এবার মাদারীপুরের সঙ্গে বরিশালের যাতায়াত বন্ধ

মাদারীপুর প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ২২ মার্চ ২০২০, ২১:৩৬

করোনাভাইরাস সংক্রমণ এড়াতে এবার মাদারীপুরের সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলের জেলা বরিশালের যোগাযোগে বাধার সৃষ্টি করা হয়েছে।

রবিবার দুপুর থেকে কালকিনি উপজেলার কয়েকটি অভ্যন্তরীণ রুটে সংযোগস্থলে বাঁশ-কাঠ দিয়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। এরই মধ্যে প্রবাসীদের আগমনে সংক্রমণের ঝুঁকিতে থাকা শিবচর উপজেলা লকডাউন করা হয়েছে। উপজেলার চারটি এলাকার প্রায় ৭০ হাজার মানুষ প্রশাসনের কড়া নজরদাড়িতে দিন অতিবাহিত করছেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, কালকিনি উপজেলার ভূরঘাটার সীমান্তবর্তী এলাকার সঙ্গে রবিশালের গৌনদীর সংযোগ স্থলের বাঁশ দিয়ে যাতায়াতের বাধা সৃষ্টি করা হয়েছে। একই চিত্র নতুন টরকি থেকে রমজানপুর রাস্তা, ঘোষেরহাট রাস্তা থেকে কাজীবাকাই রাস্তায়। কালকিনি ও ডাসার থানা পুলিশের সহযোগিতায় এসব কাজে সহযোগাগিতা করছেন স্থানীয় সাধারণ মানুষ। এতে কিছুটা যাতায়াতের বিঘ্ন হলেও করোনার প্রভাব থেকে বাঁচতে সকলেই সাধুবাজ জানিয়েছেন।

ডাসার থানার ওসি মো ওহাব মিয়া জানান, ‘গৌরনদী থানার পুলিশ কাজীবাকাই বাজারে এসে আমাদের সহযোগিতায় সবাইকে জড়ো হতে না করে গিয়েছে। ওসব এলাকার লোকজনকে তাদের এলাকায় প্রবেশে বাধা দিচ্ছে। আমরাও চেষ্টা করছি সাধারণ মানুষকে জড়ো না হতে। তাদের নিজের এলাকায় হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার পর্রামশ দিচ্ছি। এই যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করা আইনগতভাবে করা হয়নি, মানুষকে সচেতন করতে করা হয়েছে।’

অন্যদিকে শিবচর পৌর বাজারসহ ঝুঁকিপূর্ণ ২টি ওয়ার্ড ও ২টি ইউনিয়নের ২ গ্রামের চারটি স্থানে ২৫০ জন পুলিশ মোতায়েন রয়েছেন। সার্বক্ষণিক মনিটারিং করছেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রট। সরকারি নির্দেশনা মেনে চলার জন্য জনগণকে আহ্বান জানিয়েছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী। দফায় দফায় পরিদর্শনে আসছেন জেলা প্রশাসক, সিভিল সার্জনসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা।

সম্প্রতি শিবচর উপজেলায় ৬৮৪ প্রবাসী ইতালিসহ বিভিন্ন দেশ থেকে জেলায় সাড়ে ৩ হাজার প্রবাসী প্রবেশ করেন। এরপরই কয়েকজনের করোনা শনাক্ত হয়। এরপরই শিবচর লকডাউন ঘোষণা করে প্রশাসন। এ উপজেলার চারটি এলাকার প্রায় ৭০ হাজার মানুষ আতঙ্কের মধ্য দিয়ে জীবনযাপন করছেন। খুব বেশি প্রয়োজন ছাড়া কাউকে ঘর থেকে বের হতে দেখা যাচ্ছে না। এলাকার রাস্তাগুলোতে প্রশাসন ও পুলিশের রয়েছে কড়া নজরদারি। চতুর্থ দিনের মতো বন্ধ রয়েছে নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর দোকান ছাড়াও বেশিরভাগ বাজার। শুধু ওই চার এলাকায়ই নয়, করোনা আতঙ্কে আশপাশের মানুষ ঘর থেকে বের হচ্ছেন না। চিহ্নিত এলাকা ছাড়াও আশপাশের এলাকায় প্রশাসন, আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ও জনপ্রতিনিধিরা টহল দিচ্ছেন। বাজারগুলোও স্বতস্ফুর্তভাবে জনশূন্য হয়ে পড়েছে। চার দিন ধরে উপজেলার সকল বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। জন সচেতনতা বাড়ায় জনশূন্য হয়ে পড়েছে বাজার ঘাট।

শিবচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা. আসাদুজ্জামান বলেন, শিবচরের ৪ টি এলাকা সংলগ্ন মোট প্রায় ৭৮ হাজার মানুষকে আমরা নজরদাড়িতে রেখেছি। এ এলাকাগুলোর মানুষদের চলাচল সীমিত করা হয়েছে। হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকা কারো বাজার লাগলে আমরা তাদের সহায়তা করবো। শুকনো খাবার দেয়া হবে।

মাদারীপুরে করোনা ভাইরাসে মোট ২৯৮ জন কোয়ারেন্টাইনে আছেন। যার মধ্যে হোম কোয়ারেন্টাইনে ২৯৫ জন এবং হাসপাতালের আছেন ৩ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে হোম কোয়ারেন্টাইনে আছেন ৫৫ জন। সদর হাসপাতালের আইসলেশনে আছেন ৩ জন। এ পর্যন্ত হোম কোয়ারেন্টাইন থেকে রিলিজ পেয়েছেন ২৬১ জন। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন জেলা সিভিল সার্জন অফিস।

এদিকে প্রবাসীদের আনাগোনা হওয়ায় মাদারীপুর জেলা শহরে ফাস্টফুড ও চাইনিজ রেস্টুরেন্ট বন্ধ করেছে দিয়েছে মালিকপক্ষ। জেলার সকল বিনোদন কেন্দ্রগুলো এখন মানুষ শূন্য হয়ে পড়েছে। খুব বেশি প্রয়োজন ছাড়া শহরের কাউকে ঘর থেকে বের হতে দেখা যায়নি। রাস্তায় বিভিন্ন ধরনের ছোট-বড় যানবাহনের সংখ্যাও অনেক কম। মানুষ চরম আতঙ্কের মধ্য দিয়ে দিন অতিবাহিত করছে।

এ ব্যাপারে মাদারীপুর জেলা প্রশাসক মো. ওয়াহিদুল ইসলাম জানান, ‘মাদারীপুর জেলাকে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করায় যে কোন দিক থেকে এসব এলাকায় লোকজন না আসার অনুরোধ করা হচ্ছে। তেমনি এই জেলা থেকেও খুব প্রয়োজন না হলে অন্য জেলায় না যাওয়ার অনুরোধ করা হচ্ছে। এখন আমরা সবাই কোনো না কোনো ভাবে বিপদে আছি, সবাই সচেতন হলে করোনাভাইরাস থেকে রক্ষা পাবো।’

স্থানীয় সংসদ সদস্য চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী বলেন, ভাইরাসটি থেকে মুক্ত থাকতে জনগণকে সতর্ক হয়ে সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী চলার জন্য অনুরোধ করছি।

ঢাকাটাইমস/২২মার্চ/ইএস

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :