দাঙ্গাকারীদের ঠেকিয়ে ‘বীর কপ’ এসপি নীরাজ

প্রকাশ | ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ১২:৪৩

ঢাকাটাইমস ডেস্ক

ভারতের দিল্লিতে দাঙ্গাকারীদের হামলা থেকে জনসাধারণের জীবন-সম্পদ রক্ষা করে এখন বীর হিসেবে আখ্যায়িত হচ্ছেন উত্তর প্রদেশের পুলিশ সুপার নীরাজ জাদাউন। তাকে ডাকা হচ্ছে ‘হিরো কপ’নামে।

নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনকে (সিএএ) কেন্দ্র করে গত রবিবার ছড়িয়ে পড়া দাঙ্গায় এখন পর‌্যন্ত ৪৩ জনের মৃত্যুর খবর জানা গেছে। আহত হয়েছেন আরও তিন শতাধিক।

নীরাজকে নিয়ে বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, তিনি মানুষের প্রাণ বাঁচাতে নিজের জীবন বাজি রেখেছিলেন। পুলিশ হিসেবে দায়িত্ব শুরুর আগে যে শপথ নিয়েছিলেন, সেই শপথবাক্যের প্রতিটি শব্দের প্রতি সুবিচার করে ধর্ম-বর্ণের ঊর্ধ্বে উঠে মানুষের মন জয় করেছেন।

যে কাজের জন্য নীরাজের এত প্রশসংসা, সেটি গত মঙ্গলবারের। তিনি তখন সীমান্তে একটি তল্লাশি চৌকিতে টহলে ছিলেন। সেখান থেকে ২০০ মিটার দূরে দিল্লির কারাওয়ালনগর থেকে গুলির শব্দ শুনতে পান তিনি।

কর্তর্ব ঠিক করতে প্রথমে কিছুটা দ্বিধায় ছিলেন নিরাজ। কেননা ভারতে রাষ্ট্রীয় সীমান্ত ছেড়ে আসতে হলে কর্তৃপক্ষের অনুমতি লাগে।

নীরাজ সীমান্ত ছেড়ে আসাকেই বেছে নিলেন। বলেন,  ‘বিপদের কথা জেনেও আমি একাই সেখানে যেতে চাইলাম। এটা আমার এখতিয়ারবহির্ভূত ছিল। ওই ১৫ সেকেন্ড ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে ভয়ংকর সময়। কৃতজ্ঞতা যে আমার দল আমাকে অনুসরণ করেছে।’ ঘটনাটি পরে জানানোর পর পর নীরাজের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তাকে সমর্থন দিয়েছেন।

নীরাজ বলেন, ‘ব্যাপারটি খুবই বিপজ্জনক ছিল। আমরা সংখ্যায় কম ছিলাম; আর দাঙ্গাকারীরা ছিল সশস্ত্র।’

দাঙ্গারীদের সঙ্গে প্রথমে সমঝোতার চেষ্টা করেন নীরাজ। কিন্তু তা ব্যর্থ হয়। নীরাজ বিবিসিকে বলেন, ‘আমরা তাদের বলি, পুলিশ গুলি চালাবে। তারা শুরুতে পিছু হটলেও সেকেন্ডের মধ্যে আমাদের দিকে পাথর ছোড়া শুরু করে এবং আমরা গুলিরও শব্দ পাই।’

নীরাজ জাদাউন এবং তার দল অবস্থান নেয়। দাঙ্গাকারীরা সম্পূর্ণ সরে না যাওয়া পর্যন্ত তার দল চাপ অব্যাহত রাখে।

নীরাজ জাদাউনের সিদ্ধান্তকে ‘দুঃসাহসী কর্মকাণ্ড’ বলে বর্ণনা করেন ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় হিন্দি ভাষার পত্রিকা ডেইলি আমার উজালার প্রতিবেদক রিচি কুমার। এমন সাহসী কর্মকাণ্ড নাকি তিনি কখনো দেখেননি। রিচি বিবিসিকে বলেন, ‘দাঙ্গাকারীরা পুরোপুরি সশস্ত্র ছিল এবং তারা কারও কথা শুনতে চাইছিল না। আমি তাদের রক্তপিপাসু বলেই উল্লেখ করব। তারা পুলিশের দিকে পাথর ছুড়ে মারছিল। কিন্তু মি. জাদাউন পিছু হটেননি। দাঙ্গাকারীদের গুলি লাগার সমূহ বিপদ ছিল পুলিশ সদস্যদের জন্য।’

নীরাজ জাদাউন জানান, দাঙ্গাকারীরা অগ্নিসংযোগের প্রস্তুতি নিতে এসেছিল। তিনি বলেন, ওই এলাকায় বাঁশের অনেক দোকান রয়েছে। পুরো এলাকায় আগুন ভয়াবহভাবে ছড়িয়ে পড়তে পারত এবং সেটাই ঘটতে যাচ্ছিল। তাহলে দিল্লিতে মৃত্যুর সংখ্যা আরও বাড়ত।

তাকে বীর হিসেবে আখ্যায়িত করা নিয়ে বিব্রত বোধ করছেন নীরাজ। তিনি বলেন, ‘আমি বীর নই। বিপদ থেকে যেকোনো ভারতীয়কে রক্ষার শপথ নিয়েছি আমি। আমি শুধু আমার দায়িত্ব পালন করেছি। কারণ, আমি আমার দায়িত্ব পালনের জায়গায় কাউকে মরতে দিতে চাইনি।’

(ঢাকাটাইমস/২৯ফেব্রুয়ারি/মোআ)