স্ত্রীকে তালাক: মামলা তুলে নিতে পুলিশ কর্মকর্তার হুমকি!

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ২০:৩৩

কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের এক নারীকে নির্যাতনের পর দুই সন্তানসহ তাকে তালাক দিয়েছে সাইফুল ইসলাম নামে এক পুলিশ কর্মকর্তা। এ নিয়ে মামলা হলে মামলা তুলে নিতে বিভিন্ন ধরনের হুমকি দিচ্ছেন তিনি।

তালাকপ্রাপ্ত নিলুফা ইয়াসমিনের অভিযোগ, বিয়ের পর থেকেই তার ওপর চালানো হয় শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন। দুই সন্তানের ভবিষ্যতের কথা ভেবে সব নির্যাতন মুখ বুঝে সহ্য করেও সংসারে থাকতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু অত্যাচারের পর পুলিশের সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) অবশেষে তাকে তালাক দিয়ে সন্তানসহ বাড়ি থেকে বের করে দেন।

এ ঘটনায় বিচারের দাবিতে দুই সন্তানসহ আদালতের শরণাপন্ন হলে মামলা তুলে নিতে সাক্ষীসহ তাদের নানাভাবে হুমকি-ধামকি অব্যাহত রেখেছেন।

বর্তমানে নিলুফা ইয়াসমিন কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার বৈরাগীরচর গ্রামে বাবা আবু আব্দুল্লার বাড়িতে অবস্থান করছেন। নিলুফার স্বজনদের অভিযোগ, ২০১০ সালে পুলিশের এএসআই ও গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার রাজপাট গ্রামের মুন্নু মোল্লার ছেলে সাইফুল ইসলামের সঙ্গে নিলুফার বিয়ে হয়। একই কলেজে লেখাপড়ার সুবাদে পরিচয় হয় বিয়ের আরো দু’বছর আগে। বিয়ের পর থেকে নিজ বাড়ি কাশিয়ানীতে নিয়ে নানা অজুহাতে নিলুফাকে প্রতিনিয়ত মারধরসহ শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করতে থাকেন সাইফুল ইসলাম। তাদের সংসারে দুই সন্তান থাকায় নিলুফার বাবার পরিবারের পক্ষ থেকে সাইফুলের সঙ্গে কথা বলা হলেও সাইফুল কারো কথায় কান দেন না। বরং সাইফুল আরো ক্ষিপ্ত হয়ে নিলুফার ওপর অত্যাচারের মাত্রা বাড়িয়ে দিতেন।

নিলুফার স্বজনরা তাকে স্বামী সাইফুলের বাড়ি থেকে বাবার বাড়ি নিয়ে আসতে চাইলেও সন্তানের কথা ভেবে তিনি বারবার স্বামীর বাড়িতেই থাকতে চাইতেন। পরে ২০১৭ সালে সাইফুল কঙ্গোতে মিশনের ডাক পেলে সেখানে যাওয়ার জন্য নিলুফার বাবার কাছে টাকা দাবি করে। মেয়ের সুখের কথা চিন্তা করে নিলুফার বাবা আবু আব্দুল্লাহ মোল্লা সাইফুলকে মিশনে যাওয়ার আগে এক লাখ টাকা দেন। মিশনে যাওয়ার কিছুদিন পর থেকে পরকীয়া সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন সাইফুল। মিশনে থাকা অবস্থায় সাইফুল নিলুফার সঙ্গ সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। ২০১৮ সালের মে মাসে মিশন থেকে ফিরে এসে নিলুফার ওপর আবারও নির্যাতন চালাতে থাকে সাইফুল। এক পর্যায়ে ২০১৮ সালের নভেম্বর মাসে নিলুফাকে তালাক দেন।

বিভিন্ন জায়গায় ধর্ণা দিয়েও ন্যায় বিচার না পেয়ে অবশেষে ২০১৮ সালের আদালতে মামলা করেন নিলুফা। মামলা করার পর থেকেই নিলুফা ও তার স্বজনদের নানাভাবে হয়রানিসহ মামলা তুলে নিতে চাপ দিতে থাকেন সাইফুল। রাজি না হওয়ায় নিলুফা ও তার মামলার সাক্ষীদের বিরুদ্ধে সাইফুলের কথিত প্রেমিককে দিয়ে মিথ্যা মামলা করান সাইফুল।

নিলুফার ভাই আসিফ আহমেদ বলেন, মামলা তুলে নিতে সাইফুল প্রতিনিয়ত ভয় দেখাচ্ছেন। সাইফুল নিজের অপকর্ম ঢাকতে বিভিন্ন জায়গায় তাদের বিরুদ্ধে টাকা ও মালামাল চুরির লিখিত অভিযোগ দিয়ে হয়রানি করছেন।

নিলুফা বলেন, তার সন্তানদেরও কোনো খোঁজ-খবর নেন না সাইফুল। বর্তমানে দুই সন্তান নিয়ে অসহায় জীবন যাপন করছেন। তিনি বলেন, সাইফুল তার উপর অবর্ণনীয় অত্যাচার করেছেন। পুলিশের চাকরি করার কারণে সাইফুল সব সময় নিজেকে ক্ষমতাধর মনে করেন। সে কারণে মামলা তুলে নিতে বিভিন্নভাবে হুমকি-ধামকি দেয়া অব্যাহত রেখেছেন। সুষ্ঠু ও ন্যায় বিচার চান নিলুফা।

এসব অভিযোগের বিষয়ে সাইফুল ইসলাম বলেন, নিলুফা তার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করেছেন। তাকে কোনো ধরনের নির্যাতন করা হয়নি। নিলুফা সংসার করতে ইচ্ছুক না হওয়ায় যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ায় তাকে ডিভোর্স দেয়া হয়েছে। নিলুফার পরিবার বিষয়টি মীমাংসা করতে চাইলে তার আপত্তি নেই বলে জানান তিনি।

(ঢাকাটাইমস/২৯ফেব্রুয়ারি/কেএম/এলএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :