, রতন সেন, পাবলিক লাইব্রেরির সভাপতি অধ্যাপক মুজিবর রহমান ও জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ফররুখ হাসান জুয়েল।

শুক্রবার খুলনা বিভাগীয় যুব কমিউনিস্ট ক্যাম্প শেষ হবে। এই ক্যাম্পে খুলনা বিভাগের পাঁচ জেলার শতাধিক তরুণ অংশগ্রহণ করছেন। দুদিনের এই যুব ক্যাম্পে অংশ নেয়া তরুণদের দলের নানা সাংগঠনিক প্রশিক্ষণ দেবেন পার্টির নেতারা।

(ঢাকাটাইমস/২৭ফেব্রুয়ারি/কেএম/এলএ)