সালিশ থেকে ফিরে স্ত্রীকে হত্যা, স্বামীর শাস্তি দাবি
স্ত্রীর শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে যৌতুক চেয়ে নির্যাতন এবং থানায় সালিশ বৈঠক থেকে বাসায় ফিরেই স্ত্রীকে পিটিয়ে হত্যা করেছে স্বামী এমদাদ হোসেনসহ অন্যান্যরা। বিচার চাওয়ায় প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে হত্যাকারীরা। হুমকি থেকে মুক্তি পেতে ও জড়িতদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানে প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্টদের জরুরি হস্তক্ষেপের দাবি জানিয়েছে নিহতের পরিবারের সদস্যরা।
শুক্রবার ক্রাইম রিপোর্টার্স বহুমূখী সমবায় সমিতি কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি জানান নিহতের পরিবারের সদস্যরা। এ সময় উপস্থিত ছিলেন, মো. তারেক ইমতিয়াজ খান, সারোয়ার আহাম্মেদ কাউছার, মোছা. মর্জিনা বেগম, মো. নাসের, নিজামুদ্দিন, মোছা. হাবিবা খাতুন, তোফাজ্জল হোসেনসহ অন্যান্য আত্মীয়-স্বজন।
লিখিত বক্তব্যে নিহতের ফুপাতো ভাই মো. তারেক ইমতিয়াজ খান জানান, বিগত ২০১৪ সালের ২৪ অক্টোবর উম্মেল কুলসুম ও এমদাদ হোসেনের বিয়ে হয়। এর কয়েক মাস পর থেকে কুলসুমের শিক্ষাগত যোগদ্যতা নিয়ে কটাক্ষ করে সে নিজে এমএ পাশ বলে অহংকার দেখিয়ে কুলসুমকে প্রায়ই শারীরিক নির্যাতন চালাতো। পরবর্তীতে এমদাদ যৌতুকের টাকার জন্য ব্যাপক নির্যাতন শুরু করলে ২০১৭ সালের ২৯ জুন কুলসুমের মা রাজধানীর বাড্ডা থানায় একটি জিডি করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে সে নির্যাতনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। এরই মধ্যে তাদের সংসারে একটি পুত্র সন্তানের জন্ম হয়।
গত ২২ জানুয়ারি কুলসুম তার মা-বাবাকে জানায়, এমদাদের সাথে অন্য একটি মেয়ের সম্পর্ক রয়েছে, তাই সে কুলসুমকে সহ্য করতে পারতো না। সামান্য বিষয় নিয়েই এমদাদ কুলসুমকে পিটিয়ে গুরুতর জখম করলেও সে তার মা-বাবাকে জানাতে পারতো না। এক পর্যায়ে কুলসুম নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে গোপনে বিষয়টি তার মা-বাবাকে জানায়। এ নিয়ে দুই পরিবারের মধ্যে একাধিকবার সালিশ বসে ও থানায় জিডি করা হয়। পুলিশ এমদাদকে আটক করতে গেলে সে একাধিকবার কুলসুমের কাছে ক্ষমা চেয়ে নির্যাতন করবে না বলে জানায়। কুলসুম সন্তান ও সংসারের চিন্তা করে স্বামীকে আটকের হাত থেকে বাঁচায়।
গত ২২ জানুয়ারি এমদাদ কুলসুমকে পিটিয়ে গুরুতর জখম করলে কুলসুম বাড্ডা থানায় অভিযোগ দিলে পুলিশ এমদাদকে আটক করে। ২৩ জানুয়ারি থানায় দুই পরিবারের সদস্যদের নিয়ে সালিশ বৈঠকে এমদাদ মুচলেকা দিয়ে বের হয়। বাসায় ফিরেই সহযোগীদের নিয়ে উম্মে কুলসুমকে পিটিয়ে হত্যা করে এমদাদ। এই হত্যার ঘটনা ধামাচাপা দিতে মৃতদেহ সিলিং ফ্যানের সাথে ঝুলিয়ে আত্মহত্যা বলে চালানোর চেষ্টা করে। পরে এমদাদ ও তার সহযোগীরা পালিয়ে যায়।
তিনি আরো জানান, ২৫ জানুয়ারি বিকেলে সুমন নামের এক ব্যক্তির ফোন পেয়ে আত্মীয়-স্বজনরা পুলিশ নিয়ে বাসায় গিয়ে কুলসুমের মৃতদেহ উদ্ধার করে। মামলা দায়েরের পর এমদাদসহ অন্যান্য আসামীরা হাইকোর্ট থেকে জামিন নিয়ে নিহতের পারিবারের সদস্যদের মামলা তুলে নিতে প্রাণনাশের হুমকি দিতে থাকে। এ অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে জড়িতদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানে প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্টদের জরুরী হস্তক্ষেপের দাবি জানান তিনি।
(ঢাকাটাইমস/ ৬ মার্চ/ এইচএফ)