পিরোজপুরে যে বাড়িতে ১৪ দিন ছিলেন বঙ্গবন্ধু

প্রকাশ | ১৬ মার্চ ২০২০, ১০:২৭ | আপডেট: ১৬ মার্চ ২০২০, ১৩:০৮

সৈয়দ মাহফুজ রহমান, পিরোজপুর
সোহাগদল গ্রামের ‘বড়বাড়ি’ যেখানে বঙ্গবন্ধু ১৪ দিন অবস্থান করেন

১৯৫৬ সালে যুক্তফ্রন্ট সরকার ক্ষমতায় থাকাকালে একটি উপনির্বাচনে প্রচার-প্রচারণা চালাতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পিরোজপুরের স্বরূপকাঠি (নেছারাবাদ) উপজেলার সোহাগদল গ্রামের ‘বড়বাড়িতে’ টানা দুই সপ্তাহ (১৪ দিন) অবস্থান করেছিলেন। তৎকালীন প্রত্যক্ষদর্শী শতবর্ষী আবদুর রহমান তালুকদার (১০৪) বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

সম্প্রতি স্বরূপকাঠি (নেছারাবাদ) উপজেলার সোহাগদল গনমান মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের একটি অনুষ্ঠানে জাতীয় শোক দিবসে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে আবদুর রহমান তালুকদার এই তথ্য জানান। তিনি তৎকালীন উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জয়নুল আবেদীনের ছোটভাই।   

বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিচারণ করে আবদুর রহমান তালুকদার বলেন, ১৯৫৬ সালে যুক্তফ্রন্ট সরকার ক্ষমতায় আসার পর শের-ই-বাংলা একে ফজলুল হক গভর্নর হলে তার আসনটি (স্বরূপকাঠি-কাউখালী-বানারিপাড়া) শূন্য ঘোষিত হয়। ওই আসনের উপনির্বাচনে পিরোজপুর মহকুমা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ও আবদুর রহমানের বড় ভাই জয়নুল আবেদীন আওয়ামী লীগ থেকে প্রার্থী হন। এই তিনটি থানা (স্বরূপকাঠি-বানারিপাড়া-কাউখালী) নিয়ে গঠিত পিরোজপুর উত্তর প্রাদেশিক পরিষদের আসন ছিল। এই আসনে জয়নুল আবেদীনের প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন অবিভক্ত বাংলার সাবেক মন্ত্রী জাঁদরেল মুসলীম লীগ নেতা খান বাহাদুর হাশেম আলী খান।

এই শূন্য আসনে নির্বাচনী প্রচারণায় মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ও শেখ মুজিবুর রহমান একটি ছোট লঞ্চযোগে ঢাকা থেকে গোপালগঞ্জ হয়ে স্বরূপকাঠিতে এসে সোহাগদলের বড়বাড়িতে অবস্থান নেন। ওই নির্বাচনে দুই-তিন দিন প্রচারণা চালিয়ে মওলানা ভাসানী ঢাকায় ফিরে গেলেও বঙ্গবন্ধু থেকে যান। তিনি (বঙ্গবন্ধু) সোহাগদলের বড়বাড়ির আবদুর রব তালুকদারের (জয়নুল আবেদীনের চাচা) ঘরে একটানা ১৪ দিন থেকে স্বরূপকাঠি-বানারিপাড়া-কাউখালী থানায় অসংখ্য নির্বাচনী জনসভা ও কর্মিসভার পাশাপাশি জনসংযোগ, প্রচারণা ও বক্তৃতা দিয়ে জয়নুল আবেদীনকে ভোট দেয়ার আহ্বান জানান। যুক্তফ্রন্টের শরিক দলের অনেক নেতা বঙ্গবন্ধুর ওই নির্বাচনী সভায় অংশ নিয়েছিলেন।

সেই নির্বাচনী প্রচারণায় বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে অন্যান্যের মধ্যে, মঠবাড়িয়ার প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা মহিউদ্দিন আহমেদ, তৎকালীন বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের দুইবারের সভাপতি পিস্তল মহিউদ্দিন আহমেদ (ওই সময় একমাত্র তার কাছে লাইসেন্সকৃত অস্ত্র থাকায় তিনি পিস্তল মহিউদ্দিন নামে পরিচিতি লাভ করেন), ইত্তেফাক সম্পাদক ভান্ডারিয়ার তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়াসহ স্থানীয়দের মধ্যে শতবর্ষী আবদুর রহমান, মোসলেম আলী হাওলাদার, হক লাল মিয়া, হাবিবুর রহমান তালুকদার ও হাফিজুর রহমানসহ কয়েকশত স্থানীয় নেতাকর্মী।

আবদুর রহমান জানান, ওই নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর জনপ্রিয়তা, নির্বাচনী কৌশল এবং তার ব্যক্তিত্বের কারণেই হাশেম আলী খানের মতো জাঁদরেল নেতাকে পরাজিত করা সম্ভব হয়েছিল এবং তা সমগ্র পাকিস্তানে প্রমাণ করা সহজ হয়েছিল যে, যুক্তফ্রন্টের স্বপক্ষে জনসমর্থন অক্ষুণ্ন রয়েছে।

১৯৭১ সালের ৭ নভেম্বর পাকহানাদার বাহিনী স্থানীয় রাজাকারদের সহায়তায় বঙ্গবন্ধু যে বাড়িতে ১৪ দিন কাটিয়েছিলেন সেই স্মৃতি বিজড়িত সোহাগদল গ্রামের ‘বড়বাড়ি’ নামে পরিচিত আবদুর রব তালুকদারের সেই বসতঘরসহ অন্যান্য ঘরগুলো পুড়িয়ে নিশ্চিহ্ন করে দেয়।

স্বাধীনতার পর অন্যান্য ঘরগুলো নির্মাণ করা হলেও দীর্ঘকাল ধরে ঐতিহাসিক আবদুর রবের ঘরের ভিটা আজও শূন্য পড়ে আছে। এই অজানা তথ্য আবিষ্কৃত হলে প্রয়াত আবদুর রব তালুকদারের আমেরিকা প্রবাসী ছেলেরা বঙ্গবন্ধুর অমর স্মৃতিধন্য এই শূন্য ভিটায় একটি পাকা বাড়ি নির্মাণের কাজ শুরু করেন।

(ঢাকাটাইমস/১৬মার্চ/জেবি)