মন্ত্রিত্ব ও পার্টির সেক্রেটারি পদ নেইনি: শামীম ওসমান

মন্ত্রিত্ব দেয়া হলেও তিনি তা নেননি বলে দাবি করেছেন নারায়ণগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতা ও নারায়ণগঞ্জ-৪ (ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য এ কে এম শামীম ওসমান। তিনি বলেন, ‘আমাকে মন্ত্রিত্ব দেয়া হয়েছিল আমি নেই নাই, পার্টির সেক্রেটারি করতে চেয়েছিল নেই নাই। পদ-পদবির জন্য রাজনীতি করতে আসি নাই।’

বৃহস্পতিবার বিকালে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার পঞ্চবটি শিল্প পার্ক থেকে বিসিক শিল্প নগরী পর্যন্ত নির্মাণাধীন সড়কের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন শেষে শামীম ওসমান এসব কথা বলেন।

ধান্ধা করার জন্য রাজনীতিতে আসিনি উল্লেখ করে শামীম বলেন, ‘রাজনীতি করতে আসছি রাজনীতি করার জন্য, ধান্ধা করার জন্য না। রাজনীতি করে বক্তব্য দেই, সত্য কথা বলি। সত্য কথা বলাতে এটা নিয়ে আবার অনেক লেখালেখি শুরু হইসে।’

‘বাট সত্য যদি গোপন করি তাহলে রাজনীতিবিদ হলাম কেন? সত্য বলতে না পারলে চুপ থাকবো। আমি মনে করি, সত্যটা বলা উচিত। যে জিনিসটা এক সময় আমরা করেছি তা যদি এখন আমার কাছে ভুল প্রমাণিত হয়, সেটা যদি আমি না বলি, তাহলে আগামী প্রজন্ম হয়তো এই পথটা বেছে নিবে।’

এর আগে গত ১ মার্চ দুপুরে নারায়ণগঞ্জ পুলিশ লাইন্সে জেলা পুলিশের আয়োজনে ‘পুলিশ মেমোরিয়াল ডে-২০২০’ এর আলোচনা সভায় শামীম ওসমান ৯০-এর দশকে সহিংস রাজনীতির চিত্র তুলে ধরতে গিয়ে বলেছিলেন, ‘২০০১ সালের আগে নারায়ণগঞ্জে পুলিশ ফোর্সের কাছে যত অস্ত্র ছিল তার চেয়ে বেশি অস্ত্র একা আমার নিজের কাছেই ছিল। আজকে আমার গাড়িতে অস্ত্র আছে কিনা তা আমি নিজেও জানি না।’

অতীত সহিংস রাজনৈতিক পরিবর্তন হয়েছে দাবি করে শামীম ওসমান বলেছিলেন, ‘আমার রাজনৈতিক দর্শন আগে ছিল একরকম। নিজের জন্য করতাম। জিন্দাবাদ শুনতে ভালো লাগতো। ২০০১ সালের পরে আমার এই চিন্তা পরিবর্তন হয়েছে।’ শামীম ওসমানের এমন বক্তব্যে স্থানীয় ও জাতীয় মিডিয়াতে ব্যাপক সমালোচলা হয়। এ প্রসঙ্গে শামীম ওসমান উপরোক্ত কথাগুলো বলেছেন।

এ ছাড়াও বক্তব্যে আবারও নারায়ণগঞ্জ শহরের হকারদের দাবির পক্ষে নিজের অবস্থানের কথা জানিয়ে এমপি শামীম ওসমান বলেন, ‘আমাদের নারায়ণগঞ্জের শহরটার অবস্থা খুব খারাপ। এই শহরটাকে খুব খারাপ বলার জন্য আমি দেখি কিছু পত্রিকা লেখে, কেউ কেউ বলে যে এটার জন্য নাকি মূলত হকাররা দায়ী। নারায়ণগঞ্জে মিছিল হচ্ছে, হকাররা মিছিল করছে বাচ্চা কাচ্চাদের নিয়ে। পুলিশ গিয়ে আবার সেখান থেকে উঠাচ্ছেন। আমি কাউকে দায়ী করছি না। আমি হকারদের পক্ষে না।’

তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, আমার কথা হচ্ছে হকারকে উঠিয়ে দেওয়া বেশি জরুরি নাকি মানুষের পেটে ভাত দেওয়াটা বেশি জরুরি? গরিব মানুষকে অপসারণ করা দরকার নাকি লিংক রোডের দুইপাশে ময়লা-আবর্জনার স্তুপ অপসারণ জরুরি? গরিব নিধন করবেন না মশক নিধন করবেন? কোনটা বেশি জরুরি?

তিনি নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াত আইভীকে ইঙ্গিত করে বলেন, পরিষ্কারভাবে বলতে চাই হকারদের উঠিয়ে দেওয়ার পরে কি ট্রাফিক যানজট বন্ধ হয়ে যাবে? যদি বন্ধ হয়ে যায় তাহলে উঠিয়ে দেন আমার আপত্তি নাই। তা না হলে হকারদের পুণর্বাসন করেন, একটা বিকল্প ব্যবস্থা করেন। আমার মতে সবচেয়ে বড় জরুরি হচ্ছে মানুষের মধ্যে বেঁচে থাকা।

প্রধানমন্ত্রীর উদ্ধৃতি টেনে হকার উচ্ছেদ প্রসঙ্গে শামীম ওসমান বলেন, ‘গত পার্লামেন্টের মিটিংয়ে জাতির পিতার কন্যা খুব পরিষ্কারভাবে বলেছেন, অনেকটা ক্ষিপ্ত হয়ে বলেছেন যে, আমার বাবার বড় বড় প্রতিকৃতি দরকার নাই। আমাদের দরকার মানুষের মাথা গোঁজার ঠাঁই। এমপিদের নির্দেশ দিয়েছেন সরকারিভাবে অথবা নিজের থাকলে নিজে অথবা সরকারি টাকা দিয়ে ঠাঁই করে দাও। আমরা যার আদর্শের সৈনিক আমরা তো গরিবের বিপক্ষে যেতে পারি না।

বিসিক শিল্প মালিক সমবায় সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ হাতেমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন- ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগ সভাপতি এম সাইফউল্লাহ বাদল, সাধারণ সম্পাদক এম শওকত আলী, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদ বিশ্বাস, বিকেএমইএ বিকেএম এর সহ-সভাপতি (অর্থ) মোর্শেদ সারোয়ার সোহেল, বাংলাদেশ নিটিং এসোসিয়েশনের সভাপতি সেলিম সারোয়ার, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর নাজমুল আলম সজল, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মীর সোহেল আলী, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এহসানুল হাসান নিপু, ফতুল্লা থানা ছাত্রলীগের সভাপতি আবু মোহাম্মদ শরীফুল হক, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মান্নান, ব্যবসায়ী অশোক সরকার, স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য আকতার হোসেন ও গামেন্ট মালিকসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।

ঢাকাটাইমস/০৫মার্চ/ডিএম