মানুষের মধ্যে প্রাণি থেকে মারাত্মক যেসব রোগ ছড়ায়

ফিচার প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ১৩ মার্চ ২০২০, ১১:৫৫

পশু-পাখি ও গবাদি পশুর সংস্পর্শে থাকা মানুষের মধ্যে মারণঘাতী ভাইরাসের সংক্রমণের সম্ভাবনা বেশি। পশুর লোম, মল থেকেই ভাইরাস সংক্রমণের প্রবণতা বেশি। প্রাণি থেকে সরাসরি মানুষের দেহে ভাইরাস ছড়ায়। পশুপাখি থেকে মানুষের মধ্যে যেসব রোগ ছড়ায় তাদেরকে জুনোটিক রোগ বলে। জুনোটিক রোগ হল একগুচ্ছ রোগ যা পশুর দেহ থেকে মানুষের দেহে স্থানান্তরিত হতে পারে। এই ধরনের রোগগুলোর মধ্যে এমন কিছু রোগ আছে যা পশুর দেহে তেমন কিছু গুরুতর প্রভাব না ফেললেও, মানুষের দেহে ভয়ানক রকম গুরুতর প্রভাব ফেলে। জুনোটিক রোগ জুনোসিস নামেও পরিচিত। এগুলো স্বল্পমেয়াদী সংক্রমণও হতে পারে, আবার প্রাণঘাতীও হতে পারে। সাধারণত সংক্রমিত পশু বা পশুর মল থেকে জুনোটিক রোগ ছড়ায়, কিন্তু কখনো কখনো দূষিত খাবার খাওয়ার কারণেও এসব রোগ হতে পারে। সবচেয়ে মারাত্মক জুনোটিক রোগ হলো র‍্যাবিস বা জলাতঙ্ক এবং কোভিড-১৯। প্রাণি থেকে মানুষের মাঝে অনেক রোগ ছড়াতে পারে। এসব রোগ বা ভাইরাস থেকে মানুষের অবশ‍্যই সতর্কতা থাকা করা উচিত:

করোনাভাইরাস

কোভিড-১৯ ভাইরাসটি প্যাথোজেন পরিবারের। করোনাভাইরাস নামেও পরিচিত। করোনাভাইরাস, যার কারণে এর আগে সার্স ও মার্স ভাইরাসের সংক্রমণ হয়েছিল। সার্সে আক্রান্তদের ৯% এবং মার্সে আক্রান্ত ব্যক্তিদের ৩৫% মারা গেছেন। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, যে ধরনের করোনাভাইরাস থেকে সার্স ও মার্স ভাইরাসের জন্ম হয়েছিল এবং এখন নতুন করে যে ভাইরাসের প্রকোপ দেখা দিয়েছে সেগুলোর কোনটির উৎপত্তি মানুষ থেকে হয়নি। বরং এসবের জন্ম হয়েছে প্রাণী থেকে। করোনাভাইরাসের রেসপিরেটরি উপসর্গ ছাড়াও জ্বর, কাশি, শ্বাস প্রশ্বাসের সমস্যাই প্রধান সমস্যা। এমনকি মৃত্যুও হতে পারে। সব সময় করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে দূরে থাকতে হবে। হাত সাবান দিয়ে ভালো করে ধুতে হবে। এ রোগটি মূলত ছোয়াচে।

জুনোটিক ইনফ্লুয়েঞ্জা

জুনোটিক ইনফ্লুয়েঞ্জা পূর্বে অনেক দেশেই মহামারির সৃষ্টি করেছে। ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের মধ্যে, ইনফ্লুয়েঞ্জা-এ হাঁস, মুরগি, শূকর, ঘোড়া, এবং বিড়ালের প্রাণীদের দেহে প্রাণঘাতী প্রকোপ ফেলে। এবং খুব দ্রুত তাদের থেকে মানুষের দেহে স্থানান্তরিত হয়ে সংক্রমণ ঘটায়। কাশি, জ্বর, গলা, পেশী ব্যথা এবং শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা এই সংক্রমণের সাধারণ উপসর্গ। যখনই জুনোটিক ইনফ্লুয়েঞ্জার প্রাদুর্ভাব ঘটে, তখন পশুদের সাথে সরাসরি যোগাযোগ এড়িয়ে চলুন। আপনি পশু মৃতদেহ নিয়ে কিছু কাজ করতে হবে, গ্লাভস ও মাস্ক অবশ‍্যই ব‍্যবহার করুন। এবং অবশ্যই আপনার হাত ধোয়া খুব ভালো করে সাবান দিয়ে পরিষ্কার করুন।

সালমোনেলোসিস

সালোমনেলোসিস আরেকটি সাধারণ সংক্রমণ টুনা,টার্কী জাতীয় পাখির মাংস অনুপযুক্তভাবে রান্না করা অর্থাৎ ঠিকঠাকভাবে সিদ্ধ না করা খাবার থেকে মানুষের দেহে অনুপ্রবেশ করে। প্রতি বছর এই সংক্রমণ প্রায় ১.২ মিলিয়ন অসুস্থতা সৃষ্টি করে, যার মধ্যে ২৩০০০ রোগীকেই হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়। ডায়রিয়া, জ্বর, এবং পেটে ব্যথা এ রোগগুলোর সবচেয়ে সাধারণ উপসর্গ এবং সম্পূর্ণরূপে এই রোগ থেকে সেরে উঠতে চার থেকে সাত দিন পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।

ওয়েস্ট নাইল ভাইরাস

ওয়েস্ট নাইল ভাইরাস হল একধরনের মশার কামড় থেকে সৃষ্ট মারাত্মক একটি রোগ। এই রোগটি মূলত পশ্চিম আমেরিকায় বেশি দেখা যায়। এই রোগের বাহক মশা। এই সংক্রমণ সাধারণত গ্রীষ্মের শুরুতে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে এবং শেষ পর্যন্ত চলতে থাকে। যদিও এই রোগের জন্য কোন টিকা নেই, আর বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এটি প্রাণঘাতীও নয়। জ্বর হল এর সবচেয়ে সাধারণ উপসর্গ হয়। কোনো রেপেলেন্ট, ফুল হাতা জামা পরা, মশারি, টাঙিয়ে ঘুমানো- এই সব ছোট্ট পদক্ষেপগুলো আপনাকে এই রোগ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।

প্লেগ

প্লেগ প্রাথমিকভাবে মাছি সাহায্যে ছড়িয়ে পড়ে। এবং ইঁদুরের দেহে বসবাসকারী ইয়ার্সিনিয়া পেস্টিস এই রোগের জন্য দায়ী জীবাণু। এটি আফ্রিকা, এশিয়া এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গ্রাম এবং শহরতলীতে দেখা যায়। বিজ্ঞানীরা এখন পর্যন্ত তিন ধরনের প্লেগ আবিষ্কার করেছেন-বুবোনিক, সেপটিসেমিক এবং নিউমোনিক। এই রোগটির সাধারণ উপসর্গ হল জ্বর, লিম্ফ নোডের বৃদ্ধি, রক্ত কফ্ সহ কাশি, এবং চরম দুর্বলতা। আপনার বাড়ি ইঁদুর মুক্ত রাখুন এবং আপনার পোষা প্রাণীগুলোকে মাছির হাত থেকে বাঁচিয়ে রাখুন তাহলেই এই রোগটিকে প্রতিরোধ করতে পারবেন।

সিভিয়ার ্যাকিউট রেসপিরেটরি সিন্ড্রোম

এটি একটি অত্যন্ত সংক্রামক এবং মারাত্মক রোগ যা প্রথমবার নভেম্বর ২00২ সালে চীনে ধরা করা পড়েছিলো। করোনা ভাইরাসের একটি স্ট্রেন, যা সাধারণ ঠান্ডা লাগার সৃষ্টিকারী, তা এই রোগের রোগের কারণ। শ্বাসযন্ত্রের অসুস্থতা হওয়ার কারণে, এটি হাঁচি বা কাশির মাধ্যমে খুব সহজেই ছড়িয়ে পড়ে। খুব জ্বর, শুষ্ক কাশি, এবং শ্বাসযন্ত্রের সমস্যাগুলো এর সাধারণ উপসর্গ।

জলাতঙ্ক

র‍্যাবিস বা জলাতঙ্ক হ’ল যে কোনো র‍্যাবিড পশুর (যেমন- কুকুর, বাদুড়, শিয়াল ইত্যাদি) কামড়ের ফলে বা সৃষ্ট বা ক্ষতিকারক কুকুর, ব্যাট, শিয়াল এবং সহস্রাব্দ প্রাণীগুলোর লালা সম্পর্কিত রক্তাক্ত মারাত্মক রোগ। সাধারণ লক্ষণগুলোর মধ্যে জ্বর, মাথা ব্যথা, বমি বমি ভাব, অত্যধিক স্যালভেশন, গিলতে অসুবিধা, বিভ্রান্তি, হাইপার্টিভিটি, হ্যালুসিনেশন এবং আংশিক পক্ষাঘাত দেখা যায়। পোষা প্রাণীদের টিকা দিয়ে এবং অজানা প্রাণীদের কামড়ের ক্ষেত্রে নিজেরা টিকাগুলো গ্রহণ করে এই রোগ প্রতিরোধ করা যেতে পারে।

ব্রুসেলোসিস

এটি কনটামিনেটেড দুধ, এবং অন্যান্য দুগ্ধজাত পণ্য ব্যবহার করে প্রাণী থেকে মানুষের মধ্যে এই ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ ছড়ায়। কৃষক ও দুগ্ধ শ্রমিকরা তাদের শরীরের মধ্যে ক্ষত নিয়ে কাজ করলে সংক্রমিত প্রাণীদের রক্ত, বীর্য বা প্ল্যাসেন্টা মাধ্যমে ব্রুসেলা ব্যাকটেরিয়া সরাসরি দেহে প্রবেশ করতে পারে। ব্রুসেলোসিসের সাধারণ লক্ষণগুলো হল জ্বর, শীত করা, দুর্বলতা এবং ক্ষুধা হ্রাস। পাস্তুরাইজড দুধ এবং রান্নার মাংস সঠিকভাবে সিদ্ধ করলে এই রোগ প্রতিরোধ করতে পারেন। পশুর কোনো কাজ করতে হলে ডেইরি এবং কসাইখানার শ্রমিকদের গ্লভস পরতে হবে।

লাইম ডিজিজ

সংক্রমিত কালো পাযুক্ত টিকসের কামড় দ্বারা মানুষের দেহে লাইম রোগ ছড়িয়ে পড়ে। জ্বর, ঠান্ডা লাগা, এবং শরীর দাগ হল এর সাধারণ উপসর্গ। কীটপতঙ্গ রোধক রেপিলেন্ট ব্যবহার করে এই সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে পারেন।

(ঢাকাটাইমস/১৩ মার্চ/আরজেড)

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফিচার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

ফিচার এর সর্বশেষ

সস্তার পেয়ারার গুণে বশে থাকে ডায়াবেটিস-উচ্চ রক্তচাপসহ নানা জটিল রোগ

যে পাঁচ সমস্যায় আক্রান্তরা গুড় খাওয়ার আগে একবার ভাবুন, নইলে...

সাজেদুর রহমান শাফায়েতের স্বপ্ন পৃথিবী ঘুরে দেখা

খাওয়ার পরপরই চা পান উপকার না ক্ষতি? কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা

জ্বরের মধ্যে যে পাঁচ খাবার খেলেই বিপদ! জানুন, সাবধান হোন

গরমে হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে ডায়াবেটিস রোগীদের! সুস্থ থাকবেন যেভাবে

মুখে দুর্গন্ধের কারণে হা করতেও অস্বস্তি লাগে? সমাধান কী জানুন

লিভার ভালো রাখে লাউ! ওজন এবং উচ্চ রক্তচাপও থাকে নিয়ন্ত্রণে

কিডনি ভালো রাখে আমের পাতা! উচ্চ রক্তচাপও থাকে নিয়ন্ত্রণে

ইফতার ও সাহরিতে বাহারি আয়োজন ধানমন্ডির দ্য ফরেস্ট লাউঞ্জে

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :