এক ছাতার নিচে এলে বছরভর পাঠক মিলবে

প্রকাশ | ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ২২:২৯

তানিয়া আক্তার

বাংলা একাডেমির বইমেলা আমাদের সংস্কৃতির অংশ হয়ে উঠেছে। ফেব্রুয়ারি একটি মাস রাজধানীসহ দেশের নানা প্রান্তের মানুষ ভিড় করেন এই মেলায়। তারা কিনে নেন নিজেদের পছন্দের বই। এই একটি সময়ই মনে হয় বাঙালি পাঠবিমুখ নয়। কিন্তু মেলা শেষে বছরের আর সময়টার চিত্র কী? এমন করে কি বই বিক্রি হয়?

প্রকাশকদের তথ্য বলছে, তাদের যত বেচাকেনা এই বইমেলাতেই। এরপর সারা বছর খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলে ব্যবসা। তবে যদি শপিংমলের মতো এক ছাতার নিচে বইয়ের কোনো মার্কেট হতো, তাহলে বছরভর পাঠক সমাগম থাকত বলে মনে করেন সাহস প্রকাশনীর কর্ণধার নাজমুল হুদা রতন।

এই প্রকাশক লেখালেখির জগতে পরিচিত ‘সাহস রতন’ হিসেবে। সৃজনশীল প্রকাশনায় এসে ‘স্বাবলম্বী হবো সবাই’ এই স্লোগান সামনে রেখে এগিয়ে নিচ্ছেন ‘সাহস পাবলিকেশন্স’কে। বই এবং বইমেলা নিয়ে তার ভাবনা জানিয়েছেন ঢাকা টাইমসকে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন তানিয়া আক্তার।
বইমেলার পরিবেশ কতটা বইবান্ধব?

দশমবারের মতো আমরা বইমেলায় আছি। শুরু থেকেই দেখেছি মেলাটা সিন্ডিকেটের হাতে বন্দি ছিল। তারা বইমেলার স্টল বিন্যাসের নকশায় একটা ধাঁধা তৈরি করেছেন এত দিন। অর্থাৎ বইপ্রেমীরা একটা ধাঁধার মতো নির্দিষ্ট কিছু প্রকাশনীর পাশেই ঘুরেফিরে আসবেন বারবার। কিন্তু এবার তা হয়নি। স্টল বিন্যাসে কোনো ধাঁধা নেই এবার। বইপ্রেমীরা যেকোনো প্রকাশনীতে যেকোনোভাবে যেতে পারছেন। ফলে সবাই পাঠক পাচ্ছে।
ধাঁধাবিহীন স্টল বিন্যাস করাটা কীভাবে সম্ভব হয়েছে বলে মনে করেন?
আমার মতে, বইমেলায় এবার স্টল বিন্যাসে ধাঁধা তৈরি হয়নি শুধু কবি হাবীবুল্লাহ সিরাজীর উদ্যোগে। কারণ তার আরেকটি পরিচয় রয়েছে, তিনি বুয়েট থেকে পাস করা। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার সেই ছাপ এবারের বইমেলায় আছে বলে আমার কাছে মনে হয় যে কারণে বিন্যাসে অন্তত এই ধাঁধাটা তৈরি হয়নি।

সাহস পাবলিকেশন্স কোন ধরনের বই প্রকাশের জন্য গুরুত্ব দিচ্ছে?
শিশুতোষ সাহিত্যকে প্রাধান্য দিয়ে থাকি। এটাই আমাদের মূল জায়গা। কারন একটা প্রজন্মকে যদি সুন্দর করে গড়ে তোলা না যায় তাহলে জাতির ভবিষ্যৎ অন্ধকার। আমাদের বইয়ের সংখ্যার মধ্যে প্রায় অর্ধেক বই শিশুদের।
বইয়ের পাঠক কেমন পেয়েছেন এবার?

এবারের বইমেলায় পাঠক কেমন হতে পারে এই সম্পর্কে আমাদের আগেই এক ধরনের ধারণা ছিল। কারণ পুরো মাস এসএসসি পরীক্ষা। দ্বিতীয়ত প্রথম সপ্তাহ বাণিজ্য মেলা। তৃতীয়ত, বই মেলায় বিক্রি হয় সাধারণত দিবসকেন্দ্রিক- ফাগুন, ভালোবাসা দিবস ও একুশে ফেব্রুয়ারিতে। এবার যেহেতু প্রায় সবগুলোই সরকারি ছুটির দিনে পড়েছে, সুতরাং বেশ কয়েকটা দিন আমরা পাব না জানতাম আগে থেকেই। তারপরও বেশ পাঠক হয়েছে।

এবার নতুন বই প্রকাশ করেছেন কতগুলো?

এবারের বইমেলার সার্বিক দিক বিবেচনা করে অর্থাৎ সরকারি ছুটির দিনে সবগুলো দিবস থাকায়, এসএসসি পরীক্ষা, বাণিজ্য মেলা এগুলো থাকায় খুব সচেতনভাবেই আমরা ১৫টি বই বের করেছি।

কোন ধরনের বই বেশি বিক্রি হয়েছে আপনাদের প্রকাশনী থেকে?

বিজ্ঞান কল্পকাহিনীর বই বেশি বিক্রি হয়েছে। এর মধ্যে জাহিদ সাগরের ‘সাপের খামার' এবং কাদের বাবুর সম্পাদনায় ‘বাংলাদেশের নির্বাচিত সাইন্স ফিকশন' বইটি এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ বিক্রি হয়েছে। এই বইগুলোর পাঠক মূলত কিশোররা।

নবীন লেখকদের কেমন সুবিধা দিয়ে থাকেন?

আমাদের এখানে জীবনে প্রথম বই বের হয়েছে এমন নবীনদের সংখ্যা অনেক। সুতরাং নবীনদের আমরা অনেক অগ্রাধিকার দিয়ে থাকি।
পাঠককে বছরজুড়েই বইমুখী করার জন্য কী করা যেতে পারে?
আমরা মূলত সাহিত্যবিমুখ একটা জাতি। সারা বছর কোনো উদ্যোগ থাকে না। হঠাৎ একটা বইমেলায় মানুষ বইমুখী হবে, এটা আশা করা যায় না। দরকার সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা। অন্য সব জিনিসের দিকে যদি তাকান, তাহলে দেখবেন সবকিছুর জন্যই একটা নির্দিষ্ট জায়গা থাকে। যেমন শপিংমলে গেলে সহজেই আমরা আমাদের প্রয়োজনীয় জিনিস পেয়ে যাই। পার্কে গেলে বিনোদন পাই। ঠিক তেমনি বইয়ের আনন্দ নেয়ার জন্য দরকার এক ছাতার নিচে সবগুলো প্রকাশনীর বই। অর্থাৎ অন্যান্য পণ্যের বাজারের মতো বইয়েরও নির্দিষ্ট বাজার থাকতে হবে। তাহলে সারা বছরই বইমুখী হবে পাঠকেরা।

দেশের অধিকাংশ বইয়ের মান নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।

পাঠক বাড়লেই বাড়বে বইয়ের মান। আর পাঠক পেতে হলে অবশ্যই বইয়ের বাজারজাতকরণ, বিক্রি, বই কেনা এসব সহজ করতে হবে।

(ঢাকাটাইমস/২৮ ফেব্রুয়ারি/টিএটি)