ভারত ছাড়ার নোটিশ: বাংলাদেশি শিক্ষার্থীকে আইনি সহায়তার ঘোষণা

প্রকাশ | ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ১৮:০৯

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) বাতিলকে কেন্দ্র করে বিক্ষোভ মিছিলের ছবি সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে পোস্টের জেরে বাংলাদেশের এক শিক্ষার্থীকে দেশ ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে ভারত। কিন্তু সরকারের এই হঠকারি সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ওই শিক্ষার্থীকে সব ধরণের আইনি সহায়তার ঘোষণা দিয়েছে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের একাংশ। সূত্র: টেলিগ্রাফ ইন্ডিয়া।

বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র এক অধ্যাপক বলেন, ‘ওই শিক্ষার্থী ফেসবুকে কয়েকটি ছবি পোস্ট করেছিলেন। এর ভিত্তিতে তাকে দেশছাড়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যেই আমরা কলকাতার একজন সিনিয়র আইনজীবীর সাথে আলাপ করেছি। আমরা ওই শিক্ষার্থীকে সব ধরণের সহায়তা দেবো।’

কলকাতা হাইকোর্টের সিনিয়র আইনজীবী শামিম আহমেদ বলেন,‘ওই শিক্ষার্থীকে দেশছাড়ার যে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, তা আইনত বিতর্কিত। কারণ সরকার সুনির্দিষ্টভাবে সরকারবিরোধী কোন কর্মকাণ্ডে  সে জড়িত তা উল্লেখ করেনি। তার নিজের মতামত প্রকাশ করার অধিকার রয়েছে। কেন দেশছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তা খুবই অস্পষ্ট। আত্মপক্ষ সমর্থনের কোনো সুযোগ না দিয়েই দেশছাড়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আমি তাকে সব ধরণের আইনি সহায়ত দিবো।’ 

এছাড়া বাংলাদেশি শিক্ষার্থীকে দেশছাড়ার নির্দেশনার সমালোচনা করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। সোমনাথ সো নামের এক শিক্ষার্থী জানায়, সরকারের ওই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে আগামী সোমবার তারা ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করবে।

কৌতূহলের বশে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের (সিএএ) বিরোধী এক বিক্ষোভের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করার দায়ে পশ্চিমবঙ্গের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত বাংলাদেশি এক শিক্ষার্থীকে ভারত ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছিল কেন্দ্রীয় সরকার।

বার্তা সংস্থা টেলিগ্রাফ ইন্ডিয়া জানায়, ২০১৮ সালে ওই শিক্ষার্থী বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে উচ্চতর শিক্ষার জন্য ভর্তি হয়েছিলেন।

গত বছরের ডিসেম্বরে ভারতের পার্লামেন্টে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) পাস হয়। এই আইনের প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা মিছিল করেন। মিছিলের কয়েকটি ছবি পোস্ট করেছিলেন বাংলাদেশি ওই শিক্ষার্থী।

গত ১৪ ফেব্রুয়ারি ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ইস্যু করা এক চিঠিতে তাকে ১৫ দিনের মধ্যে ভারত ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।

চিঠিতে বলা হয়, বর্তমানে ওই শিক্ষার্থী ভারতে স্টুডেন্ট ভিসা নিয়ে অবস্থান করছেন। তিনি পশ্চিমবঙ্গের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছেন।

সরকারবিরোধী কর্মকাণ্ডে তার সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া গেছে। এই ধরনের কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে তিনি ভিসা চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করেছেন।

২০ বছর বয়সী ওই শিক্ষার্থী গত বুধবার চিঠিটি পান। চিঠি পাওয়ার পর ওই শিক্ষার্থী  নিজের শিক্ষাজীবনের ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন।

এক প্রতিক্রিয়ায় টেলিগ্রাফ ইন্ডিয়াকে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী বলেন,‘কী কারণে এই শাস্তি পেয়েছি তা আমি বুঝতে পারছি না। আমার কিছু বন্ধু সিএএ বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিল। আমি বিনা কৌতূহলে ছবিগুলো পোস্ট করেছি। ছবি পোস্টের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন ট্রল লক্ষ করি। পরে দ্রুত ফেসবুক আইডি ডিএক্টিভেট করি। আমি সত্যিই নির্দোষ।’

শিক্ষার্থীর এক বন্ধুর ভাষ্য, তিনি (শিক্ষার্থী) সিএএবিরোধী কোনো আন্দোলনে কখনো অংশ নেননি। শুধু কয়েকটি ছবি ফেসবুকে পোস্ট করেছিলেন। তার পোস্টগুলো কয়েকজন ডানপন্থীর নজরে আসে। পরে তারা ট্রল করে এবং তাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর দাবি জানায়। অন্তত ২৫০ জন তাকে ভারতবিরোধী বলে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছে বলেও জানান তার বন্ধু। 

কলকাতায় বাংলাদেশের ডেপুটি হাইকমিশনারের একটি সূত্রের বরাত দিয়ে টেলিগ্রাফ ইন্ডিয়া জানায়, তারা ওই শিক্ষার্থীকে দেওয়া কেন্দ্রীয় সরকারের নোটিশের বিষয়ে অবগত নয়। কিন্তু তিনি যে নজরদারিতে ছিলেন তা জানত তারা। ঢাকায় ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এ বিষয়ে অবগত ছিলেন। এ ধরনের ঘটনায় বেশি কিছু করার নেই বলে জানায় তারা।

এ ছাড়া বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের কতিপয় শিক্ষক-কর্মকর্তা ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ওই শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছিলেন বলেও জানা গেছে।
বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষক বলেন, ‘আত্মপক্ষ সমর্থনের কোনো সুযোগ দেওয়া হয়নি ওই শিক্ষার্থীকে। চিঠিতে ১৪ তারিখ উল্লেখ ছিল। অর্থাৎ তাকে সাক্ষাতের মেইল পাঠানোর সময়ই দেশত্যাগের চিঠি তৈরি ছিল।’

এদিকে বৃহস্পতিবার কয়েকজন বন্ধুকে নিয়ে ওই শিক্ষার্থী কলকাতায় ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আঞ্চলিক রেজিস্ট্রেশন অফিসে যোগাযোগ করেন। তারা সরকারের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার অনুরোধ জানিয়েছেন।

(ঢাকা টাইমস/২৮ফেব্রুয়ারি/আরআর)