করোনা প্রতিরোধে মাঠে ফরিদপুর জেলা প্রশাসন
জেলাবাসীকে করোনাভাইরোসের ছোবল থেকে রক্ষা করতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছে ফরিদপুর জেলা প্রশাসন। হোম কোয়ারেন্টাইনে না থাকা ব্যক্তিদের সন্ধান করে তাদের হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকতে বাধ্য করা করা হচ্ছে। ফলশ্রুতিতে ইতোমধ্যে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকা ব্যক্তিদের সংখ্যা বাড়ছে।
অন্যদিকে করোনাভাইরাসের আতঙ্কে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিকারী অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধেও কাজ শুরু করেছে জেলা প্রশাসন। ইতোমধ্যে হোম কোয়ারেন্টাইনে না থাকা, সামাজিক অনুষ্ঠানের নামে জনসমাবেশ করা এবং অসাধু ব্যবসায়ীদের দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। এছাড়া জনসাধারণকে সচেতন করতে পুরো জেলায় চলছে মাইকিং। এর বাইরে ধর্মীয় সংগঠনের মাধ্যমে করোনাভাইরাস সচেতনতায় কাজ করছেন বিভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দ। জেলার বিশেষ পেশাজীবীদের করোনাভাইরাস থেকে রক্ষার জন্য তাদের পেশাগত স্থান লকডাউন করা হয়েছে; একই সাথে তাদের আবাসন ও খাদ্যসহ গৃহস্থালি চাহিদাপূরণের ব্যবস্থাও করেছে প্রশাসন।
দেশে ফেরত প্রবাসীদের হোম কোয়ারেন্টাইনে অবস্থান নিশ্চিত করতে জেলার একেবারে ওয়ার্ড পর্যন্ত কমিটি করে কাজ শুরু করে ফরিদপুর জেলা প্রশাসন। কিন্তু প্রথম দিকে প্রবাসীরা হোম কোয়ারেন্টাইনে অবস্থান না করে অনেকেই বাইরে ঘুরাফেরা করছিল।
এদিকে করোনাভাইরাসের আতঙ্কে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী পণ্যের দাম বৃদ্ধি করে। প্রবাসীদের হোম কোয়ারেন্টাইনে অবস্থান না করা, সামাজিক অনুষ্ঠানের ছদ্মাবরণে জনসমাবেশ করা, পণ্যের দাম বৃদ্ধি করাসহ সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রশাসন কঠোর অবস্থানে গিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে কাজ শুরু করে।
জেলায় জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট অতুল সরকারের নেতৃত্বে পুলিশ সুপার আলিমুজ্জামান, সিভিল সার্জন সিদ্দিকুর রহমানসহ প্রশাসনের ঊর্র্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ কাজ শুরু করেন। একই সাথে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটবৃন্দের মাধ্যমে শুরু হয় ভ্রাম্যমাণ আদালত। এছাড়া উপজেলা পর্যায়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত শুরু হয়।
এছাড়া জেলা প্রশাসক অতুল সরকারের নির্দেশনায় গত বৃহস্পতিবার থেকে শনিবার দুপুর পর্যন্ত জেলা সদরে হোম কোয়ারেন্টাইনে অবস্থান না করা, সামাজিক অনুষ্ঠানের ছদ্মাবরণে জনসমাবেশ করা, পণ্যের দাম বৃদ্ধি করার কারণে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাসুম রেজা, সহকারী কমিশনার (ভূমি) শাহ মো. সজীব, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দ জাকির হাসানের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালতে ১১টি মামলা করা হয়।
বোয়ালমারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার ঝোটন চন্দ্রের নেতৃত্বে পরিচালিত ভ্রাম্যমাণ আদালতে ৫টি, নগরকান্দায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার জেতী প্রু ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) আহসান মাহমুদ রাসেলের নেতৃত্বে ১৫টি মামলা, ভাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার রকিবুর রহমান খান ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) মুহাম্মদ আল আমিনের নেতৃত্বে ১১টি মামলা, সদরপুরে উপজেলা নির্বাহী অফিসার পূরবী গোলদার ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) সজল চন্দ্র শীলের নেতৃত্বে ৯টি মামলা, চরভদ্রাসন উপজেলা নির্বাহী অফিসার জেসমিন সুলতানার নেতৃত্বে ১৪টি মামলা করা হয়েছে। এসব মামলায় মোট ৪ লক্ষ ৭০ হাজার ২০০ টাকা জরিমানা করা হয়। এছাড়া আলফাডাঙ্গা উপজেলা, মধুখালী উপজেলা ও সালথা উপজেলায় নির্বাহী অফিসার ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) করোনাভাইরাস সম্পর্কিত সচেতনতা সৃষ্টি এবং হোম কোয়ারেন্টাইন বিষয়ে অভিযান পরিচালনা করছেন।
এছাড়া করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে ফরিদপুর শহরের দুইটি যৌনপল্লীকে অনিদিষ্টকালের জন্য লকডাউন ঘোষণা করেছে জেলা প্রশাসন।
ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক অতুল সরকার জানান, জেলায় ব্যাপকসংখ্যক লোক প্রবাস থেকে এসেছে। প্রতিনিয়ত হোম কোয়ারেন্টাইনে অবস্থানকারীর সংখ্যা বাড়ছে। ইতোমধ্যে সদর হাসপাতালটিকে করোনা ট্রিটমেন্টের জন্য নির্ধারণ করেছি। পাশপাশি আইসিইউ রেডি হয়েছে। এছাড়া সালথা উপজেলায় নবনির্মিত হেলথ কমপ্লেক্স রয়েছে, সেটিকে ব্যবহার করার জন্য প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে। সার্বিকভাবে করোনা প্রতিরোধের বিষয়ে যা যা সম্ভব তার প্রায় সবগুলোই নেয়া হয়েছে।
(ঢাকাটাইমস/২১মার্চ/এলএ)