নাটোরের এককালের হর্তাকর্তা আহাদ আলী এখন একা

প্রকাশ | ২০ মার্চ ২০২০, ১০:৪২ | আপডেট: ২০ মার্চ ২০২০, ১৫:০৫

নিজস্ব প্রতিবেদক

বছর কয়েক আগেও ছিলেন নাটোরের রাজনীতির হর্তাকর্তা। নাটোরের রাস্তায় চলতেন নেতাকর্মীদের বহর নিয়ে। কিন্তু এখন তার পাশে কেউ নেই। তিনি চলেন একা। নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে তার অবস্থান শূন্যের কোটায়। একসময় যে অনুসারীরা ছিলেন তার পিছূ পিছু, এখন তারা পাল্টেছেন নেতা।

বর্তমানে তিনি রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। কদিন আগে এখানে এসে এক দুর্ঘটনায় পড়ে আহত হন তিনি।

নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতির একসময়কার অপ্রতিদ্বন্দ্বী আহাদ আলী সরকারের রাজনীতিতে এই দীন অবস্থা কেন? নিজের অবস্থান নিয়ে তার আত্মোপলব্ধি- মানুষের উপকার করতে হলে ক্ষমতা দরকার। সেই ক্ষমতা এখন তার নেই।

তৃণমূলের নেতাকর্মীরা বলেন, টানা দুটি জাতীয় নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন না পাওয়ায় নাটোরের রাজনীতিতে বেকাদায় আছেন তিনি। তার হারানো অবস্থান ফিরে পাওয়া নিয়ে সন্দিহান তার অনুসারীরা।

তৃণমূল থেকে উঠে আসা রাজনীতিক আহাদ আলী সরকার ২০০৮ সালের নির্বাচনে নাটোর-২ আসন থেকে প্রথমবারের মতো বিজয়ী হয়েছিলেন। দীর্ঘদিন বিএনপির দখলে থাকা আসনটি ছিনিয়ে আনায় তাকে পুরস্কৃতও করেন দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা। তার নেতৃত্বে গঠিত দ্বিতীয় মন্ত্রিসভায় ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেন আহাদ আলীকে।

কিন্তু ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী থাকাকালে নানা ঘটনায় স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে আহাদ আলী সরকারের দূরত্ব তৈরি হয়। দলীয় কর্মসূচিতে অনীহার পাশাপাশি তার স্বজনদের বিরুদ্ধে প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ ওঠে। তারই প্রভাব পড়ে ২০১৪ সালের দশম সংসদ নির্বাচনে। নাটোর-২ আসনে নৌকা প্রতীক পাননি আহাদ আলী সরকার। তার জায়গায় দলের মনোনয়ন পান শফিকুল ইসলাম শিমুল। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও মনোনয়নবঞ্চিত হন আহাদ আলী।

টানা দুটি জাতীয় নির্বাচনে মনোনয়ন না পাওয়া আহাদ আলী সরকার দলের রাজনীতিতেও কোণঠাসা হয়ে পড়েন। বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন পেতে নাটোরের রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু তার ভাগ্যে মনোনয়নের শিকে ছিঁড়েনি। এবারও মনোনয়ন না পাওয়ায় তার পক্ষে নেতাকর্মীদের অবস্থানও কমতে থাকে৷ তার অনুসারী হিসেবে পরিচিত নেতাকর্মীদের অনেকে ‘গুরু’ পাল্টে বর্তমান সংসদের পেছনে ভিড় করছেন।

আহাদ আলী সরকার রাজনীতিতে উঠে এসেছেন একেবারেই তৃণমূল থেকে। ১৯৭৬ ও ১৯৮১ সালে পরপর দুবার তেবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন তিনি। এরশাদ সরকারের আমলে ১৯৮৫ সালে নাটোর সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ১৯৯০ সালে তিনি দ্বিতীয় উপজেলা নির্বাচনেও জেতেন।

সম্প্রতি ঢাকায় এসে এক দুর্ঘটনায় আঘাত পেয়ে একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন এই রাজনীতিবিদ। তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘ভালো নাই ভাই, আমি এখন হাসপাতালে। দুর্ঘটনায় পড়ে গিয়েছিলাম। ডাক্তার অপারেশন করতে বলেছিল, তা করা হয়েছে। শারীরিকভাবে খুব কষ্টে আছি। আমার জন্য দোয়া করবেন।’

এই নেতা বলেন, ‘আমি সব সময়ই এলাকায় থাকি। ঢাকায় থাকার জায়গা নাই।  তবে মানুষের উপকার করতে হলে তো ক্ষমতা দরকার।  সেই ক্ষমতা তো আমার আর নাই। তাই মানুষকে মুখেই সান্ত্বনা দিয়ে থাকি।’

(ঢাকাটাইমস/২০মার্চ/মোআ)