রাজশাহীতে আ.লীগের সম্মেলন: পদপ্রত্যাশী নেতাদের ঘুম হারাম

ব্যুরো প্রধান, রাজশাহী
 | প্রকাশিত : ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ২২:৩১

সম্মেলনের জন্য সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগ। আগামী ১ মার্চ রাজশাহীর ঐতিহাসিক মাদ্রাসা ময়দানে ত্রি-বার্ষিক এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এই সম্মেলন ঘিরে পদপ্রত্যাশী নেতাদের ঘুম যেন হারাম হয়ে গেছে। নতুন কমিটিতে পদ পেতে ছোটাছুটি শুরু করেছেন।

কেউ ছুটছেন কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে। আবার কেউ নিজের প্রার্থিতা ঘোষণা করে রাজনৈতিক জীবনবৃত্তান্ত নিয়ে ছুটছেন গণমাধ্যমের অফিসগুলোতে। কেউ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে চালাচ্ছেন নিজের প্রচার। আবার ফেসবুকেই কেউ কৌশলে অন্য নেতার বিরুদ্ধে চালাচ্ছেন অপপ্রচার।

এদিকে সম্মেলন উপলক্ষে এখন নগরীর মোড়ে মোড়ে ঝুলছে রঙিন পোস্টার। প্রায় প্রস্তুত হয়ে গেছে মাদ্রাসা ময়দান। সম্মেলনকে ঘিরে শুরু হয়েছে নানা সমীকরণও। সভাপতি পদে বর্তমান সভাপতি রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন ছাড়া এতো দিন অন্য কোনো প্রার্থীর নাম শোনা যায়নি। হঠাৎ বুধবার নিজের প্রার্থিতা ঘোষণা করে গণমাধ্যমে রাজনৈতিক জীবনবৃত্তান্ত পাঠিয়েছেন নগর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা অধ্যক্ষ বজলুর রহমান। আর সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থিতা ঘোষণা করেছেন বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকারসসহ অন্তত এক ডজন নেতা। তবে নগরজুড়ে আলোচনা লিটন আর ডাবলুকে ঘিরেই।

তৃণমূল চাইছে, তারাই আবার আসুক। কারণ, নেতৃত্ব আর ব্যক্তিত্বের কারণে রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি পদে খায়রুজ্জামান লিটন রয়েছেন অন্যন্য উচ্চতায়। তার ধারে কাছে কেউ নেই। সভাপতি পদে তার প্রতিদ্বন্দ্বী হওয়া অধ্যক্ষ বজলুর রহমান রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পেয়ে ২০১৪ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে দূরে ছিলেন। আর সাধারণ সম্পাদক পদে যারা এখন প্রার্থিতা ঘোষণা করছেন তাদের মধ্যেও দুয়েকজন ছাড়া কেউই দীর্ঘ সময় ধরে রাজনীতিতে তেমন সক্রিয় ভূমিকা রাখেননি। সম্মেলনকে সামনে রেখে হঠাৎ তৎপরতা শুরু করেছেন তারা।

নেতাকর্মীরা বলছেন, গত পাঁচ বছরে লিটন ও ডাবলুর নেতৃত্বে রাজশাহী মহানগরে আওয়ামী লীগ সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী হয়েছে। রাজশাহীতে বিএনপি-জামায়াতের যে তৎপরতা ছিল তা মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন এ দুই শীর্ষ নেতা। আর খায়রুজ্জামান লিটন মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর মূলত ডাবলু সরকারই ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে ঘুরে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড চালিয়েছেন। প্রতিটি ওয়ার্ডেই রয়েছে তার বিপুলসংখ্যক সমর্থক ও অনুসারী। এ কারণে তৃণমূলে ভরসা আর আস্থার প্রতীক হয়ে উঠেছেন লিটন এবং ডাবলু।

নগর আওয়ামী লীগের বর্তমান সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগ দুঃসময় অতিক্রান্ত করেছে। সেই সময় নেতাকর্মীদের পাশে থেকে বিএনপি-জামায়াতকে রাজপথে শক্তভাবে মোকাবেলা করেছেন ডাবলু সরকার। তার সাংগঠনিক দক্ষতার কারণে রাজশাহীতে বিএনপি-জামায়াতের দাপট ম্লান হয়ে গেছে। তিনি দলকে প্রচুর সময় দেন। নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন করেন। তাদের দুঃখ আর কষ্টে সব সময় পাশে দাঁড়ান। এ কারণে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা ডাবলু সরকারকে আবারও সাধারণ সম্পাদক পদে তাদের পাশে চাইছেন।

ডাবলু সরকার বিবি হিন্দু অ্যাকাডেমিতে স্কুলের ছাত্র অবস্থাতেই ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হন। রাজশাহী কলেজে ছাত্রলীগের নেতা ছিলেন। পরে রাজশাহী মহানগর ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হন। মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবেও তিনি দায়িত্ব পালন করেন।

এর আগে মহানগর আওয়ামী লীগের উপদপ্তর সম্পাদক ছিলেন। সর্বশেষ ২০১৪ সালের ২৫ অক্টোবরের সম্মেলনে কাউন্সিলরদের প্রত্যক্ষ ভোটে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।

নগরীর ২১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন বলেন, ডাবলু সরকারের সবচেয়ে বড় গুণ হলো তিনি নেতাকর্মীদের সুখে-দুঃখে পাশে থাকেন। নেতাকর্মী এবং তাদের পরিবারের কেউ অসুস্থ হলে খোঁজ নিতে ছুটে যান হাসপাতালে, বাড়িতে। সাধ্যমতো সহযোগিতা করেন। এভাবে তিনি সবার মনে স্থান করে নিয়েছেন। তাই আবারও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হবেন বলে আশা প্রকাশ করেন ইসমাইল হোসেন। তিনি বলেন, দলকে আরও সুসংগঠিত করতে হলে লিটন-ডাবলুর কোনো বিকল্প নেই।

নগরীর চার নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি হিমাদ্রি প্রাসাদ রায় লিটন বলেন, দীর্ঘ তিন যুগ থেকে ডাবলু সরকার রাজনীতিতে সক্রিয়। তিনি নেতাকর্মীদের মন জয় করতে সক্ষম হয়েছেন। তবে একটি মহল সম্মেলনকে সামনে রেখে ডাবলু সরকার এবং তার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছে। এটি অত্যন্ত দুঃখজনক। তবে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা বিশ্বাস রাখেন সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে ডাবলু সরকার আবারও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হবেন।

ডাবলু সরকার ছাড়াও সাধারণ সম্পাদক পদে আসার আগ্রহী আরও যেসব নেতার নাম জানা গেছে তারা হলেন- বর্তমান কমিটির সহ-সভাপতি অধ্যক্ষ শফিকুর রহমান বাদশা, নওশের আলী, যুগ্ম সম্পাদক নাইমুল হুদা রানা, মোস্তাক হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক আসলাম সরকার, আজিজুল আলম বেন্টু, সাবেক ছাত্রনেতা সরিফুল ইসলাম বাবু, মহানগর যুবলীগের সভাপতি রমজান আলী এবং সাবেক ছাত্রলীগ নেতা শফিকুজ্জামান শফিক, আহসানুল হক পিন্টু, হাবিবুর রহমান বাবু ও জোবায়ের আহমেদ রুবন।

(ঢাকাটাইমস/২৭ফেব্রুয়ারি/কেএম/এলএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :