মোবাইল ফোন নেটওয়ার্কবিহীন দিনে অ্যামেচার রেডিও

প্রকাশ | ২২ মার্চ ২০২০, ১০:৪৬ | আপডেট: ২২ মার্চ ২০২০, ১১:৩৭

মুনীম হোসেন রানা

শ্বশুর বাড়ি মধুর হাড়ি। আমার অবশ্য শ্বশুর বাড়ি যাওয়ার আরও একটা এক্সট্রা অ্যাটার্কশন ছিল। ঢাকা থেকে কুমিল্লা ৬৫ মাইল দূরত্ব। পারি দিতাম কখনো আড়াই ঘন্টা কখনো ৫ ঘন্টায়।

পুরো সময়টাই গাড়িতে বসে অ্যামেচার রেডিওর ট্রান্সমিট, রিসিভ এবং নতুন নতুন এন্টেনার এক্সপেরিমেন্ট করতে পারতাম। গিন্নির মুখেও হাসি থাকতো বাপের বাড়ি যাওয়া আসা হচ্ছে সেই সুবাদে।

শ্বশুর বাড়ির নারকেল গাছ, ছাদ, বিভিন্ন দৈর্ঘ্যের বাশ ও নিত্যনতুন এন্টেনা এক্সপেরিমেন্টের পর্ব বাদ দিয়ে ছোট্ট একটি ঘটনার কথা বলছি।

সালটা ১৯৯৫। ঝড়ের পূর্বাভাস থাকা সত্ত্বেও ঢাকার দিকে রওনা দিতে হল। কেননা, পরের দিন ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের সঙ্গে মিটিং। গাড়ির এইচএফ সেট আপ খুলে শুধু ভিএইচএফ লাগালাম।

ঢাকাতে সোহেল (S21S), তুলি (S21T) এবং শ্রদ্ধেয় শরিফ ভাই (S21AS) ও মঞ্জু (S21AM) কনফার্ম করলো ব্যান্ডে থাকবে। সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করতে পারবো। তখন গ্রামীণফোন বা কোনরকম জিসিএম সেলফোন সার্ভিস ছিল না।

যাই হোক, কুমিল্লা শহর থেকে বের হওয়ার আধা ঘন্টার মধ্যেই সোহেলের ফোর ওয়ান সিগনাল পেলাম। ও বাসাবো থাকে আর তিন তালার উপর ৩০ ফুট বাশে অ্যান্টেনা। মাত্র ৫ ওয়াটের যে হ্যান্ডসেটগুলো দিয়ে সবাই শহরে তিন থেকে ৪ মাইল দূরত্ব কভার করতে পারে, সেটাকেই আমরা বিভিন্ন রকম অ্যান্টেনা ও হাইট বাড়িয়ে টিউনিং করে ৫০ মাইল র‌্যাডিয়াসে মোটামুটি ভালো সিগন্যাল আদান-প্রদান করতে পারি। এটাই হচ্ছে অ্যামেচার রেডিওর মজা।

ঘন্টাখানেক গাড়ি চালানোর পর ঘন কালো মেঘ করে প্রচন্ড বৃষ্টি শুরু হল। মাধাইয়া নামের জায়গাটি পার হওয়ার পর S21AS এর সঙ্গে কমিউনিকেট করতে পারলাম।

একটা বাঁকে ট্রাক খাদে উল্টে পড়ে আছে দেখলাম। ভিজিবিলিটি পুওর বিধায় ইমার্জেন্সি লাইট দিয়ে খুব আস্তে গাড়ি চালাচ্ছি। একপর্যায়ে প্রচন্ড বাতাসের ঝাপটায় গাড়ি দুলতে লাগলো। শরিফ ভাই রেডিওতে বারবার সাবধান করলেন এবং শেল্টার নিতে বললেন। কিন্তু সামনে পিছে কিছুই পাচ্ছি না শেল্টারের জন্য। দুরুদুরু বুকে একটা বিশাল গাছ আর সাইনবোর্ডের পাশে পার্ক করলাম। কতক্ষণ ছিলাম মনে নেই, সন্ধ্যা হয়ে গেছে, বৃষ্টিটা একটু ধরে আসছে, গাড়ি ঘুরিয়ে রওনা দিলাম। সাইনবোর্ডটা বেশ বড়, মনে হয় ২০ ফুট বাই ১০ ফুট হবে। ওখানে লেখা ছিল:

"ইহকালে দ্রুত পৌঁছানো অপেক্ষা
পরকালে দেরিতে যাওয়া উত্তম"

তখনকার দিনে ওই জায়গাটায় অনেক এক্সিডেন্ট হতো এবং ট্রাক ও বাস গুলো ওভার স্পিডে চালাত।

বহু বছর পর, আজকের এই করোনা মহামারির সময়ে সেই সাইনবোর্ডটার কথা মনে পড়ছে। আসুন আমরা সবাই ঘরে থাকি, ওয়ার্ল্ড হেলত অর্গানাইজেশনের দেয়া নিয়মগুলো মানতে চেষ্টা করি।

লেখক: মুনীম হোসেন রানা
বাংলাদেশে অ্যামেচার রেডিও ক্লাব (বিএআরএল)- এর সাবেক সাধারণ সম্পাদক
বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি (বিসিএস)- এর সাবেক সাধারণ সম্পাদক
বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী
বাংলাদেশি কল সাইন-S21R
যুক্তরাষ্ট্রের কল সাইন- KF5IVL

 

(ঢাকাটাইমস/২২মার্চ/এজেড)