পীরগঞ্জের ইটভাটাগুলোতে চলছে শিশুশ্রম

অমিতাব বর্মণ, পীরগঞ্জ (রংপুর)
 | প্রকাশিত : ১২ মার্চ ২০২০, ১৭:২২

রংপুর জেলার পীরগঞ্জ উপজেলার ইটভাটাগুলোতে শিশু শ্রমিকের সংখ্যা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। ঝুঁকিপূর্ণ এ কাজে স্বল্প পারিশ্রমিকে শিশু-কিশোরদের সম্পৃক্ত করে একদিকে যেমন মজুরি বৈষম্যের সৃষ্টি করছে, অন্যদিকে শিশু শ্রম আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে চলছেন ভাটা মালিকরা।

রংপুর বিভাগের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় নতুন সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা তৈরি ও রাস্তা-ঘাটের উন্নয়ন হচ্ছে। পাশাপাশি ব্যক্তি মালিকানা উদ্যোগেও তৈরি হচ্ছে অসংখ্য স্থাপনা। এ কারণে ইটের চাহিদাও বেড়েছে দ্বিগুণ হারে। অধিক চাহিদা ও মুনাফার কারণে রংপুর বিভাগের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার মতো পীরগঞ্জেও প্রতিযোগিতার সঙ্গে গড়ে উঠেছে অর্ধশত নতুন ইটভাটা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০০৮ ও ২০০৯ সাল পর্যন্ত খোদ পীরগঞ্জ উপজেলায় ১৩টি ইটভাটা থাকলেও চলতি বছরের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫১টি। মজার ব্যাপার হলো, এদের অনেকের লাইসেন্স পর্যন্ত নেই। পরিবেশ অধিদপ্তর ও শ্রম মন্ত্রণালয়কে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে উপজেলার অধিকাংশ ভাটায় স্কুলপড়ুযা শিশুদের শ্রমিক হিসেবে কাজ করানো হচ্ছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার বড়দরগাহ্ ইউনিয়নের বিশমাইল এলাকায় মহাসড়ক সংলগ্ন যোয়াদ ব্রিকস্ ফিল্ডে আটজন স্কুল পড়ুয়া শিশু শ্রমিককে দিয়ে কাজ করানো হচ্ছে। তারা কাঁচা ইটের পাইয়ে থাকা ইটগুলো রোদে শুকানোর কাজ করছে। এর মধ্যে একজন পাঁচ থেকে ছয় বছরেরও একটি অবুঝ শিশু রয়েছে। প্রতিটি পাইয়ে প্রায় দুই হাজার থেকে ২২০০ কাঁচা ইট থাকে।

সাংবাদিক পরিচয় পাওয়ায় ভাটা মালিক জোয়াদ মণ্ডল পাঁচজন স্কুল পড়ুয়া শিশুকে কৌশলে তাড়িয়ে দেন, এর ফাঁকে তিনজন শিশু ক্যামেরাবন্দি হয়। ওই তিনজন শিশু জানায়, এ পরিমাণ ইট উল্টিয়ে দিয়ে শুকানোর জন্য তাদের দেয়া হয় ২০ টাকা। অথচ এ কাজ করানোর জন্য একজন প্রাপ্ত বয়স্ক শ্রমিক নিয়োগ করা হলে তাকে দিতে হতো কমপক্ষে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা।

তিন শিশুর একজন পার্বতীপুর গ্রামের দিনমজুর রমজান আলীর ছেলে। অন্য দুই শিশু শ্রমিকের একজন আলম মিয়া (৭) পার্বতীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণির ছাত্র, সে ওই এলাকার লাল মিয়ার ছেলে। অন্যজন বিশমাইলের এনামুল মিয়ার ছেলে রুবেল রানা (৯)। সেও একই স্কুলের ছাত্র আলম মিয়ার সহপাঠী।

একই রকম দৃশ্য দেখা যায়, উপজেলার একবারপুর মধ্যপাড়ার এমএস ব্রিকস্, চত্রা ইউনিয়নের অনিক ব্রিকস্ ফিল্ড্ এবং কাবিলপুর এসএল ব্রিকস্ ফিল্ডেও। এরকম অসংখ্য শিশু উপজেলার ৫১টি ইটভাটার অধিকাংশগুলোতেই নিয়মিত কাজ করছে। অনেক শিশুকে দেখা গেছে ইটভাটার মূল প্লাটফরমের উপরিভাগেও কাজ করতে। তাছাড়া অনেককে চুল্লিতে কয়লা বা কাঠ দেয়ার কাজ করতেও দেখা গেছে, যা খুবই ঝুঁকিপুর্ণ। অনেক সময় তাদের মাটির গাদা তৈরির জন্য মাটিভর্তি ট্রলি ঠেলে নিয়ে যাওয়ার কাজেও বাধ্য করা হয়।

এ ব্যাপারে জোয়াদ ব্রিকস্ ফিল্ডের স্বত্ত্বাধিকারী জোয়াদ মণ্ডল বলেন, শিশুরা কাজ করছে তাতে কী হয়েছে। তারা কি খুব কষ্টদায়ক কোনো কাজে নিয়োজিত? গরিব মানুষ এখানে কাজ করার বিনিময়ে যতটুকু আয় করছে, তাতে তাদের পরিবারের ব্যয় নির্বাহের ক্ষেত্রে সহযোগিতাই তো হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, আমরা ভাটা মালিকরা পরিবেশ অধিদপ্তর, কাষ্টমস্, প্রশাসন সব কিছু ম্যানেজ করে চলি।

ব্রিকস্ ফিল্ডের মালিক হবিবর রহমান জানান, শিশুরা ইটভাটায় কাজ করে যে টাকা পায় তাতে তাদের পরিবারের উপকারই হচ্ছে। এতে কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়। তাছাড়া শিশুরা তো এখানকার নিয়মিত শ্রমিক নয়। তাই এ ব্যাপারে কারো নাক গলানোর প্রয়োজন নেই।

পীরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা টিএমএ মোমিন জানান, এ সংক্রান্ত কোনো অভিযোগ আমাদের নিকট আসেনি। তবে বিষয়টি খতিয়ে দেখে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে। বিশেষ করে শিশু শ্রম বিষয়ে।

রংপুর আঞ্চলিক শ্রম অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ছাদেকুজ্জামান জানান, এটি আমাদের বিষয় নয়, এটি কলকারখানা পরিদর্শন দপ্তরের বিষয়। অপরদিকে রংপুর বিভাগীয় কল কারখানা পরিদর্শন দপ্তরের উপমহাপরিদর্শক সোমা রায় এর সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে, তার ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।

(ঢাকাটাইমস/১২মার্চ/কেএম/এলএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :