ব্যাংক গ্রাহক ও বিদেশ ফেরত যাত্রীরা ছিল তাদের টার্গেট

প্রকাশ | ০৪ মার্চ ২০২০, ১৭:১১

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

ডিবি পরিচয়ে মাইক্রোবাসে তুলে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ব্যাংকের গ্রাহকদের অপহরণ ও টাকা ছিনিয়ে নিত একটি চক্র। এরা বিদেশ ফেরত যাত্রীদের বেশি টার্গেট করত। এ চক্রের হোতাসহ ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব।

বুধবার দুপুরে র‌্যাব-১ এর উত্তরার কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান অধিনায়ক শাফিউল্লাহ বুলবুল।

তিনি জানান, মঙ্গলবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে রাজধানীর তুরাগের ধওর বেড়িবাঁধ এলাকা থেকে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ডাকাতির সময় তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- মোস্তফা কামাল ওরফে লিটন, শাহাব উদ্দিন, শফিকুল ইসলাম, নাছির উদ্দিন, আলমগীর শেখ এবং শফিকুল ইসলাম। এ সময় একটি বিদেশি পিস্তল, পাঁচ রাউন্ড গুলি, চারটি চাপাতি, চারটি ওয়াকিটকি সেট, দুইটি ডিবি জ্যাকেট, একটি হ্যান্ডকাফ, দুইটি ডিবি পুলিশের ভুয়া আইডি কার্ড, ১২ টি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়।

এ চক্রের ব্যাংক গ্রাহকদের অপহরণ ও ছিনতাই কৌশলের ব্যাপারে শাফিউল্লাহ বুলবুল বলেন, প্রথমত তাদের দলের এক থেকে দুইজন ছদ্মবেশে ব্যাংকের বাইরে, দুই থেকে তিনজন গ্রাহকের ছদ্মবেশে ব্যাংকের ভেতরে প্রবেশ করে। মূল দলটি মাইক্রোবাসসহ সুবিধাজনক স্থানে অপেক্ষা করতে থাকে। পরে ভেতরের একজন ব্যাংক থেকে বের হয়ে এসে বাহিরের জনকে টার্গেট বুঝিয়ে দেয়। সরাসরি তারা মোবাইলের মাধ্যমে মূলদল বাইরে অবস্থানরত দলকে জানিয়ে দেয়। এরপর সুবিধাজনক স্থানে গতিরোধ করে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ভিকটিমকে মাইক্রোবাসে তুলে নেয়।

র‌্যাব-১ এর অধিনায়ক বলেন, গাড়ির ভেতরে চোখমুখ বেঁধে নির্যাতন করে সমস্ত টাকা ছিনিয়ে নিয়ে ভিকটিমকে রাস্তায় ফেলে চলে যায়।

শাফিউল্লাহ বুলবুল বলেন, গ্রেপ্তারকৃত মোস্তফা কামাল ওরফে লিটন ও শাহাব উদ্দিন এই ডাকাত দলের মূল হোতা। এই দুইজন মিলে ডাকাত দলটিকে নিয়ন্ত্রণ করত। চক্রের সদস্যরা দীর্ঘদিন ধরে নানা অপরাধে যুক্ত। ডিবি পুলিশ পরিচয়ে তারা ডাকাতি, ছিনতাই, চুরিসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধ করে থাকে। চক্রটি নিজেদেরকে ডিবি পুলিশ হিসেবে উপস্থাপন করতে ডিবির জ্যাকেট, ওয়াকিটকি ইত্যাদি ব্যবহার করত।

র‌্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, এছাড়াও তারা রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় প্রাইভেটকারে ও মাইক্রোবাসে করে ডাকাতির উদ্দেশ্যে স্বর্ণের দোকান, বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন ধরনের দোকান নির্ধারণ করে। পরে তাদের চার থেকে পাঁচজন টার্গেটস্থান রেকি করে ডাকাতির পরিকল্পনা সাজায়। পরে তাদের অন্য সদস্যরা রাতের বেলায় নির্ধারিত স্থানে ডিবি পরিচয় দিয়ে ঘুরাঘুরি করে এলাকায় ভয়ভীতি দেখায়। নিরাপত্তাকর্মীকে ডিবি পরিচয় দিয়ে তাদের এখানে কাজ আছে বলে তাদেরকে অন্য জায়গায় সরিয়ে দিয়ে ডাকাতি করে।

শাফিউল্লাহ বুলবুল বলেন, তাছাড়াও এই চক্রটি রাজধানীর বিমানবন্দর এলাকায় পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চ (এসবি) পরিচয়ে বিদেশ ফেরত যাত্রীদের টার্গেট করে তাদেরকে অনুসরণ করে। পরে ডাকাত দলের মাইক্রোবাসটি পেছন থেকে অথবা কখনও সামনে থেকে এসে সুবিধাজনক স্থানে ভিকটিমের গতিরোধ করে তাকে পুলিশ পরিচয়ে মাইক্রোবাসে তুলে নেয়। গাড়ির ভেতরে ভিকটিমকে চোখমুখ বেঁধে নির্যাতন করে সমস্ত টাকা-পয়সা, স্বর্ণালংকার ছিনিয়ে নেয়।

র‌্যাবের এই অধিনায়ক বলেন, এই দলের সদস্যদের অপরাধকালীন সময়ে স্ব-স্ব নির্দিষ্ট দায়িত্ব আগে থেকেই নির্ধারণ করা থাকে। যেমন ডিবি অফিসারের ন্যায় ভূমিকায় কে থাকবে, কে সিজার লিস্ট তৈরি করবে, কে হ্যান্ডকাফ পরাবে, কে টার্গেট নির্ধারণ করবে, কে গাড়ি চালকের সঙ্গে যোগাযোগ করবে ইত্যাদি। যদি কোনো সময় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা মাইক্রোবাসে তাদের সন্দেহ করে তাহলে তারা বিভিন্ন এলাকায় ভ্রমণে যাচ্ছে বলে উত্তর দেয়। গ্রেপ্তারকৃত মোস্তফা কামাল ওরফে লিটন ও শাহাব উদ্দিন এই চক্রের প্রধান হিসেবে যাবতীয় বিষয়াদি তদারকি করে থাকেন।  

ঢাকাটাইমস/০৪ মার্চ/এএ/ইএস