করোনার প্রবেশদ্বার নাক মুখ চোখ

প্রকাশ | ২২ মার্চ ২০২০, ১১:১৭ | আপডেট: ২৩ মার্চ ২০২০, ১১:৩৪

স্বাস্থ্য ডেস্ক, ঢাকাটাইমস

করোনাভাইরাস বিশ্বব্যাপী মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। এতে করে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগে সাধারণ উপসর্গ হিসেবে জ্বর, সর্দি এবং শ্বাসকষ্ট দেখা যায়। কিছু ক্ষেত্রে মাংসপেশীর ব্যথা, বারবার থুতু সৃষ্টি এবং গলায় ব্যথা দেখা যেতে পারে।

এই রোগ সাধারণত সংক্রমিত ব্যক্তির হাঁচি-কাশির মাধ্যমে সৃষ্ট বায়ুকণা বা ড্রপলেট থেকে ছড়ায়। এছাড়া সংক্রমিত ব্যক্তির জীবাণু হাঁচি-কাশির কারণে বা জীবাণুযুক্ত হাত দিয়ে স্পর্শ করার কারণে পরিবেশের বিভিন্ন বস্তুর পৃষ্ঠতলে লেগে থাকলে এবং সেই ভাইরাসযুক্ত পৃষ্ঠতল অন্য কেউ হাত দিয়ে স্পর্শ করে নাকে-মুখে-চোখে হাত দিলে করোনাভাইরাস নাক-মুখ-চোখের শ্লেষ্মা ঝিল্লি দিয়ে দেহে প্রবেশ করে। আক্রান্ত হওয়ার ২-১৪ দিনের মধ্যে উপসর্গ দেখা দেয়। গড়ে ৫ দিনের মধ্যে উপসর্গ দেখা যায়।

হাঁচি-কাশির মাধ্যমে করোনাভাইরাস ছড়ানোর ফলে আক্রান্ত ব্যক্তির কাছে থাকা মানুষের এতে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। মানবদেহের নাক, মুখ ও চোখকে বলা হয় জীবাণুর প্রবেশদ্বার। করোনা ভাইরাসও আমাদের দেহে নাক, মুখ ও চোখের মাধ্যমে প্রবেশ করে। বিভিন্ন কণিকার মাধ্যমে নাসারন্ধ্রে প্রবেশের পর খুব দ্রুতই এ ভাইরাস মানুষের গলায় প্রবেশ করে। এরপর করোনাভাইরাসের বহিরাবরণে আমিষের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় এবং তার জেনেটিক গঠন পরিবর্তন করে মানব কোষে প্রবেশের উপযুক্ত হয়। করোনাভাইরাস প্রবেশের পর করোনা ভাইরাস মানব কোষের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় এবং নিজের বংশ বৃদ্ধি করে।

ভাইরাস বংশ বৃদ্ধি করে এবার তার পাশের কোষগুলোকে আক্রমণ করে। এ প্রক্রিয়া শুরু হলে গলা ব্যথা অনুভূত হয় এবং শুকনা কাশি শুরু হয়। এরপর করোনাভাইরাস শ্বাসনালীতে অবস্থান করে ধীরে ধীরে নিচের দিকে নামতে থাকে।

যখন এ ভাইরাস আক্রান্ত ব্যক্তির ফুসফুসে পৌঁছায় তখন শ্লেষ্মা ঝিল্লি যেন আরও উদ্দীপ্ত হয়। এ সময় ফুসফুসের ক্ষতি করতে পারে এ ভাইরাস। এ অস্থায় করোনাভাইরাস ফুসফুসের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত করে। ফলে আক্রান্ত ব্যক্তির শ্বাসকষ্ট শুরু হয়।

ফুসফুসে অক্সিজেন প্রবাহ কমে যাওয়ায় সেখানে পুঁজ ও মৃত কোষ বিস্তার করে। এছাড়া নিউমোনিয়ার লক্ষণ দেখা দেয়। এ অবস্থায় কারও কারও প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। পরিস্থিতি আরও খারাপ হলে ফুসফুস একপ্রকার তরলে পরিপূর্ণ হয়ে যায় এবং শ্বাস-প্রশ্বাস নেয়ার পরিস্থিতি থাকে না। এ পরিস্থিতিতে ওই রোগীর মৃত্যু হয়।

শুধুমাত্র ফুসফুসই নয় কারও কারও আন্ত্রিকতন্ত্রে আক্রমণ করতে পারে। এক্ষেত্রে ওই রোগীর ডায়রিয়া এবং বদহজম হতে পারে। এছাড়া মানবদেহের রক্ত সঞ্চালন অঞ্চলেও করোনাভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া গেছে।

রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্রসমূহ জানাচ্ছে, মানুষের রক্ত ও মলে করোনাভাইরাসের আরএনএ শনাক্ত হয়েছে। তবে এটা স্পষ্ট নয় এর মাধ্যমে করোনা বিস্তার করছে কি না।

ওয়াশিংটনের এভারেটের প্রভিডেন্স রিজিওনাল মেডিকেল সেন্টারের সংক্রামক রোগ বিভাগের প্রধান ডা. জর্জ ডিয়াজ জানান, অস্থি-মজ্জা এবং বিভিন্ন অঙ্গ যেমন যকৃতে করোনা সংক্রমণ দেখা গেছে। এছাড়া ক্ষুদ্র রক্তনালীতেও করোনার প্রদাহ লক্ষ্য করা গেছে। এর ধরন অনেকটা ২০০২ এর সার্স ভাইরাসের সাথে মিল রয়েছে।

করোনাভাইরাস মানবদেহের বিভিন্ন অঙ্গে অবস্থান করতে পারে। যেমন- কিডনি, যকৃত, হৃৎপিণ্ড। অনেক সময় করোনা এসব অঙ্গ অকেজো করে দেয়। এছাড়া এটি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দ্রুত কমিয়ে দিতে পারে। ফলে আক্রান্ত অঙ্গ দ্রুতই ক্ষতির দিকে ধাবিত হয়। এর ফলে অনেক রোগী শুধু করোনার আক্রমণের জন্য নয়, নিজের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ধ্বংসের কারণে ক্ষতির দিকে ধাবিত হয়।

এদিকে করোনা আক্রান্তদের ৮০ ভাগই অল্পতেই সেরে ওঠেন। তবে ২০ ভাগ আবার মারাত্মক আকার ধারণ করে। মূলত যারা আগে থেকেই ফুসফুসজনিত সমস্যাসহ বিভিন্ন সমস্যায় ভুগছিলেন, তাদের জন্য এটি মারাত্মক আকার ধারণ করে। এক্ষেত্রে বয়স্ক ব্যক্তিরা অধিক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন। তবে এখন পর্যন্ত যেহেতেু এ ভাইরাস প্রতিরোধী কোনো টিকা বা ওষুধ আবিষ্কার হয়নি, ফলে সচেতনতার মাধ্যমে জীবাণুমুক্ত থাকাটাই এখন সবচেয়ে বেশি জরুরি।

 (ঢাকাটাইমস/২২ মার্চ/আরজেড/এজেড)