করোনা আতঙ্কে বিশ্ব

প্রকাশ | ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ২৩:২৩ | আপডেট: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ২৩:৪৩

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
করোনার কারণে সতর্ককতামূলক মাস্ক ব্যবহার করছেন ইরানি নাগরিকরা।

পিপীলিকা থেকে কভিড-১৯ (করোনাভাইরাস) ক্রমাগত মহীরুহে পরিণত হচ্ছে। ইতিমধ্যে করোনায় আক্রান্ত বিশ্বের ৫০টির বেশি দেশের মানুষ। চীন ছাড়িয়ে বিশ্বের আরও দেশে মৃত্যুর মিছিল বাড়ছে। চীনের উহান প্রদেশ থেকে উদ্ভূত কোভিড-১৯ বা করোনাভাইরাস বিশ্বে এখন মূর্তিমান আতঙ্ক। মানুষের মৃত্যু ডেকে আনাসহ ভাইরাসটি বিশ্ব অর্থনীতি ও ব্যবসা-বাণিজ্যেও বড় ধাক্কা দিয়েছে। চীনের ৩০টি প্রদেশ ছাড়াও আমেরিকা, ব্রিটেন, ফ্রান্স, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, থাইল্যান্ড, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, ইরান, সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ ৫০টি দেশে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে।

এ পর্যন্ত করোনায় মারা গেছেন ২ হাজার ৮০০ জন। বিশ্বে এ পর্যন্ত ৮৩ হাজারের বেশি মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। চীনের বাইরে ইরান, ইতালি ও কোরিয়ায় এর প্রকোপ বেড়েছে বেশি। আজ শুক্রবার পর্যন্ত পারস্যের দেশ ইরানে মারা গেছেন ৩৪ জন। আক্রান্ত হয়েছেন দেশটির ভাইস প্রেসিডেন্ট ও কয়েকজন মন্ত্রী। মারা গেছেন সাবেক এক রাষ্ট্রদূত। এশিয়ার দেশ দক্ষিণ কোরিয়ায় এ ভাইরাসের বলি হয়েছেন ১৩ জন। 

চীনের পর দক্ষিণ করিয়ায় করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা বেশি।

এ ভাইরাসে দুই ইতালীয় নাগরিকের মৃত্যুর পর অন্তত ৫০ হাজার নাগরিককে গৃহবন্দি করে ফেলেছে ইউরোপের দেশটি। চীন সফরের পর মঙ্গোলিয়ার প্রেসিডেন্ট খলতমা বাতুলগা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী সগবাটার দামদিনকে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইনে নেয়া হয়েছে নিজের দেশে।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে বিভিন্ন দেশে ইতিমধ্যে নানা সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নিয়েছে। সৌদি আরব ওমরা ও ভিজিট ভিসা বন্ধ করে দিয়েছে। কোনো কোনো দেশ বিমান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করছে। 

এদিকে করোনার জেরে শুক্রবার ধস নামে ভারত ও ইউরোপ-আমেরিকার শেয়ারবাজারে। বিশ্বের বাজারে প্রভাবের জেরে এদিন রেকর্ড ১,০৮৩.৮৫ পয়েন্ট পড়ে ভারতে শেয়ারবাজার সেনসেক্সের। নিফটিও পড়ে ৩১২ পয়েন্ট। ২০১১ সালের পর বিশ্বের বাজারে প্রভাবের জেরে এক দিনে এমন রেকর্ড পতন হলো ভারতীয় শেয়ার বাজারে।

অন্যদিকে শুক্রবার মার্কিন পুঁজিবাজারের ডাউ জোন্স সূচক পড়েছে ১,১৯০ পয়েন্ট। জার্মানির ড্যাক্স পড়ে ৪০৭। জাপানের নিকি ৮১৮, হ্যাংসেং ৬৭০ পয়েন্ট পড়ে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ২০০৮ সালের পর এই প্রথম এত বড় বিপর্যয়। এই পতনের কারণ হিসেবে করোনা ভাইরাস আতঙ্কে আমদানি-রফতানির ওপর বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞার কথা বলা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা আরও জানান, যদি আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে চীনে এই মহামারী নিয়ন্ত্রণ না করা যায় তাহলে বিশ্ব অর্থনীতিতে বিরাট বিপর্যয় নেমে আসবে।
গত বছরের ডিসেম্বরে চীনের হুবেই প্রদেশের একটি পশু বিক্রির বাজার থেকে করোনাভাইরাস ছড়ায় বলে ধারণা করা হচ্ছে।

করোনা আতঙ্কে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন এয়ারলাইনসের যাত্রী কমে গেছে অন্তত ৩০ শতাংশের মতো। বিশ্বে বিমান খাতে পাঁচ বিলিয়ন ডলার লোকসানের আশঙ্কা করা হচ্ছে। জার্মানির বিখ্যাত বিমান সংস্থা লুফথানসারের মতো বিমান সংস্থার শেয়ারের মূল্য কমে গেছে। জাপানের লোকসান হয়েছে ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। থাইল্যান্ডের ক্ষতি হয়েছে ১ দশমিক ১৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। 

প্রাথমিকভাবে এশিয়ার মধ্যে করোনাভাইরাসে সংক্রমণ বেশি থাকলেও বর্তমানে ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যে করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের হুঁশিয়ারি, করোনাভাইরাসের মহামারীর দ্বারপ্রান্তে বিশ্ব। 

চীনের বাইরে দক্ষিণ কোরিয়ায় সবচেয়ে বেশি করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। শুক্রবার পর্যন্ত দেশটিতে করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ২,৩৩৭ জন। মধ্যপ্রাচ্যের মধ্যে ইরানে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা সর্বাধিক। ইতোমধ্যে করোনায় আক্রান্ত হয়ে ইরানের ৩৪ নাগরিক মারা গেছেন, আক্রান্ত হয়েছেন আরও ৩৮৮ জন। ইরাক, বাহরাইন, লেবানন কুয়েত এবং ওমানেও করোনায় আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে। 

ইউরোপের মধ্যে ইতালিতে করোনায় সংক্রমণ বাড়ছে বেশি হারে। ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ইতালির নাগরিকদের ওপর সাময়িক ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ইতালিতে প্রকোপ বেড়েছে করোনাভাইরাসের।

করোনার কারণে ব্যবসা-বাণিজ্য, উৎপাদন প্রক্রিয়া, পর্যটন, বেসামরিক বিমান চলাচল ইত্যাদি খাতে ব্যাপক ধস নেমেছে। ২০০৮ সালে বিশে^ আর্থিক মন্দার পরে গত সপ্তাহে অর্থনীতির সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি ছিল।

ইলেকট্রিক যন্ত্র আমদানি-রপ্তানি খাতে ধস নেমেছে সবচেয়ে বেশি। কারণ বিশে^ অন্যতম বৃহৎ ইলেকট্রিক উৎপাদনকারী দেশ চীন। প্রায় প্রতিটি দেশের সঙ্গে চীনের বাণিজ্যিক সম্পর্ক রয়েছে। চীনা নাগরিকদের থেকে করোনা ভাইরাসে সংক্রমণের ভয়ে অধিকাংশ দেশ চীনের সাথে বাণিজ্যি কমিয়ে দিয়েছে। 

করোনা নানা আন্তর্জাতিক সম্মেলনেও হানা দিচ্ছে। সামাজিক মাধ্যম ফেসবুক নিজেদের বার্ষিক গ্লোবাল মার্কেটিং সম্মেলন বাতিল করেছে। বার্সেলোনায় স্মার্টফোনের সর্ববৃহৎ আয়োজন ‘মোবাইল ওয়ার্ল্ড কংগ্রেস-২০২০’ বাতিল করেছে। আয়োজক কর্তৃপক্ষ করোনা সংক্রমণ ঠেকানোর প্রতিশ্রুতি দিলেও অ্যামাজন, সনি, এলজি ইলেকট্রনিক্স, ফেসবুক, সনি, নোকিয়া, ভোডাপোন, বিটি, এরিকসন, চিপমেকারসের মতো বড় বড় কোম্পানিগুলো কর্তৃপক্ষের আশ^াসে আশ^স্ত হতে পারিনি।   

২০২০ সালে জাপানে গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকও বাতিল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে এই মুহূর্তে নতুন কোনো দেশে অলিম্পিক আয়োজনের কোনো সুযোগ নেই। 

প্রতিবেশী ইরানে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা হু হু করে বৃদ্ধি পাওয়ায়, সৌদি আরব ওমরাহ ও ভ্রমণ  ভিসার ওপর সাময়িক নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। ওমরাহর পাশাপাশি মসজিদে নববী পরিদর্শনেও সাময়িক স্থগিতাদেশ দেয়া হয়েছে। যেসব দেশে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে সেসব দেশের নাগরিকদের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।

(ঢাকাটাইমস/২৮ফেব্রুয়ারি/আরআর/ইএস/মোআ)