বাত ব্যথার ওষুধ শুল্কমুক্ত হলে সুফল পাবেন সাধারণ মানুষ

প্রকাশ | ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ২২:০৭ | আপডেট: ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ১৭:৫৯

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

ওষুধ সেবনের পাশাপাশি নিয়মিত শরীর চর্চা ও সচেতনতায় বাত ব্যথার রোগীরা অনেকটা সুস্থ থাকতে পারেন বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। শুক্রবার আশুলিয়ার সামাজিক কনভেনশন সেন্টারে বাত ব্যথার রোগীদের সচেতনতামূলক এক অনুষ্ঠানে এই মত দেন তারা।

বাত ব্যথা রোগ বিশেষজ্ঞরা বলেন,পুরোপুরি নিরাময় না হলেও এই রোগের অনেক উন্নত ওষুধ তৈরী হয়েছে। যা বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। ফলে এর দাম অনেক বেশি। যা সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে।এতে অনেকে মাঝপথে চিকিৎসা বন্ধ করে দেন। তাই ওষুধগুলো শুল্কমুক্তভাবে আনা সম্ভব হলে কম খরচে মানুষ ব্যবহারের সুযোগ পেত। বাতের কষ্ট লাগব হতো।

চিকিৎসক ও রোগিদের মধ্যে সৌহার্দ্য বাড়াতে এমন ব্যতিক্রমী অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে প্রফেসর নজরুল রিউম্যাটোলজি ফাউন্ডেশন অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউট। এতে সহযোগিতা করেছে হেলথকেয়ার ফার্মাসিটিক্যালস লিমিটেড। এবারের অনুষ্ঠানের প্রতিপাদ্য ছিলো- ‘ব্যথাকে আর করবো না ভয় জীবনকে এবার করবো জয়।’

এতে সভাপতিত্ব করেন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের রিউম্যাটোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. নজরুল ইসলাম।

অনুষ্ঠানে বিশেষজ্ঞরা বলেন, দেশের প্রায় ২ শতাংশ তরুণ ছেলে-মেয়েরা এ বাত ব্যথায় আক্রান্ত। প্রাথমিক পর্যায়ে বাত ব্যথার কোনো উপসর্গ দেখা দেয় না। তবে এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার ৯ থেকে ১০ বছর পর এর তীব্রতা প্রকাশ পায়। ফলে বয়স কম থাকায় তরুণরা বুঝতে পারে না।

প্রফেসর নজরুল রিউম্যাটোলজি ফাউন্ডেশন অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরুর আগে থেকেই বাতের রোগীদের সচেতন করতে কাজ করা হচ্ছে। এর আগে  পাঁচ বছর ধরে এমন আয়োজন করা হয়।

চিকিৎসকরা বলেন, শুরুতে রোগের ভয়াবহতা বুঝতে না পারায় অল্প বয়সে অনেক তরুণরা কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। নিয়মিত শরীর চর্চা ও ওষুধ সেবনই এর তীব্রতা রোধ করতে পারে। একই সঙ্গে বাতের ওষুধ আমদানিতে শুল্কমুক্ত করাসহ এই চিকিৎসা ব্যবস্থায় প্রণোদনা দেওয়ার আহবান জানান তারা।

অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, দেশে প্রতিনিয়ত বাত ব্যথার রোগীর সংখ্যা বেড়ে চলছে। সঠিক চিকিৎসা ও সচেতনতার অভাবে অনেক রোগী ধীরে ধীরে তাদের কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলছে। তাই চিকিৎসা ব্যয় কিভাবে সাধ্যের মধ্যে আনা সম্ভব হয় সেজন্য সরকারের দৃষ্টি দিতে হবে।

অধ্যাপক ডা. মো. নজরুল ইসলাম বলেন, আমাদের দেশে প্রতিদিন হাজার হাজার রোগী উন্নত চিকিৎসা নিতে পাশ্ববর্তী দেশ ভারতসহ অন্যান্য দেশে চলে যাচ্ছে। বিশ্বে ৬৪৪ প্রকারের বাত জ্বর রয়েছে। বড় দাগে ২০০ প্রকার রোগ রয়েছে। আমাদের দেশের ২ শতাংশ তরুণ এ রোগে আক্রান্ত। ৩৫-৪০ শতাংশ কোমর ব্যথায় ভোগে। অথচ এই রোগের জন্য দেশে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার রয়েছে মাত্র ৫০ জন। এই রোগ সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতের রাজধানীসহ দেশের জেলা উপজেলা পর্যায়ের মেডিকেল কলেজগুলোতে পদ সৃষ্টি করলে সহজেই চিকিৎসা দেওয়া যাবে। একই সঙ্গে বাতব্যথা চিকিৎসা খরচ বেশি হওয়ায় অনেক রোগী মাঝ পথে চিকিৎসা বন্ধ করে দেয়। এজন্য ওষুধ আমদানিতে ট্যাক্স মওকুফ করা ও চিকিৎসা সেবায় প্রণোদনা দিতে হবে। এছাড়া নিয়মিত শরীর চর্চা ও ওষুধ সেবনে এই রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।

তিনি বলেন, মূলত বাতব্যথা নিয়ে জনসচেতনতা বাড়াতে ২০১৫ সাল থেকে আমরা নিয়মিত আয়োজন করে যাচ্ছি। এ লক্ষ্যে ২০১৯ সালে মাত্র ৩৯ জন সদস্য নিয়ে প্রফেসর নজরুল রিউম্যাটোলজি ফাউন্ডেশন অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউট নামে একটি প্রতিষ্ঠান করা হয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বাতের রোগীদের আধুনিক ও উন্নত চিকিৎসা স্বল্প খরচে দেওয়া হচ্ছে। এখন আমার লক্ষ্য এই চিকিৎসা সেবা দেশের প্রত্যন্তঅঞ্চলে ছড়িয়ে দিতে চাই। এজন্য আমরা একটি নেটওয়ার্কিং এর মাধ্যমে দেশব্যাপী শাখা করে আধুনিক চিকিৎসা দিতে চাই।

প্রফেসর নজরুল রিউম্যাটোলজি ফাউন্ডেশন অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউট আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, দেশে প্রতিনিয়ত বাতব্যথা রোগীর সংখ্যা বেড়ে চলছে। সঠিক চিকিৎসা ও সচেতনতার অভাবে অনেক রোগী ধীরে ধীরে তাদের কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলছে। এমন বাস্তবতায় বাতব্যথা রোগীদের সচেতন হতে হবে।

অনুষ্ঠানে হাতে কলমে রোগীদের শারীরিক ব্যয়াম, বাতব্যথা সংক্রান্ত নানা প্রশ্নের সমাধান দেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা।

অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন সাবেক ভিসি বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব হেলথ সায়েন্স (বিআইএইচএস) অধ্যাপক ড. লিয়াকত আলী, সিনিয়র সাংবাদিক মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল, বঙ্গবন্ধু মেডিকেলের পরিচালক (অর্থ) ও বিসিএস অডিট অ্যান্ড অ্যাকাউন্টস আব্দুস সোবহান, বিশিষ্ট অভিনেতা আজিজুল হাকিম, চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডা. জাহেদুর রহমান পান্নু, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম, অ্যাপোলো হাসপাতালের জেনারেল ম্যানেজার আখতার জামিল আহমেদ, হেলথ কেয়ার ফার্মাসিউটিক্যালের সহকারী ব্যবস্থাপক সামিউল হক, প্রোডাক্ট ম্যানেজার রওশন শামা, মডার্ন ওয়ানস্টপ আর্থারাইটিস কেয়ার অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টারের চিকিৎসক ডা. ফাহিদ বিন নজরুল, ডা. আশিকুজ্জামান রিয়াদ, ডা. মাহফিল তানি, ডা. শিমুল রায়, ডা. ফাতেমাতুজ জোহরা, ডা. তানজিনা শারমিন রুম্পা প্রমুখ।

(ঢাকাটাইমস/২৮ফেব্রুয়ারি/এলএ)